বিএনপির প্রতি মনক্ষুণ্ন না হতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি অনুরোধ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা আমাদের ওপর আপনি মনঃক্ষুণ্ন হবেন না। আমাদের চেয়ে বেশি সাপোর্ট আপনাদের আর কেউ দিয়েছে বলে জানি না। আমাদের প্রতিপক্ষ ভাববেন না।
বিএনপি সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা করছে দাবি করে দলটির নেতা বলেন, সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে প্রকৃত বন্ধু হিসেবে তারা সমালোচনা করেন।
সোমবার জাতীয় ঐক্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন বলে বৈঠকের একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে।
সালাউদ্দিন অভিযোগ করেন, পুরো উপদেষ্টা পরিষদের কর্মকাণ্ডে কোন কোন সময় তাদের মনে হয়েছে যেন তারা প্রতিপক্ষ। কেউ কেউ জাতির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্রের সুযোগ নিচ্ছে দাবি করে তিনি বলেন, বিভিন্নরকম অস্থিরতা সৃষ্টির পাঁয়তারা রয়েছে। এটা অভ্যন্তরীণভাবেও আছে বহির্বিশ্বেরও আছে। অনেকে বলেছে পার্শ্ববর্তী একটি দেশ নির্বাচন চায়। তার মানে উনারা নির্বাচন চেয়েছে বলে আমরা দীর্ঘদিন নির্বাচন চাইবো না? তারা কেন নির্বাচন চায় সেটা তারা জানে। তারা বলেছে তারা ইনক্লুসিভ নির্বাচন চায়। কিন্তু আপনারা তো কাউকে কাউকে এক্সক্লুড করে দিয়েছেন সুতরাং বোঝাই যায় তারা কি বলছে। যদি ইউরোপ আমেরিকা নির্বাচন চায় তখন তো আপনারা কিছু বলেন না। দেশের অভ্যন্তরীণ ও বাইরে নির্বাচন চাওয়ার ব্যাপারে বহু বিবৃতি রয়েছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে, আমাদের সমমনা দলের পক্ষ থেকে আমরা বলেছি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, শুধু একটি মাত্র দল ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন চায়। এ বক্তব্য আমাদের আহত করেছে।
সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, যেসব বিষয়ে সংস্কারে সবাই একমত হয়েছে। বিশেষ করে নির্বাচন সংক্রান্ত যেসব সংস্কার প্রস্তাব হয়েছে তার বিষয়ে তিন মাস আগে আমরা একমত হয়েছি। ইচ্ছে করলে এর মধ্যেই সেগুলো অধ্যাদেশ করা যেত। বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশনের বিষয়ে বলতে গেলে প্রায় সবাই একমত হয়েছে। দু’চারটি যেটা হয়নি তা বাদ রাখতেন। তো সংস্কার তো শেষ। আর বিচার? বিচার দৃশ্যমান হয়েছে। বিচারের মধ্যে কি কোনো রোডম্যাপ দেওয়া যায়? বিচারে রোডম্যাপ দেওয়া হলে তা হবে ইনজাস্টিস। বিচারে রোডম্যাপ হবে না। বিচার শুরু হয়েছে। এক্ষেত্রে যেসব সহযোগিতা দেওয়া যায় তা সরকার করবে। আমাদের ডাকলে আমরাও সহায়তা করব। বিচার চলবে তার নিজস্ব গতিতে। আরবি স্যার এখানে সমাপ্ত হলেও আপিল হবে, আরো অনেক কিছু হবে।
প্রধান উপদেশ থেকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, জাতি অবশ্যই দেখতে চাচ্ছে ১৫ আগস্ট এর আগে একটি বিচারের রায়। তারা যেন অন্তত একটি বিচারের রায় দেখতে পায়। অবশ্যই এক্ষেত্রে জোরাজুরি বা জবরদস্তি নেই তবে জাতির প্রত্যাশা। একটা মামলা কয়েকজন আসামি তার চিহ্নিত করা হয়েছে। বিচারটা খুব শিগগিরই করা সম্ভব। এরকম দু-একটি মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিচারের জন্য সরকারকে অনুরোধ করব৷
সালাউদ্দিন মঙ্গলবার আদালতে মামলা দায়ের করতে যাবেন উল্লেখ করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে আমি নাকি মামলা করছি না এর পেছনের রহস্য আছে। আমি কালকে যাব মামলা করতে।
