রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন

হুন্ডির সংকীর্ণ পথই প্রশস্ত করছে প্রবাসী আয়

  • সময়: রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫, ১০.১৬ এএম
  • ১৩৫ জন

আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশে হুন্ডির প্রভাব কমে গেছে। হুন্ডির প্রভাব কমে যাওয়ায় বৈধপথে রেমিট্যান্স বাড়ছে। সেই সঙ্গে ব্যাংকিং চ্যানেলে পাঠানো ডলারের দাম আর খোলাবাজারের দামে বড় পার্থক্য না থাকায় রেমিট্যান্স আয় নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করছে।

সদ্য সমাপ্ত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড রেমিট্যান্স এসেছে, যা এ যাবতকালে সর্বোচ্চ। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম মাসেও রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাইয়ের প্রথম ১৬ দিনে প্রবাসী আয় ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর হুন্ডি কমে এসেছে। আবার ব্যাংকিং চ্যানেলেই এখন ডলারের দাম বেশি মিলছে। যে কারণে এখন কেউ ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে দেশে টাকা পাঠাতে চাইছেন না। তাই পাচার ও হুন্ডি কমে যাওয়ায় ব্যাংকিং চ্যানেলে বাড়ছে রেমিট্যান্স। রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় ডলারের যে সংকট চলছিল, তা কেটে গেছে। তাই সম্প্রতি ডলারের দর কমতে শুরু করেছিল। তবে ডলারের দাম ধরে রাখতে নিলামের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ডলার কিনেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলেছে, চলতি অর্থবছরের ১-১৬ জুলাই ১৪২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। গত বছরের একই সময়ে ১৩১ কোটি ৯০ লাখ মার্কিন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল। তার মানে, চলতি মাসের প্রথম ১৬ দিনে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে ৭ দশমিক ৭০ শতাংশ।

বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে ৩০ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। তার মানে, বৈধপথে বা ব্যাংক মাধ্যমে ৩ হাজার ৪ কোটি ডলার দেশে পাঠিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা প্রবাসীরা। দেশের ইতিহাসে আগে কোনো অর্থবছরে এই পরিমাণ প্রবাসী আয় আসেনি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৩ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার। ফলে বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, গত সরকারের আমলে হুন্ডির ব্যবসার কারণে দেশে রেমিট্যান্স যেটা আসার কথা ছিল সেটা আসেনি। তাদের ঘনিষ্ঠরা বিদেশে ডলার কিনে রেখে দেশে টাকা পরিশোধ করত। এখন সেই চিত্র নেই। তাই প্রবাসী আয় বাড়ছে। প্রবাসী আয় ও রপ্তানি আয় বৃদ্ধির কারণে রিজার্ভও বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক আরিফ হোসেন খান বলেন, প্রবাসীরা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলে বেশি অর্থ পাঠানোর কারণে রেমিট্যান্স অন্য সময়ের তুলনায় অনেক বাড়ছে। ব্যাংকিং চ্যানেলে এক বছরে রেকর্ড ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। অর্থপাচারের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কঠোর অবস্থানের কারণে এখন হুন্ডি প্রবণতা কমেছে। পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও বাড়ছে। আবার বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে কম সুদের কাঙ্ক্ষিত ঋণ পেয়েছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে রিজার্ভ বেড়ে বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল রয়েছে। গত কয়েক দিনে ডলারের দাম কমেছে। তবে প্রবাসী ও রপ্তানিকারকরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যবস্থাও নিয়েছে।

গত রোববার বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ১৭ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার কেনে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মঙ্গলবার ও বুধবার নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি কিনেছে ৪৮ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ হলো, আশপাশের দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশে প্রতি ডলারের দাম আপাতত ১২০ থেকে ১২৫ টাকার মধ্যে থাকবে। গত বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলো ১২১ টাকা ২০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ৩০ পয়সা দরে ডলার কেনাবেচা করেছে। তার আগের দিন বুধবার ডলার কেনাবেচা হয়েছে ১২০ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ১২১ টাকা ২০ পয়সায়। গত জুনের শুরুতে ব্যাংকগুলো ১২২ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ১২৩ টাকার মধ্যে ডলার কেনাবেচা করেছে। অর্থাৎ ডলারের দামে খুব বেশি উত্থান-পতন ঘটেনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশের মোট রিজার্ভ রয়েছে ৩০ দশমিক ০২ বিলিয়ন ডলার। আইএমএফের বিপিএম৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার।

গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় রিজার্ভ ছিল সাড়ে ২৫ বিলিয়ন ডলার। তখন আইএমএফের হিসাব অনুযায়ী ২০ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ ছিল।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com