শনিবার, ১৭ মে ২০২৫, ০৮:০৮ অপরাহ্ন

বার্সেলোনা এখন উৎসবের নগরী

  • সময়: শনিবার, ১৭ মে, ২০২৫, ১১.৩০ এএম
  • ১১ জন

জয় মানেই তো আনন্দ! আর খুশির জোয়ারে ভেসে যাওয়া। কিন্তু এসপানিওলকে হারানো বার্সেলোনার কাছে তার চেয়েও বেশি কিছু। কারণটা কারো কাছেই অজানা নয়! কাতালান ডার্বি জয়ে যে শিরোপাও ধরা দিয়েছে বার্সার হাতে। তাতে মাঠে এক দফা উল্লাস হলো। গ্যালারির দর্শক থেকে মাঠের ফুটবলার ভেসে গেলেন উৎসবের বন্যায়। ফুর্তি যেন কিছুতেই শেষ হতে চাচ্ছিল না। এমনটা তো হওয়ারই কথা। এমন দিনের অপেক্ষায় ছিল বার্সা- সময়ের হিসাবে দুই বছর ধরে। আর মৌসুম বিচারে- মাঝে এক মৌসুম বিরতি দিয়ে ফের লা লিগা শিরোপা পুনরুদ্ধার করল কোচ হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা।

শিরোপা উৎসবটা হতে পারত বুধবার রাতেই। সাত গোলের থ্রিলার এল ক্লাসিকো জিতে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে শিরোপা লড়াই থেকে একরকম ছিটকেই দিয়েছিল লামিনে ইয়ামাল-রাফিনহা-রবার্ট লেভানডোভস্কিরা। তাতে স্প্যানিশ লিগের শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট ছিনিয়ে নেওয়াটা ছিল সময়ের অপেক্ষা মাত্র। মায়োর্কার কাছে কোচ কার্লো আনচেলত্তির শিষ্যরা আত্মসমর্পণ করলেই উচ্ছ্বাসের ঢেউয়ে দোল খেত পুরো বার্সেলোনা শহর। সেটা হলো, কিন্তু এক দিন পর- বৃহস্পতিবার রাতে- এসপানিওলের আরসিডিই স্টেডিয়ামে। নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ২-০ গোলে হারিয়ে ব্লুগ্রানারা মাতে শিরোপা উদযাপনে।

জয়ের পর রাফিনহা-লোপেজরা মাঠেই নাচ-গানে উল্লাসে মাতেন। দর্শকরা মাঠে নেমে পড়ার ভয়ে দ্রুত মাঠের উদযাপন শেষে ড্রেসিং রুমে তারা আরো হইহুল্লোড় করে। অন্দরমহলে কাতালান ফুটবলাররা মেতে ওঠেন পার্টিতে। নিজ ক্লাবে ফিরে ট্রেনিং কমপ্লেক্সের বারান্দায় নাচে-গানে খেলোয়াড়রা যেন হারিয়ে গিয়েছিলেন আমোদের জগতে। অনেকে সাধারণ জনতার সঙ্গে যোগ দেন সড়কে। পুরো রাত এভাবে উৎসবে কাটিয়ে দেয় বার্সার ফুটবলাররা।

যা কিছু করার কথা ছিল মাঠে। বার্সার ফুটবলার বাঁধভাঙা উদযাপনটা সেরে নিয়েছে নিজেদের ড্রেসিংরুমে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বার্সার ফুটবলারদের নাচ-গানের ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় মুহূর্তের মধ্যে। ড্রেসিংরুমের বিজয়োল্লাস সেরে বার্সার ফুটবলাররা ফেরেন ঘরে। তার আগেই ভক্ত-সমর্থকরা দখলে নিয়ে ফেলে বার্সেলোনা শহরের সব রাস্তা-ঘাট-অলি-গলি। আতশবাজি ফুটিয়ে উৎসবের মাত্রাটা বাড়িয়ে দেন তারা। এসব বার্সার ফুটবলাররা মন ভরে উপভোগ করেন। দানি ওলমো, এরিক গার্সিয়া, পেদ্রি ও ইনিগো মার্টিনেস তো সাইকেলে করে শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরেছেন। রাতভরা চলা এ উৎসব এখনো চলছে। সন্দেহ নেই যেটা চলবে আরো বেশ কিছু দিন। শুক্রবার ছাদখোলা বাসে ট্রফি নিয়ে চ্যাম্পিয়ন ফুটবলাররা ঘুরে বেড়িয়েছে পুরো শহর। জনস্রোতের মাঝে উদযাপনটা হয়েছে আরও জম্পেশ। বার্সেলোনা এখন উৎসবের নগরী- এ কথা নির্দ্বিধায় বলা যায়!

