নিম্নচাপের প্রভাব পড়েছে রাজধানীর কাঁচাবাজারে। ঢাকাসহ দেশের আট বিভাগের বিভিন্ন স্থানে টানা ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের কারণে কাঁচাবাজারে সব ধরনের সবজির দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিক্রেতারা বলছেন, বাইরে থেকে যে পরিমাণ সবজির গাড়ি প্রতিদিন রাজধানীতে ঢুকত তা বৃষ্টির কারণে ঢুকছে না। এতে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় রাজধানীর বাজারগুলোতে সবজির দাম বেড়েছে।
তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক সড়ক পানিতে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ ছাড়া বৃষ্টির মধ্যে কৃষক ও পাইকারি ব্যবসায়ীরাও ক্ষেত থেকে সবজি তুলছেন না। ফলে সিরাজগঞ্জ, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, জামালপুর-শেরপুর, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, খুলনা, বরিশাল, যশোরসহ গুরুত্বপূর্ণ কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী অঞ্চল থেকে ঢাকায় সবজি পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, নয়াবাজার, ও হাতিরপুলসহ একাধিক কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বেশির ভাগ সবজির দাম কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। গত সপ্তাহে পেঁপে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, কিন্তু গতকাল বিক্রি হয়েছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। এ ছাড়া টমেটো ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা, করলা ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, কাঁচামরিচ ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকা, লতি, কাঁকরোল, করলা ৪০ থেকে ৬০ টাকা, পটল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বেগুন ৪০ টাকা থেকে ১০০ টাকা, আলু কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সবজির পাশাপাশি মাছের দামেও বেড়েছে। সরবরাহ কম থাকায় প্রায় সব ধরনের মাছের দাম কেজিতে ৪০-৫০ টাকা হারে বেড়েছে। তবে মাংসের দাম স্থিতিশীল রয়েছে বলে ক্রেতা-বিক্রেতারা জানিয়েছেন।
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দামও কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ী রাসেল আহমেদ। খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, রসুন দেশি ১২০ টাকা, ইন্ডিয়ান রসুন ১৮০ টাকা, আদা কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও রাজধানীর অভিজাত এলাকার বাজার ও পাড়া-মহল্লায় এ দাম আরো কিছুটা বেশি।
কাঁচাবাজারে সব ধরনের সবজির দাম বাড়লেও চাল, ডাল ও চিনির দাম কমেছে। কারওয়ানবাজারের মায়ের দোয়া স্টোরের ইমাম উদ্দীন বলেন, বাজারে নতুন চালের সরবরাহ ক্রমেই বাড়ছে। ফলে চালের দাম কমা অব্যাহত রয়েছে। তবে মিনিকেটের চাল কেজিতে ২০ টাকা পর্যন্ত কমলেও গরিবের খাবার মোটা চালের দাম সে হারে কমেনি। বর্তমানে গুটি স্বর্ণা ৫০ টাকা এবং ব্রি-২৮ জাতের চাল ৫৪ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন চাল বাজারে আসার পর সবচেয়ে বেশি কমেছে তীর কোম্পানির মিনিকেট, গতকাল বিক্রি হয়েছে ৬৮ টাকা কেজি দরে। এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে কমেছে ২০ টাকার মতো। এ ছাড়া মোজাম্মেল ৭৬ টাকা, সাগর ৭২ টাকা ও মঞ্জু ৭২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যান্য মিনিকেট চালও একই হারে কমে বিক্রি হচ্ছে। চালের দাম আরো কমতে পারে। মোটা চালের তেমন একটা কমেনি আবার সামনে কমারও কোনো সুখবর নেই।
মগবাজার এলাকার বাসিন্দা সেলিম মালিক বলেন, গত সপ্তাহের তুলনায় সাদা চিনি কেজিতে ১০ টাকা কমে ১১০ টাকায় কিনেছি। মসুর ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা কমে ইন্ডিয়ান ডাল ১০০ টাকা এবং দেশি ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাওরানবাজার পাইকারি ব্যবসায়ী সোলায়মান বলেন, বৃষ্টিতে ট্রাক চলাচল বন্ধ থাকায় সময়মতো পণ্য আসছে না। ফলে বাজারে জোগান কম, দাম বাড়ছে। অন্যদিকে, খুচরা বিক্রেতা জাকিয়া বলেন, যে দামে মাল কিনছি, তা আগের তুলনায় অনেক বেশি। তাই বেশি দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে।