শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৫ অপরাহ্ন

কৌশল কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ২০

  • সময়: শনিবার, ২ আগস্ট, ২০২৫, ৯.৫০ এএম
  • ১৪৫ জন

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর আরোপিত প্রস্তাবিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশে নির্ধারণ করেছে ওয়াশিংটন।

এই কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রচেষ্টায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এই বাণিজ্য আলোচনা ও শুল্ক প্রত্যাহার প্রক্রিয়ায় তার কৌশলগত তত্ত্বাবধান ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এবং বাণিজ্য সচিব মো. মাহবুবুর রহমান।

তারা একাধিক দফায় যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন এবং বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কহার কমানোর যৌক্তিকতা ও সম্ভাব্য প্রভাব তুলে ধরেন।

এ প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সরকার কৌশলগত উদ্যোগ নেয়। গত ২৩ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো একটি বিস্তারিত অবস্থানপত্রে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তি তুলে ধরা হয় যে, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার, যা তুলনামূলকভাবে খুবই কম। একইসঙ্গে ভিয়েতনামের মতো দেশের সঙ্গে ঘাটতি যেখানে ১২৩ বিলিয়ন ডলার, সেখানে তাদের ওপর শুল্ক হার ২০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের দাবি ছিল—এত কম ঘাটতির পরও ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক।

তিনজনের সম্মিলিত কূটনৈতিক উদ্যোগের ফলে ৩৫ শতাংশ প্রস্তাবিত শুল্ক কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণে রাজি হয় যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি দপ্তর (ইউএসটিআর) প্রথমে গত ২ এপ্রিল ৬০টি দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয়। ৯ এপ্রিল তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হলেও, ৮ জুলাই জানানো হয়—বাংলাদেশি পণ্যে ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কার্যকর করা হবে ১ আগস্ট থেকে। এটি কার্যকর হলে আগের গড় শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ৩৫ শতাংশে পৌঁছাতো—যা দেশের রপ্তানি খাতের জন্য বড় ধাক্কা হতে পারত।

সবশেষে মার্কিন প্রশাসন জানায়, বাংলাদেশি পণ্যে ২০ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে, যা পূর্বের প্রস্তাবিত ৩৫ শতাংশের চেয়ে ১৫ শতাংশ কম।

এই সিদ্ধান্তের পর এক তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন জানান, ‘বাংলাদেশ প্রতিযোগিতামূলক অবস্থায় থাকবে, রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই।’

প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে এই মন্তব্যের কথা জানান।

হোয়াইট হাউসের এক ঘোষণায় জানানো হয়েছে, নতুন শুল্কহার অনুযায়ী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের মধ্যে পাকিস্তানের ওপর ১৯ শতাংশ, ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মালয়েশিয়ার ওপর ১৯ শতাংশ, মিয়ানমারের ওপর ৪০ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার ওপর ২০ শতাংশ এবং ভিয়েতনামের ওপরও ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিকেএমইএ)–এর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আমার দেশকে বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য সত্যিই স্বস্তিদায়ক খবর। আমরা যেটুকু প্রত্যাশা করেছিলাম, প্রাপ্তি তার চেয়েও বেশি। এ সিদ্ধান্ত রপ্তানি প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এই ইতিবাচক পদক্ষেপ শুধু তৈরি পোশাক খাতেই নয়, অন্যান্য রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রেও প্রবৃদ্ধির সুযোগ তৈরি করবে। ফলে রপ্তানিকারকরা নতুন বাজার ধরার বিষয়ে আরও উৎসাহিত হবেন।’

বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)–এর সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, ‘এটি আমাদের জন্য সত্যিই আনন্দের ও অত্যন্ত ইতিবাচক সংবাদ। আমরা মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের প্রতি যে ইতিবাচক মনোভাব রয়েছে, সেটি আমরা কৌশলগতভাবে কাজে লাগাতে পেরেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘রপ্তানি খাতে এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। তবে এই সফলতা টেকসই করতে হলে অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলো—বিশেষ করে জ্বালানি সংকট—সমাধান করতে হবে। সরকারের উচিত এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে শিল্পখাতের দীর্ঘমেয়াদি ভিত্তি মজবুত করা।’

বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে এই সাফল্য একটি বড় কূটনৈতিক অর্জন। তবে তারা সতর্ক করে দিয়ে বলছেন, অভ্যন্তরীণ কাঠামোগত দুর্বলতা সমাধান ছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য অর্জন সম্ভব নয়।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com