নগরভবনে নিজে তার সর্মথকদের সাথে যোগ দিয়ে মেয়র পদে সরকার শপথ না পড়ালে ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে নিজেই শপথ পড়ে মেয়রের চেয়ারে বসবেন বলে সরকারকে শেষ বার্তা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় নগর ভবনের প্রধান ফটকের নিচে মঞ্চ তৈরি করে আন্দোলনে অংশ নেওয়া সমর্থকদের মাঝে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন ইশরাক।
তিনি বলেছেন, ‘বহিরাগত কোনো প্রশাসক, উপদেষ্টাকে নগর ভবনে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না, প্রয়োজনে প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রশাসক বসানো হবে, এটা শেষ কথা।’
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নগর ভবন ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। শপথ পড়ানোর দাবিতে ২১ দিন ধরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন ইশরাক সমর্থকরা।
তিনি বলেন, ‘আপনারা দেখেছেন বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং তার কতিপয় উপদেষ্টা পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে আমাদের এই নির্বাচনের রায়ের পরে তালবাহানা করেছে। আমাকে শপথ না পড়ানোর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সংবিধানকে লঙ্ঘন করেছে, নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাকে তারা অসম্মান করেছে। তারা আইন আদালত মানে না তারা নির্বাচন কমিশন মানে না। তারা সংবিধান মানে না, তাহলে তারা মনে টা কি? এই বাংলাদেশের মানুষ, আমরা যদি আগামীকাল থেকে তাদের না মানা শুরু করি, তাহলে এর দায় দায়িত্ব কে নিবে।’
ইশরাক বলেন, ‘তাদেরকে বসানো হয়েছে (এই অন্তর্বর্তী সরকারকে) একটি ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দল এবং সর্ব শ্রেণির পেশার মানুষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়েছে, তারা চেয়েছিল যাতে তারা শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করলাম, ঢাকা দক্ষিণ সিটির একজন মেয়র খুবই সামান্য পদ যদি আমরা পুরো বাংলাদেশের প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকারকে আমলে নিতে চাই। সেটিকে হস্তান্তর করতে আদালতের সর্বোচ্চ রায়ের পরেও শপথ পরানো নিয়ে তালবাহানা করছে, কীভাবে তাদের অধীনে আগামী দিনে একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হতে পারে সেটা নিয়ে, জনগণের মাঝে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এর মাধ্যমে এই সরকার তার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে।’
পদত্যাগের নাটক মঞ্চস্থ করেছে সরকার:
আন্দোলন ঠেকাতে সরকার পদত্যাগের নাটক মঞ্চস্থ করেছে বলেও দাবি করেছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই আদালতের রায় এবং গেজেট প্রকাশের পর আমরা যখন বার বার সরকারের কাছে আবেদন লিখিত ভবে জানালাম, তারা কিন্তু তোয়াক্কা করলো না। এর পরে ঢাকা শহর দক্ষিণের ভোটাররা রাজপথে নেমে আসে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। আমরা আমাদের দাবি আদায়ে এখান থেকে বের হয়ে যমুনা ঘেরাও দিয়ে দুই দিন অবস্থান করে ছিলাম। তখন আমরা কি দেখতে পেলাম, জাতির সামনে একটা নতুন নাটক মঞ্চস্থ করা হলো। যেখানে পদত্যাগের নাটকের মাধ্যমে জাতিকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল মাধ্যমে একটা নাটক মঞ্চস্থ করা হলো। রাষ্ট্র পরিচালনা কোন আবেগের বিষয় নাই। এখানে ১৮ কোটি মানুষের জীবনযাত্রায় জীবিকা নির্বাহের বিষয়। আবেগ দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা যায় না। যখন ইচ্ছা নিলাম, যখন আমি বেজার হলাম তখন পদত্যাগ করে চলে গেলাম এ ধরনের কর্মকাণ্ড জনগণের কল্যাণময় কিছু হবে না।’
