ঢাকা জেলার অন্তর্গত শিল্পঘন সাভার উপজেলাকে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ ঘোষণা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
গতকাল রোববার পরিবেশ অধিদপ্তরের জারি করা এক পরিপত্র থেকে এ তথ্য জানা যায়।
পরিপত্রে বলা হয়, পরিবেশ অধিদপ্তরের সার্বক্ষণিক বায়ুমান পরিবীক্ষণ কেন্দ্রগুলোর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে সাভারের বায়ুর বার্ষিক মানমাত্রা জাতীয় বার্ষিক নির্ধারিত মানমাত্রার প্রায় তিন গুণ অতিক্রম করেছে। জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় ঢাকা জেলার অন্তর্ভুক্ত সাভার উপজেলা মারাত্মক বায়ুদূষণযুক্ত এলাকায় পরিণত হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৫ মাস উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিমে বায়ু প্রবাহিত হয়। ফলে সাভার উপজেলায় সৃষ্ট বায়ুদূষণ ঢাকা শহরে প্রবেশ করে। এটি ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের তীব্রতা অনেক বাড়িয়ে দেয়। ফলে ঢাকার ঘনবসতিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের ওপর অত্যন্ত ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এই প্রেক্ষাপটে বায়ুদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০২২-এর ক্ষমতাবলে সমগ্র সাভার উপজেলাকে ডিগ্রেডেড এয়ারশেড ঘোষণা করা হলো।
পরিপত্র অনুযায়ী, ডিগ্রেডেড এয়ারশেড ঘোষিত এলাকাটিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বায়ুদূষণ সৃষ্টিকারী নিম্নোক্ত কার্যাবলি পরিচালনা বা সম্পাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে—
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, সাভার উপজেলায় ১০৭টি ইটভাটা আছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি ইটভাটায় পরিবেশবান্ধব উপায়ে ইট তৈরি করা হয়।
এতগুলো ইটভাটা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব—এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মোহাম্মদ জিয়াউল হক আজ সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইটভাটা মালিক সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি। কাজগুলো করার ক্ষেত্রে যে পরিকল্পনা নিয়েছে, সেটা আমরা বাস্তবায়ন করব আশা করি।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাভারকে এভাবে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ ঘোষণা দেওয়া একটি সতর্কবার্তা। এলাকাটিতে ঘনবসতি থাকায় মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বায়ুদূষণ নিয়ে কাজ করছেন। সাভারকে ‘ডিগ্রেডেড এয়ারশেড’ ঘোষণাকে তিনি স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘এটা একটা পাইলট প্রকল্প। এখানে যদি সুফল পাওয়া যায়, পরবর্তীকালে এটা অন্য এলাকায় বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু এখানে সফলতা আনতে হলে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও নজরদারি দরকার। তা যদি না থাকে, তবে এভাবে ঘোষণা করেও কোনো লাভ হবে না।’
সাভার উপজেলাকে ডিগ্রেডেড এয়ারশেড ঘোষণা করার বিষয়ে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের উদ্যোগ প্রথম। তিনি এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান। এর ফলে সাভার উপজেলায় টানেল ও হফম্যান কিলন বাদ দিয়ে সব ধরনের ইটভাটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এ অঞ্চলে কঠিন বর্জ্য পোড়ানো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। দূষণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে ছাড়পত্র না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যে ধরনের বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে এই নতুন পরিপত্র জারি করা হলো, এই বাস্তবতা পুরো দেশেই রয়েছে। তবু তাঁরা অন্তত এটুকু আশা করেন, নতুন পরিপত্র অন্তত পরিপালন হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ধাপে ধাপে আরও শিল্পাঞ্চলকে একই তালিকায় আনা হতে পারে।