রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১০ পূর্বাহ্ন

জামায়াত চায় পিআর বিএনপির ‘না’

  • সময়: সোমবার, ২৫ আগস্ট, ২০২৫, ৯.৩৭ এএম
  • ১৭৩ জন

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হলেও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। জাতীয় সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষসহ উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবিতে স্বোচ্চার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। এ দাবি আদায়ে দল দুটি আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। পিআর ছাড়া নির্বাচন হতে দেবে না বলেও তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।

এদিকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির সিদ্ধান্ত নিলেও তাতে আপত্তি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। দলটি পিআর পদ্ধতির ঘোর বিরোধী। এ কারণে তারা উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে। অবশ্য নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, সংবিধানে না থাকায় আনুপাতিক পদ্ধতি বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের সুযোগ নেই।

রাষ্ট্রীয় সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর মধ্যে সংবিধান ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের সুপারিশ করে। দুটি কমিশনই নিম্নকক্ষে বিদ্যমান সরাসরি নির্বাচনের সুপারিশ করলেও উচ্চকক্ষে তারা পিআর পদ্ধতি অনুসরণের সুপারিশ করে। পরবর্তীকালে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন সুপারিশমালা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের সিদ্ধান্ত দিয়েছে। সিদ্ধান্তের আগে বিষয়টি নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দলগুলোর বিস্তারিত আলোচনা হয়। আলোচনার সময় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলনসহ কয়েকটি দল প্রস্তাবিত উচ্চকক্ষের পাশাপাশি নিম্নকক্ষেও পিআর পদ্ধতির দাবি তোলেন।

অন্যদিকে বিএনপিসহ তাদের সমমনা ৬টি দল পিআর পদ্ধতির পুরোপুরি বিরোধিতা করে। অন্যান্য প্রায় সব দলই উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির পক্ষে মত দেয়। পরে বিএনপি ও এনডিএমের নোট অব ডিসেন্টের মধ্যে ঐকমত্য কমিশন উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির সিদ্ধান্ত দেয়।

ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে দাবি তোলার পাশাপাশি জনমত গঠনে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী আন্দোলন দুটি কক্ষে পিআরের জন্য রাজপথের কর্মসূচি পালন করে আসছে। জামায়াতে ইসলামী গত ১৯ জুলাই ঢাকায় যে মহাসমাবেশ করে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করেছিল, তার একটি দফায় পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের কথা উল্লেখ করেছে। দলটি বলেছে, জনগণের প্রকৃত মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে পিআর পদ্ধতিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা হোক। জামায়াতের ওই সমাবেশে সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দিতে গিয়ে অন্য কয়েকটি দলের নেতারাও পিআর পদ্ধতির কথা বলেন।

সে সময় এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, নির্বাচনে উচ্চকক্ষে যারা পিআর চায় না, তারা ফ্যাসিবাদী হতে চায়। ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনুস আহমাদ বলেন, নির্বাচন পিআর পদ্ধতিতেই হতে হবে।

এদিকে ঐকমত্য কমিশন কেবল উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতির সিদ্ধান্ত জানালেও দল দুটি তাদের দাবি এখনো অব্যাহত রেখেছে।

তবে গতকাল শনিবার এক অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, তারা দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদের প্রস্তাব করেছেন। এর মধ্যে নিম্নকক্ষ হবে বর্তমান আসনভিত্তিক আর উচ্চকক্ষ হবে পিআরে। সংবিধান সংস্কার কমিশনও একইরকম প্রস্তাব করেছে। এই দুটো পদ্ধতিরই ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে উল্লেখ করে সুজন সম্পাদক বলেন, দুটিরই ভালো দিক আছে, খারাপ দিকও আছে। কোনোটিই ‘অ্যাবসলিউটলি পারফেক্ট’ তথা একেবারে নিখুঁত নয়।