শেখ হাসিনার মামলার বিচার কার্যক্রমের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, আমরা দেখলাম তার প্রশংসা করি এভাবে যেন মানুষ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ওপেন কোর্ট ট্রায়াল দেখতে পায়।
ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আপনারা দয়া করে আদালতে রায় বাস্তবায়ন করুন। মানুষ যেন মনে না করে এখানে আইনের শাসন নেই। এখানে আদালতের রায় বাস্তবায়ন হচ্ছে না। সেটা এখন দৃশ্যমান হচ্ছে। আমাদেরকে বাধ্য হয়ে রাস্তায় যেতে হচ্ছে। মানুষকে রাস্তায় যেতে হচ্ছে। আমরা সেটা আপনার কাছে আশা করি না। এদেশের মানুষ এই উপদেষ্টা পরিষদের কাছে নিরপেক্ষ আচরণ আশা করে। সেটা আপনাকে দেখতে হবে।
বিএনপি সরকারকে সর্বাত্মক সহায়তা করছে দাবি করে দলটির নেতা বলেন, আমরা যে শুধু শুধু অভিযোগের ঝুড়ি খুলে আপনার কাছে যাই, তা নয়। আপনার হাতকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা যাই। এ জাতিকে বুঝাতে চাই আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি। যারা কেবল প্রশংসা করে বাইরের দৃশ্য সম্পর্কে বলে না- তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে সরকারের। সরকারের যারা সমালোচনা বেশি করে আপনার ঘরের মধ্যে যারা আপনার সমালোচনা করে তারাই আপনার বন্ধু। আমরা আপনার বন্ধু। আমরা হয়ত বাইরে আছি। আমরা আপনার সব থেকে বেশি সমর্থন করব। দয়া করে সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে বিলম্ব না করে একটা রোডম্যাপ দেবেন ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের। সেটা আমাদের দাবি। আর যদি কোনো যুক্তি থাকে সেটা আপনি জাতির সামনে উপস্থাপন করবেন। এবং সেই ভাবে বলবেন। এখানে সবাই সে কথাই বলেছেন। যাতে আমরা ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাতীয় ঐক্যটাকে ধরে রেখে এবং এটাকে শক্তিতে পরিণত করে আগামীদিনে আমরা এমন একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে পারি। যেখানে আমরা সবাই নিজেদের মধ্যে বিতর্ক করব। সবাই আমরা নিজেদের মধ্যে দ্বিমত হবো বহু মত হব। কিন্তু একটা রাস্তাতেই এগিয়ে যাব। এটা যেন আমরা দেখতে পাই।
তিনি বলেন, সংস্কার কমিশনের গতি নিয়ে আমরা মোটেও সন্তুষ্ট নই কারণ আমরা এ সংস্কারের প্রধান প্রবক্তা। আপনারা যদি সৌভাগ্যক্রমে দায়িত্ব গ্রহণ না করতেন তাহলে যখন ফ্যাসিবাদের পতন হতো তখনই আমাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সংস্কারে যেতে হতো। এই সংস্কার প্রস্তাবে এমন কিছু নেই যা আমাদের দলের ৩১দফার সাথে মেলেনি। অবশ্য আপনারা এর বাইরে অনেকগুলি সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছেন।
বিএনপি সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে অবিরত তিনদিন আলোচনা করেছে উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন বলেন, আমরা আপনাদের যে সংস্কার প্রস্তাব লিখিতভাবে দিয়েছি। তার থেকে আপনারা জানাতে পারতেন আমরা এসব বিষয়ে একমত হয়েছি। দলগুলো একমত হয়েছে। সংস্কার নিয়ে বেশি কথা বলতে চাই না বললে রিয়াজ ভাই কষ্ট পাবেন (সংস্কার কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ)।
বিএনপি এখানে সরকারের প্রশংসা করতে আসেনি উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন বলেন, আমরা এখানে আলোচনা করতে এসেছি।
তিনি বলেন, ডিসেম্বরের পর নির্বাচন যাওয়ার একটি কারণও নেই। আমরা কেন কি উদ্দেশ্যে ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন চাই, তা বহুবার বলেছি। যৌক্তিকভাবে প্রকাশ করেছি।