আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। এককভাবে নির্বাচনের প্রাথমিক লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যে প্রায় সব আসনেই মনোনয়ন দিয়েছে প্রার্থী। দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আসনভিত্তিক নানা কর্মসূচি নিয়ে তৎপর দেখা যাচ্ছে তাদের।
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী নির্বাচন এপ্রিলের প্রথমার্ধে আয়োজনের ঘোষণা দেওয়ার পর নির্বাচনি তৎপরতা আরো জোরদার করেছেন দলটির নেতারা। বিভিন্ন গণসংযোগমূলক কর্মসূচিকে রূপ দেওয়া হচ্ছে ‘দাঁড়ি পাল্লার’ নির্বাচনী শোডাউনে। এর সঙ্গে নিয়মিত হচ্ছে সভা-সমাবেশসহ ঘরোয়া কর্মসূচি।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কোনো নির্দেশনা না থাকলেও ঈদুল আজহার আগেই নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় ছুটে যান জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা নানা কর্মসূচিতে ভোটারদের কাছাকাছি যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অনেকেই ঈদের নামাজ আদায় করেন নিজ এলাকার ঈদগাহে। এরপর এলাকাবাসীর সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় ও কোরবানির গোশত বিতরণসহ নানা উপহার-অনুদান নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ান তারা।
এছাড়া পর্যায়ক্রমে ঈদ পুনর্মিলনী, কৃতী সংবর্ধনা, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মতবিনিময় ও বিভিন্ন সেবামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ঈদ-পরবর্তী সময় কাটাচ্ছেন তারা। এসব কর্মসূচিকে ঘিরে তাদের এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাতায়াতে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। এ সময় প্রার্থীদের পক্ষে ‘দাঁড়িপাল্লা’ প্রতীকের স্লোগান দিচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
কয়েকদিনের ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার চাঁপাইনবাগঞ্জ-৩ আসনের প্রার্থী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নুরুল ইসলাম বুলবুল স্টুডেন্ট ফেস্ট ও কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এছাড়া তিনি অসহায়দের মাঝে গোশত বিতরণ ও একাধিক ঈদ-পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
নির্বাচনি তৎপরতা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নুরুল ইসলাম বুলবুল আমার দেশকে বলেন, কেন্দ্র থেকে আলাদাভাবে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনের স্বাভাবিক প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই নিজ এলাকায় নানা কর্মসূচি পালন করছেন।
একইভাবে পটুয়াখালী-২ আসনের প্রার্থী, জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ মঙ্গলবার বাউফল সরকারি কলেজ মাঠে ছাত্র ও তারুণ সমাবেশে যোগ দেন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা, কৃতী শিক্ষার্থী সংবর্ধনা, বাজারে সৌজন্য সাক্ষাৎসহ নানা কর্মসূচিতে নির্বাচনি গণসংযোগ ও শোডাউন করেন।
কয়েকটি সূত্র জানায়, জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমান ঢাকা-১৫ (মিরপুর ও কাফরুল) আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী। তার পক্ষে নির্বাচনি এলাকার জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে বহু পোস্টার-ব্যানার টানানো হয়েছে। তবে তিনি এবারের ঈদুল আজহা উদযাপন করেন মৌলভীবাজার জেলায় নিজ গ্রামে। তিনি দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বিবৃতিও দিয়েছেন।
জামায়াত আমির মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নে তুলাপুর পাঁচগাঁও ঈদগাহে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা ও কুশলবিনিময় করেন।
পর্যায়ক্রমে তিনি বিভিন্ন এলাকায় ঈদ পুনর্মিলনীসহ নানা অনুষ্ঠানে যোগ দেন। এ সময় তার বক্তব্যে আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গ প্রাধান্য পায়। এ সময় তার সঙ্গে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট-৬ আসনের প্রার্থী মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিনসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম মা’ছুম কুমিল্লায় নিজ এলাকায় ঈদ উদযাপন ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছেন। মঙ্গলবার কুমিল্লা আসন-২ (হোমনা-মেঘনা) জামায়াত আয়োজিত এক ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে বক্তব্য দেন। একইভাবে দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা তাদের নির্বাচনী এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।