ইশরাক বলেন, ‘এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করতে পারবে এটা শুধু প্রশ্নবিদ্ধ হয় নাই, জনগণের কাছে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বর্তমান সরকার দিয়ে সেটি অর্জন করা কোন ভাবে সম্ভব নয়। আমাদের দলের পক্ষ থেকে তিনজন উপদেষ্টার নাম বলে আসা হয়েছে অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ চাই। যারা দেশ ও জাতির জন্য হুমকিস্বরূপ, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু আমরা এখন পর্যন্ত তাদের বিষয়ে কোন ব্যবস্থা নিতে দেখতে পাই নাই।’
আমার শপথ আমিই পড়বো:
সরকার অবিলম্বে শপথ না পড়ালে ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শহীদ মিনারে নিজের শপথ নিজেই পড়ে চেয়ারে বসার ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘ইতোপূর্বে যখন আমরা যমুনা ঘেরাও করেছিলাম তখন কি হলো, নাটক মঞ্চস্থ করার পরে বলা হলো এটার একটা সমাধান হবে। আমরা যাতে জনদুর্ভোগের কথা চিন্তা করে নিজের সিদ্ধান্তে রাস্তা ছেড়ে দিয়েছিলাম। একারও নির্দেশনায় না। আমরা ভেবেছিলাম সরকার সুরাহা করবে। পরবর্তীতে আমরা দেখতে পেলাম টালবাহানার মাধ্যমে তাদের যে মুখোশ সেটিকে উন্মোচিত করা হয়েছে।’
ইশরাক বলেন, ‘এই নগর ভবন দুই সপ্তাহ যাবৎ আমরাই নিয়ন্ত্রণে রেখেছি, আমরাই দখল করে রেখেছি। এই শপথ যদি তারা না পড়ায়, আমি গিয়ে আমার চেয়ারে বসতে পারি, দুই মিনিটও লাগবে না। ঢাকা শহরের জনগণ আমাকে বারে বারে বলেছে কেন আমি শহীদ মিনারে গিয়ে শপথ পড়ে দায়িত্ব আমি নিজেই কেন নিয়ে নিচ্ছি না। তখন আমি বলেছি, যেহেতু আমরা একটা নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল করি, আমাদের দলের পক্ষ থেকেও আমাদের নেতারা বিভিন্ন পর্যায়ে যোগাযোগ করেছে। ’
আন্দোলন শিথিল:
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে নগর ভবন ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। শপথ পড়ানোর দাবিতে প্রায় ২১ দিন ধরে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছেন ইশরাক সমর্থকরা।
তিনি বলেন, ‘সামনে ঈদ, জনগণের ভোগান্তি ও জনগণের যাতায়াতের কথা মাথায় রেখে, আমরা বর্তমান নগর ভবনের অবরোধ এবং ঘেরাওয়ের কর্মসূচি কিছুটা শিথিল, কিছুটা বিরতি দিয়েছি। পরবর্তীতে ছুটির পরে, শপথ গ্রহণের অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট বার্তা না আসলে ঢাকা দক্ষিণের সর্বস্তরের জনগণেকে সামনে নিয়ে দুর্বলরা আন্দোলনের মাধ্যমে ঢাকাবাসীর ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। যে ভোগান্তি সৃষ্টি হয়েছে, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে এর পুরো দায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এবং বর্তমান স্থানীয় সরকারে উপদেষ্টা এবং স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তাদের ওপর বর্তায়। তারা সরাসরি সংবিধান লঙ্ঘনের মাধ্যমে আইনকে অবজ্ঞা করেছে সর্বোচ্চ আদালতকে অবমাননা করেছে। এই আন্দোলন চূড়ান্তভাবে না যাওয়া পর্যন্ত মাঠ ছেড়ে যাবো না।’
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচন। তাতে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে। ওই নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ফলাফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক হোসেন।
৫ আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের ফলে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনি ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।