জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চালু করতে যাচ্ছে ফ্রি জোন বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা। এ সুবিধা চালু হলে রপ্তানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসার পাশাপাশি ব্যবসায় খরচ কমবে বলে এনবিআর কর্মকর্তারা জানান।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ গত ২ জুন আগামী অর্থবছরের (২০২৫-২৬) সালের প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় ফ্রি জোন বন্ডেড ওয়্যারহাউস ব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর সদস্য (কাস্টমস : এক্সপোর্ট, বন্ড অ্যান্ড আইটি) মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ফ্রি জোন বন্ডেড ওয়্যারহাউস বিষয়টি আইনে ছিল না। ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধন আনা হয়েছে। আইনি ভিত্তি তৈরি হওয়ায় আমরা এখন এ ধরনের ওয়্যারহাউস সুবিধা চালুর ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর) প্রণয়নের জন্য কাজ করছি। আশা করছি চলতি জুনের মধ্যেই এটি সম্পন্ন হবে। এর পর আমরা ব্যবসায়ীদের এজন্য লাইসেন্স প্রদান করব। তবে লাইসেন্স পাওয়ার জন্য বেশকিছু শর্ত থাকবে।
তিনি আরো বলেন, ফ্রি জোন বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা চালু হলে লাইসেন্সপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করার সুযোগ পাবে। ছোট ছোট আমদানিকারক তখন এসব ওয়্যারহাউস থেকে পণ্য ক্রয় করতে পারবেন। এতে তাদের ব্যবসায় খরচ কমার পাশাপাশি লিড টাইমও কমে যাবে এবং ব্যবসায় গতি আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে ফ্রি জোন ওয়্যারহাউস সুবিধায় এমন পণ্য আমদানির অনুমতি দেওয়া হবে, যেসব পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদন হয় না কিন্তু ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এরমধ্যে তুলা এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত এপ্রিল মাসে নতুন শুল্কনীতি ঘোষণা করেন। এই নীতির কারণে বাংলাদেশ থেকে আমেরিকায় পণ্য রপ্তানিতে ৩৭ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। পরবর্তীতে তিন মাসের জন্য শুল্কনীতি স্থগিত ঘোষণা করেন ট্রাম্প। তবে ইতোমধ্যে দেশটির একটি আদালত ট্রাম্প-ঘোষিত শুল্কনীতিকে অবৈধ বলে ঘোষণা দিয়েছে। তারপরও আমেরিকার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনার জন্য বেশকিছু উদ্যোগ নিতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। আমেরিকা থেকে আরো বেশি পরিমাণ তুলা আমদানি করে ঘাটতি কমিয়ে আনতে ফ্রি জোন ওয়্যারহাউস সুবিধা বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে বলে এনবিআর-সংশ্লিষ্টরা জানান।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হলেও সুতা তৈরিতে ব্যবহৃত তুলার জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি ও বেসরকারি বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা রয়েছে। স্থল, নৌ ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায় রয়েছে সরকারি বন্ডেড ওয়্যারহাউস। অপরদিকে বিজেএমইএ, বিকেএমইএ ও সমুদ্রবন্দর কর্তৃপক্ষের আওতায় রয়েছে বেসরকারি বন্ডেড ওয়্যারহাউস। নতুন করে শুরু হওয়া ফ্রি জোন বন্ডেড ওয়্যারহাউসের জন্য যেসব কর্তৃপক্ষের আওতায় সরকারি বন্ডেড ওয়্যারহাউস রয়েছে, তাদের কাছ থেকে জমি লিজ নিতে হবে। তারপর বিভিন্ন শর্ত পূরণসাপেক্ষে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ওই সব ফ্রি ওয়্যারহাউসে পণ্য আমদানি করে মজুত করবে। সেখান থেকে ক্ষুদ্র আমদানিকারকরাও তাদের পণ্য ক্রয় করতে পারবেন।
এনবিআরের এক কর্মকর্তা এ প্রসঙ্গে উদাহরণ দিয়ে বলেন, ধরুন একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তার পাঁচ হাজার বেল সুতা প্রয়োজন। কিন্তু ওই তুলা যদি তাকে আমদানি করতে হয়, তাহলে তার খরচ অনেক বেশি হবে। কিন্তু তিনি যদি ফ্রি জোন বন্ডেড ওয়্যারহাউস থেকে সেটি ক্রয় করেন, তাহলে তার খরচ অনেক কম হবে এবং লিড টাইমও কম হবে। অপরদিকে যিনি বন্ডেড সুবিধায় বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করবেন, তারও খরচ তুলনামূলক কমবে। এতে দেশের ব্যবসায় গতি আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।