শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:১৫ অপরাহ্ন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে গুপ্ত ও প্রকাশ্য রাজনীতি নিষিদ্ধ, শিক্ষার্থীদের উল্লাস

  • সময়: শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫, ১০.২৮ এএম
  • ১৪৪ জন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ‘নো হল পলিটিক্স’ দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভে অংশ নেন। রাত ১টার পর তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জড়ো হয়ে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন।

রাত ২টার দিকে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান বিক্ষোভস্থলে এসে জানান, গত বছরের ১৭ জুলাই হলে হলে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করার যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, তা বহাল থাকবে। এই নীতিমালার অধীনে স্ব স্ব হল প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও জানান তিনি।

উপাচার্য বলেন, ছাত্রদলের ঘোষিত কমিটি নিয়ে সংগঠনটির নেতাদের সঙ্গেও তিনি আলোচনা করবেন। তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তার এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে ‘হল পলিটিক্সের সম্পূর্ণ অবসান’ দাবি জানান।

এর কিছু সময় পরে প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ জানান, হলে সব ধরনের প্রকাশ্য ও গুপ্ত রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো। পরে ছাত্ররা তার দাবি মেনে নিয়ে আনন্দ উল্লাস করতে থাকেন।

এর আগে রাত সাড়ে বারোটায় রোকেয়া হলের শিক্ষার্থীরা হলের প্রধান ফটকের তালা ভেঙে বিক্ষোভে বেরিয়ে আসে। একই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য হলেও বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন— “ওয়ান টু থ্রি ফোর, হল পলিটিক্স নো মোর”, “শিক্ষা ও রাজনীতি একসাথে চলে না”, “পড়ালেখা ও গেস্টরুম একসাথে চলে না” ইত্যাদি।

রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী তাসলিমা সুলতানা বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরু থেকেই লেজুভিত্তিক দলকানা শিক্ষক ও ছাত্র রাজনীতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয় তৈরি করেছে এবং একাডেমিক পরিবেশ ধ্বংস করেছে। এ ধরনের রাজনীতি চিরতরে বন্ধ করতে হবে।”

অন্য এক শিক্ষার্থী মামুন ইসলাম খান বলেন, “হলভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি সরাসরি নিষিদ্ধ করা উচিত। যার রাজনীতি করার ইচ্ছা, সে মধুর ক্যান্টিনে গিয়ে করুক, কিন্তু আবাসিক হলের ভেতরে নয়। রাজনৈতিক সহিংসতায় অনেক শিক্ষার্থী মারা গেছে, কেউ অঙ্গহানি হয়েছে, অনেকে মানসিক চাপে আত্মহত্যা করেছে। আমরা আর এমন পরিবেশ চাই না।”

জুলাই অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া রোকেয়া হলের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা মুন্নি বলেন, “হলে নোংরা রাজনীতি গণরুম, গেস্টরুম ও কৃত্রিম সিট সংকট তৈরি করে। শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস করে হলগুলোকে টর্চার সেলে পরিণত করে। এত জীবন উৎসর্গের পরও কেনো এই রাজনীতি ফিরবে? আর কত জীবন দিতে হবে হলে রাজনীতির থাবা বন্ধ করার জন্য?”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে প্রতিটি হলে প্রশাসনিক তৎপরতা বাড়ানো হবে এবং নীতি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত থাকবে।

সাব্বির উদ্দিন রিয়ন নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ছাত্রদল, ছাত্র শিবির, ছাত্রী সংস্থা, গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদ, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, বাম সংগঠন, ডান সংগঠন, গুপ্ত-সুপ্ত, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্যসহ সকল সংগঠনের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে এবং হলে কোনো সংগঠনের কোনো প্রকার কমিটি, ছোট টিম, বড় টিম, মাঝারি টিম থাকতে পারবে না। ছাত্র শিবিরের পূর্ণাঙ্গ হল কমিটি, গুপ্ত ও ছোট টিমগুলোর তালিকা প্রকাশ করতে হবে। পাশাপাশি, ২০২৪ সালের ১৭ জুলাইয়ে সকল আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত (হল প্রভোস্ট ও আবাসিক শিক্ষকদের স্বাক্ষরিত) নীতিমালা অনুযায়ী হল পরিচালনা করতে হবে।

“হল পলিটিক্স নিষিদ্ধ থাকবে” উপাচার্যের এমন আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা রাত তিনটার দিকে হলে ফিরতে শুরু করে। প্রতিবেদনটি লেখার সময় রাত ৩টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে বিক্ষোভ চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা।

ময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি তুলে ধরেন সেগুলো হলো-

– বিদ্যমান হল কমিটি বাতিল করার আগ সকল কমিটি মেম্বারের সিট বাতিল করতে হবে। এবং অফিসিয়ালি ছাত্রদলের হাই কমান্ডকে ক্ষমা চাইতে হবে।

– হলের রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠনগুলোর সকল গুপ্ত এবং প্রকাশিত কমিটি সামনে এনে বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে।

– হল প্রশাসন এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্বলতা স্বীকার করে প্রশাসনকে ক্ষমা চাইতে হবে।

– ডাকসু বানচাল করার সকল ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে সজাগ থাকতে হবে।

– যথাসময়ে ডাকসু নির্বাচন কার্যকর করতে হবে।

– অভ্যুত্থানে ১৭ জুলাই এ উত্থাপিত হলগুলোতে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের নীতিমালা বাস্তবায়ন করতে হবে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com