সম্প্রতি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি নিয়ে তার একটি বক্তব্য খণ্ডিতভাবে ভাইরাল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বদিউল আলম। তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি আমার একটি বক্তব্য ভাইরাল হয়েছে। যে বক্তব্যটি ভাইরাল হয়েছে, সেটির কোনো সূত্র নেই যে, তা কবে-কোথায় আমি বক্তব্য দিয়েছি। এটা খণ্ডিতভাবে উত্থাপন করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, বদিউল আলম পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ভয়ঙ্কর বলে মন্তব্য করেছেন বলে সম্প্রতি একটি বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। পিআর পদ্ধতি একটি নিয়ন্ত্রণহীন ব্যবস্থা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হবে। সকালে একজন প্রধানমন্ত্রী, বিকালবেলা আরেকজন প্রধানমন্ত্রী।

এদিকে শনিবার রাজশাহীতে এক অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেন, আনুপাতিক পদ্ধতি বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সংবিধানে নেই। সংবিধানের বাইরে আমরা যেতে পারি না। যদি আইন পরিবর্তন হয়, তাহলে এই পদ্ধতিতে নির্বাচন হবে। পিআর পদ্ধতি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে তর্কবিতর্ক চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, তারা এর মধ্যে ঢুকতে চান না।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ আমার দেশকে বলেন, নিম্নকক্ষে পিআর হবে, না ননপিআর হবেÑসে প্রশ্ন অবান্তর। নিম্নকক্ষের নির্বাচন পদ্ধতি ঐকমত্য কমিশনের এজেন্ডায় ছিল না। সেখানে প্রচলিত পদ্ধতিতে সরাসরি (ফার্স্ট-পাস্ট-দ্য-পোস্ট) ভোটে নির্বাচন হবে। নিম্নকক্ষ নিয়ে যে আলাচনা হচ্ছে, সেটা মাঠের বক্তব্য। মাঠের বক্তব্য নিয়ে মন্তব্য করার কিছু নেই।

উচ্চকক্ষের ভোট পদ্ধতির বিষয়ে বিএনপি আগের অবস্থানের বিষয়টি পুনর্ব্যক্ত করে এই নেতা বলেন, ঐকমত্য কমিশন উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ওই সিদ্ধান্তে আমাদের নোট অব ডিসেন্ট রয়েছে। নির্বাচনে যারা ম্যান্ডেট পাবে, এ ক্ষেত্রে তাদের মতো করে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা ম্যান্ডেট পেলে আমাদের মতো করে করব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান আমার দেশকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থা পিআর পদ্ধতি চালু করেছে। ওইসব দেশের আঞ্চলিক দলগুলোর কেন্দ্রে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের মতো দেশে এটা উপযোগী নয়।

পিআর পদ্ধতি সব দলের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করবে বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা সঠিক নয় মন্তব্য করে এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, পিআর পদ্ধতি হলে হাতেগোনা দু-তিনটি ছাড়া বেশিরভাগ দলেরই কোনো প্রতিনিধিত্ব থাকবে না। কারণ, দেখা যাচ্ছে প্রচলিত ব্যবস্থায় কোনো কোনো দল ৩০০ আসনের মধ্যে এক-দুটিতে বিজয়ী হয়ে সংসদে তাদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারছে। কিন্তু এসব দলের মোট ভোট হয়তো শূন্য দশমিক সামথিং। পিআর পদ্ধতি হলে এই ভোটে তারা হয়তো একজনের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে পারবে।

পিআর পদ্ধতি নতুন করে স্বৈরাচারী পরিস্থিতি তৈরি করবে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, বর্তমান ব্যবস্থায় জনপ্রিয়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়। কিন্তু পিআর পদ্ধতি হলে দলের প্রধান তার ইচ্ছা ও পছন্দ অনুযায়ী ব্যক্তিকে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দেবেন। জনপ্রিয়তা বিবেচনায় নেওয়া হবে না। এতে করে চরম স্বৈরচারী অবস্থা তৈরির আশঙ্কা থাকবে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com