বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের রহস্যজনক সকল নীরবতা ভেঙে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন অবিলম্বে সম্পন্ন করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
সোমবার বিকেলে ঢাবির মধুর কেন্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন থেকে এসব দাবি জানানো হয়।
সংগঠনটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ধীরগতির কঠোর সমালোচনা করে বলেন, ‘ছাত্রসংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকার এবং এর বিলম্ব কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
শিবির বলছে, ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা ছিল, নতুন প্রশাসন ডাকসু নির্বাচনের বিষয়ে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু প্রশাসন ধারাবাহিকভাবে সময়ক্ষেপণ করে আসছে। উল্লেখ করা হয়, গত বছর ডিসেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর জানিয়েছিলেন ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন হবে। কিন্তু মে মাস শেষের পথে এলেও এখনো কোনো কার্যকর অগ্রগতি চোখে পড়ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে ঢাবি শিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ বলেন, প্রশাসন ডাকসু নিয়ে তিনটি পৃথক কমিটি গঠন করে- গঠনতন্ত্র সংস্কার, আচরণবিধি প্রণয়ন এবং অংশীজনদের সাথে পরামর্শের জন্য। যদিও এই কমিটিগুলো কাজ সম্পন্ন করেছে এবং সিন্ডিকেটে অনুমোদনও পেয়েছে, তবে নির্বাচন কমিশন গঠনের বিষয়ে এখনো রহস্যজনক নীরবতা বজায় রেখেছে প্রশাসন।
এ সময় দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন কমিশন গঠনের আহ্বান জানান তারা।
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করে শিবির জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যাম্পাসে ঘটতে থাকা অপ্রীতিকর ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কে দিন পার করছে। ভবঘুরে, উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি দ্বারা নারী শিক্ষার্থীদের হয়রানি, ক্যাম্পাস এলাকায় অপরিচিত জনসমাগম ও সিসিটিভি ক্যামেরার অভাব নিরাপত্তা পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করে তুলছে।
নিরাপদ ক্যাম্পাস গঠনে চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। সেগুলো হলো-
১. ভবঘুরে ও মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিদের উচ্ছেদে নিয়মিত অভিযান চালানো
২. পুরো ক্যাম্পাস এলাকায় সিসিটিভির আওতায় আনা
৩. ক্যাম্পাস প্রবেশপথে নিরাপত্তা বক্স সংস্কার ও প্রহরী নিযুক্তকরণ
৪. প্রক্টরিয়াল টিমের সংখ্যা বাড়িয়ে নিয়মিত টহল দেয়া
এছাড়াও সংবাদ সম্মেলন থেকে শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপের দাবি জানানো হয়েছে। শিবির বলেছে, ‘সাম্য ছিলেন ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির একজন, তার হত্যার বিচার বিলম্বিত হলে তা হবে বিচারহীনতার সংস্কৃতির ধারাবাহিকতা।’
তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও তাতে সন্তুষ্ট নয় বলে জানিয়ে শিবির দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করে শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
এ সময় তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘যদি দ্রুত ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রকাশ না করা হয়, তাহলে ছাত্রসমাজকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯০ সালের পর থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন হয়নি, শুধু ২০১৯ সালে একবার ছাড়া।