নিজের অভিষেক মৌসুমে সাফল্য দেখিয়ে ফুটবল দুনিয়াকে অবাক করে দিলেন কোচ ফ্লিক। গত জানুয়ারিতে ক্লাবকে উপহার দেন স্প্যানিশ সুপার কাপ। গত এপ্রিলে এনে দেন কোপা দেল রে। এবার বার্সার শোকেসে জায়গা বুকিং দিলেন লিগ শিরোপার জন্য! স্পেনের ঘরোয়া ফুটবলের তিনটি শিরোপাই জিতলেন এ জার্মান কোচ। গুরু ফ্লিক আর মাঝ-মাঠের তারকা পেদ্রিকে শূন্যে তুলে পরমানন্দে ফেটে পড়েন ক্লাবটির ফুটবলাররা। আর ইয়ামাল যেন বনে গিয়েছিলেন পুরোদস্তুর এক ডিজে। উৎসবের আমেজ ছুঁয়ে যায় বার্সা সভাপতি হুয়ান লাপোর্তাকেও।

উৎসব শুরুর আগে বার্সার সামনে সমীকরণটা ছিল সহজ ও সোজাসাপ্টা। চ্যাম্পিয়ন হতে একটি জয়ই ছিল দরকার। এসপানিওলের মাঠে বার্সার দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর ফুরায় লামিনে ইয়ামাল ও ফারমিন লোপেজের গোলে। দুজনের ছন্দময় ফুটবলের মায়াজালে স্প্যানিশ লিগের ২৮তম শিরোপা ঘরে তুলেছে বার্সা। তবে লিগ শিরোপা জয়ের রেকর্ড (রিয়ালের ৩৬ শিরোপা) থেকে এখনো অনেকটা দূরে ফ্লিকের বাহিনী। এখন পর্যন্ত ৩৬ ম্যাচ খেলে ৮৫ পয়েন্টের সংগ্রহ নিয়ে তালিকার রাজত্ব ধরে রেখে সেরা দলের দলের তকমা ছিনিয়ে নিল বার্সেলোনা। সমান ম্যাচ খেলে ৭৮ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট তালিকার দ্বিতীয় স্থানে এখন রিয়াল। দুদলের বাকি দুটি করে ম্যাচ। যা এখন আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়। ৭ পয়েন্টের দূরত্ব ঘোচানো কোনোভাবেই সম্ভব নয় কিলিয়ান এমবাপ্পে-জুড বেলিংহ্যাম-ভিনিসিয়াস জুনিয়রদের জন্য।

শিরোপা উৎসবের মঞ্চে প্রথমার্ধটা মোটেই ভালো কাটেনি বার্সার। তাই তো গোলের দেখাও মেলেনি। বিরতির পর খেলায় ফেরায় গোল ধরা দেয় কাতালানদের কাছে। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে চোখধাঁধানো বাঁকানো শটে দলকে এগিয়ে দেন ইয়ামাল। বাঁ পায়ের ট্রেডমার্ক গোলটি নিয়ে এবারের মৌসুমে স্প্যানিশ এ তরুণ তুর্কি পেলেন ১৭তম গোলের সন্ধান। ইনজুরি টাইমের পঞ্চম মিনিটের গোলেও সহায়তা করেন ইয়ামাল। তার পাস থেকে বল পেয়ে স্বাগতিকদের জাল কাঁপান লোপেজ। এ গোলে ইয়ামালের অ্যাসিস্ট বেড়ে দাঁড়াল ১৩ তে। ম্যাচ শেষের ১০ মিনিট আগে ১০ জনে পরিণত হওয়া এসপানিওল আর পেরে উঠেনি। ইয়ামালকে কনুই দিয়ে আঘাত করে ডিরেক্ট লাল দেখে মাঠ ছাড়েন স্বাগতিক ডিফেন্ডার লিয়ান্দ্রো কাবরেরা। তাদের হতাশা যেন হারিয়ে গিয়েছিল বার্সার উৎসব আর উল্লাসের মাঝে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com