বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫, ০৫:০৫ অপরাহ্ন

হাসিনার শাসনামলে কত বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে, জানালেন গভর্নর

  • সময়: বুধবার, ২৮ মে, ২০২৫, ৯.১৬ এএম
  • ১৭ জন

ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলে দেশ থেকে প্রায় আড়াই লাখ কোটি টাকা (১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার) পাচার হয়েছে। এর সিংহভাগ টাকাই পাচার করেছে ১১ ব্যক্তি ও শিল্পগোষ্ঠী। পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে অন্তর্বর্তী সরকার বিভিন্ন দেশ ও সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে পাচারকারীদের দেশে থাকা সম্পদ জব্দ করা হয়েছে। শিগগিরই তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বার্ষিক রিপোর্ট প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘অর্থপাচার রোধ বা পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পূর্ব কোনো অভিজ্ঞতা ছিল না। আমরা কেউ এ ধরনের কাজ করায় প্রস্তুত ছিলাম না। কাজ গতিশীল করতে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমিয়ে আনার চেষ্টা চলছে। সে জন্য আইনে পরিবর্তন আনা হবে। ফলে টাস্কফোর্সের ক্ষমতাও বাড়বে।’

দেশ থেকে ১৮ থেকে ২০ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে উল্লেখ করে গভর্নর জানান, ‘একজনই ৩৫০টি বাড়ি কিনেছেন। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এসব অর্থ পাচার করা হয়েছে। এসব ঘটনা উদ্‌ঘাটন করা গেছে। দিন দিন এই অর্থের পরিমাণ বাড়ছে। ১১টি গ্রুপ নিয়ে যৌথ তদন্ত চলছে। আস্তে আস্তে আরো কিছু তদন্তের আওতায় আনা হবে।’

আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আসতে তিন থেকে পাঁচ বছর সময় লাগবে। টাকা এখনই আসবে—এমন ধারণা করা ভুল। ছয় মাসের মধ্যে কিছু সম্পদ আমাদের ফ্রিজের লক্ষ্য ছিল, সেটা দুই মাসের মধ্যেই করেছি। অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য প্রথম বছরের মধ্যে বেশিরভাগ সম্পদ ফ্রিজ করা।’

গভর্নর বলেন, ‘টাকা পাচারকারীদের ফেরত এনে জেলে ঢোকানো কঠিন ব্যাপার। যেহেতু ব্যাংকের টাকা গেছে, তাই সম্পদ জব্দের মাধ্যমে তা উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। এখানে বিভিন্ন আইনি জটিলতা আছে। এখন যদি কারো বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল কেস করি, তাহলে সিভিল কেস করতে পারব না। তাই আগেই ভাবতে হবে কার বিরুদ্ধে কোন কেস করব। দুটোই আলাদা রাখতে হবে। বিদেশের আইন আর এখানকার আইনে অনেক পার্থক্য রয়েছে। তাই এক কেসের সঙ্গে আরেক কেস সাংঘর্ষিক হলে পুরো জিনিস বাতিল হয়ে যাবে। এ জন্য আন্তর্জাতিক মানও বজায় রাখতে হবে।’

বিদেশে ইতোমধ্যে সম্পদ জব্দ হয়েছে জানিয়ে আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘বিদেশে একজনের সম্পদ জব্দ হয়েছে। সামনে আরো সম্পদ জব্দ হবে। আমাদের উদ্দেশ্য পাচারকারীদের ওপর চাপ তৈরি করা, যাতে আদালতের বাইরে গিয়ে অর্থ উদ্ধার করা যায়।’

কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হয়নি জানিয়ে গভর্নর বলেন, ‘ব্যবসা বন্ধ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা কারো ব্যবসা বন্ধ করিনি। যাদের ব্যবসা বন্ধ হয়েছে, অন্য কারণে তা হয়েছে।’

দুর্বল ব্যাংকগুলো একীভূত করার আগে সরকার সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। তিনি বলেন, ‘দুর্বল ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা হবে। প্রাথমিকভাবে কিছু ইসলামি ব্যাংক দিয়ে শুরু হবে। একীভূত হলেও আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষিত থাকবে। কারণ, ব্যাংকগুলো সরকারি মালিকানায় চলে যাবে। তাই আমানতকারীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই।’

সভায় জানানো হয়, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে ২৫ মে পর্যন্ত বিএফআইইউতে ২৭ হাজার ১৩০টি সন্দেহজনক লেনদেন ও কার্যক্রম-সংক্রান্ত প্রতিবেদন (এসটিআর/এসএআর) দাখিল হয়েছে; গত অর্থবছরের তুলনায় যা ৫৬ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে বিএফআইইউতে মোট ১৭ হাজার ৩৪৫টি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। জুলাই বিপ্লবের পর এ ধরনের রিপোর্টিং ব্যাপক বেড়েছে।

সভায় বিএফআইইউর প্রধান এএফএম শাহীনুল ইসলাম, পরিচালক মুহাম্মদ আনিছুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com