এ দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী বহুজাতিক যেসব কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে দ্রুত শেয়ারবাজারে আনার জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
নির্দেশনাগুলো হচ্ছে: ১. দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী যেসব বিদেশি বা বহুজাতিক কোম্পানিতে সরকারের মালিকানা রয়েছে, সেগুলোকে দ্রুত শেয়ারবাজারে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। ২. গত ২০-৩০ বছরে দেশের বেসরকারি খাতে যেসব ভালো ও বড় বড় কোম্পানি গড়ে উঠেছে, সেগুলোকে প্রণোদনা দিয়ে বাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া। ৩. বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ দল এনে তিন মাসের মধ্যে পুঁজিবাজার সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া। ৪. পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ। ৫. বড় বড় কোম্পানি যাতে ব্যাংকঋণ নেওয়ার বদলে শেয়ারবাজারে বন্ড বা শেয়ার ছেড়ে পুঁজি সংগ্রহে আগ্রহী হয়, সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
সাংবাদিকদের শফিকুল আলম আরও জানান, বৈঠকে বিএসইসি চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ বাজারের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেন। গত ৯ মাসে কী ধরনের সংস্কার করা হয়েছে, কোথায় কোথায় এখনো সংস্কার চলমান রয়েছে, সেগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন তিনি। সেগুলো নিয়ে বৈঠকে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়। তার আলোকে প্রধান উপদেষ্টা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, সরকারের মালিকানা রয়েছে এমন বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর মধ্যে উদাহরণ হিসেবে ইউনিলিভারের নাম প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরা হয়। বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ইউনিলিভারে সরকারের প্রায় ৪০ শতাংশ মালিকানা রয়েছে। সে জন্য প্রণোদনা দেওয়া হলে এ ধরনের কোম্পানিকে শেয়ারবাজারে আনা সহজ হবে। এই পদক্ষেপ বাজারের উন্নয়ন ঘটাতে ও গভীরতা বাড়াতে সহায়ক হবে। সভায় এ নিয়ে ঐকমত্য পোষণ করা হয়।
সভা সূত্র আরও জানায়, আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করপোরেট করহারের ব্যবধান ১০ শতাংশ করা নিয়ে আলোচনা হয়। বলা হয়েছে, অতীতে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির ক্ষেত্রে করহারের ব্যবধান ১০ শতাংশ ছিল। তাতে স্কয়ার থেকে শুরু করে দেশি-বিদেশি ভালো মানের অনেক কোম্পানি বাজারে এসেছে। একই রকম করসুবিধা দেওয়া হলে ভবিষ্যতেও ভালো ভালো কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে আগ্রহী হবে। আগামী বাজেটে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির করহারের ব্যবধানে বাড়ানোর বিষয়ে বৈঠকে সবাই একমত হন। তবে করহারের ব্যবধানটি কত হবে, সে বিষয়ে সে ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
শেয়ারবাজারের সংস্কার উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব বলেন, এখানে অনেক ধরনের স্বার্থসংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী রয়েছে। এ কারণে সংস্কার পদক্ষেপ নিলে অনেক সময় সেগুলো ঠিকভাবে কাজ করে না। তাই সংস্কার উদ্যোগগুলো যেন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা যায়, সে জন্য স্বার্থসংশ্লিষ্ট নয় এমন বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে তাঁদের দিয়ে কাজটি করাতে হবে।
সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, বাজার অংশীজনদের মতামত ছাড়া সরকারের এই বৈঠক কতটা ফলপ্রসূ হবে? জবাবে শফিকুল আলম বলেন, ‘এটি ছিল সরকারের উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিদের সভা। আমরা আশা করি, সরকারের পক্ষ থেকে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন হলে সবাই একটা শক্তিশালী শেয়ারবাজার দেখতে পাবেন। সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে, সবার স্বার্থ সুরক্ষিত থাকবে এমন একটি শক্তিশালী ও গতিশীল শেয়ারবাজার গড়ে তোলা। সেটি করা গেলে সবাই উপকৃত হবেন।’
শফিকুল আলম আরও বলেন, অতীতে অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাতে নির্দিষ্ট একটি গোষ্ঠী উপকৃত হয়েছে। শেয়ারবাজারে অতীতে বড় ধরনের ডাকাতি হয়েছে। চোখের সামনে এটা হয়েছে, অনেক সাংবাদিক এগুলো নিয়ে লেখেনওনি। তাঁদের অনেকে হয়তো উপকারভোগী ওই গোষ্ঠীর অংশ হয়ে গিয়েছিলেন। এবারের বৈঠকের মূল বার্তা হলো, দ্রুত ও অর্থপূর্ণ সংস্কার বাস্তবায়ন করা, যাতে সবাই উপকারভোগী হন।