শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৫ অপরাহ্ন

আড়াইশ প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সহায়তা

  • সময়: শনিবার, ৯ আগস্ট, ২০২৫, ১১.০২ এএম
  • ১২৩ জন

বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণ পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠনের জন্য গত জানুয়ারিতে উদ্যোগ নেয়। নির্ধারিত সময় পর্যন্ত প্রায় এক হাজার ২৫০টি আবেদন জমা পড়ে। যাচাই-বাছাই শেষে এখন পর্যন্ত ২৫০টি আবেদন চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করা হয়েছে। নীতি সহায়তা পাওয়ার মধ্যে গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক ব্যবসায়ীর পাশাপাশি তাদের সুবিধাভোগীরাও ছিল। পুনঃতফসিল বা পুনর্গঠনের আওতায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১০ থেকে ১৫ বছরে ঋণ পরিশোধে নীতি সহায়তা দেওয়া হয়। আবার কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে এক থেকে দুই বছরের গ্রেস পিরিয়ড দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নীতি সহায়তা পেয়েছে এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের তালিকা এসেছে আমার দেশের হাতে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—গাজী গ্রুপ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ, বেঙ্গল গ্রুপ, এমবিয়েন্ট স্টিল (বিডি), জিপিএইচ ইস্পাত, প্রাইম গ্রুপ, আনোয়ার গ্রুপ, সিল্কওয়েজ গ্রুপ, তানাকা গ্রুপ, ডায়মন্ড স্পিনিং মিলস, মীম গ্রুপ (আলেমা টেক্সটাইল), দেশবন্ধু গ্রুপ, এসএমএ গ্রুপ (এএ নিট স্পিন), বিইউসি অ্যাগ্রো, রাইজিং স্টিল, সৌরভ অ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্কস, ইন্টেনসিটি লিমিটেড, গ্লোবাল অ্যাসেট, ব্লিং লেদার প্রোডাক্টস, এপেক্স উইভিং, সাদাব ফ্যাশন, অংকুর স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজের নাম রয়েছে।

গত সরকারের আমলেও আবদুল মোনেম গ্রুপ দফায় দফায় ঋণ পুনর্গঠনের সুবিধা পেয়েছিল। এ সরকারের আমলেও এ গ্রুপকে নীতি সহায়তা দেওয়ায় অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আরেক সুবিধাভোগী দেশবন্ধু গ্রুপ। এ গ্রুপ গত সরকারের আমলে কয়েকটি ব্যাংক থেকে প্রায় পাঁচ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়। এসব ঋণ পরিশোধ করেনি। পরবর্তী সময়ে ঋণগুলো খেলাপির তালিকায় উঠে আসে। এ গ্রুপকে সম্প্রতি ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে সুবিধা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাছাড়া আওয়ামী সরকারের সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীরের প্রতিষ্ঠান গাজী গ্রুপকে নীতি সহায়তা দেওয়া হয়। ওই সরকারের সাবেক সংসদ সদস্য মোরশেদ আলম খানের প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল গ্রুপকেও সুবিধা দেওয়া হয়।

খাতসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, গত সরকারের আমলে যারা ব্যাংকঋণ নিয়ে পরিশোধ করেনি, তাদের এ সরকার সুবিধা দিয়েছে—বিষয়টি দৃষ্টিকটু। আগে যারা রাজনৈতিকভাবে প্রকৃত অর্থে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাদের সুবিধা দেওয়া ঠিক আছে। এভাবে ঢালাওভাবে সুবিধা দেওয়া ঠিক হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আমার দেশকে বলেন, নীতি সহায়তা কমিটি সবকিছু যাচাই-বাছাই করে সুবিধা দিচ্ছে। যারা প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত, তারাই পাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির স্বার্থেই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

গত ৩০ জানুয়ারি ইচ্ছাকৃত খেলাপি নয়—এমন বড় ঋণ পুনর্গঠনে (পুনঃতফসিল) পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এক্ষেত্রে কোন ধরনের নীতি সহায়তা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে বিশেষ কোনো কাঠামো ওই সময় করা হয়নি। এরই মধ্যে কমিটি পুনর্গঠন হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কোনো সার্কুলার ইস্যু না করে গত জানুয়ারিতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানায়, কোভিড-১৯, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক নিম্ন প্রবৃদ্ধি, বন্যাসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও সর্বোপরি রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে সৃষ্ট অভিঘাত মোকাবিলা করে অর্থনীতি চলমান রাখা এবং ব্যাংক খাতকে সুসংহত করার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এ লক্ষ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করেছে। এ কমিটি ৫০ কোটি ও তদূর্ধ্ব অঙ্কের খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে সুপারিশ করবে। তবে নির্দিষ্ট কাঠামো না থাকায় এবং শুধু ৫০ কোটি টাকার বেশি ঋণের কথা বলায় পরবর্তী সময়ে এ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। এ রকম অবস্থায় কাঠামোর আওতায় আনা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কোনো গ্রাহক ২০ থেকে ৩০টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছেন। এখন ওই গ্রাহক পুনর্গঠনের জন্য আবেদন করেছেন। কমিটির সভায় ওই আবেদন পর্যালোচনার জন্য উঠলে সংশ্লিষ্ট সব ব্যাংকের প্রতিনিধি ও গ্রাহকের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে সব পক্ষের ঐকমত্য না হলে আবেদনটি নিষ্পত্তি করাও যাচ্ছে না। আবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক কোম্পানি আইন ও বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা বিধিবিধানের দিকগুলোও দেখতে হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এসব আবেদন নিষ্পত্তি করা অনেক সময়সাপেক্ষ। যে কারণে নতুন কমিটি নীতি সহায়তার বিষয়টি ব্যাংকের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছে। কেবল যেসব কেস নিষ্পত্তি করার সক্ষমতা ব্যাংকের নেই, কেবল তা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাতে পারবে। সবকিছুই করা হবে নির্ধারিত সার্কুলারে উল্লিখিত নীতিমালা মেনে।’

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com