দুর্দান্ত ফর্মে আছে বার্সেলোনা। ঘরোয়া ফুটবলে তো বটেই। ইউরোপিয়ান ফুটবলেও দারুণ দেখাচ্ছে তারা। চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের দুরন্ত সেই ফর্ম ধরে রাখার বড় পরীক্ষার রাত আজ তাদের। বুধবার রাতে বার্সার আরেকটি দাপুটে পারফরম্যান্স উপভোগের অপেক্ষায় ফুটবল অনুরাগীরা। নিজেদের মাঠ এস্তাদিও অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে কোচ হান্সি ফ্লিকের শিষ্যরা আতিথ্য দেবে গতবারের ফাইনালিস্ট বরুশিয়া ডর্টমুন্ডকে। দুদল মুখোমুখি হতে যাচ্ছে ইউরোপিয়ান ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাকর টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে।
বার্সা-ডর্টমুন্ডের লড়াইটা সেমিফাইনালে উঠার হলেও, একই সঙ্গে শেষ চারের পর্বের প্রস্তুতি হিসেবে খেলবে দুদল। কেননা শেষ আটের বৈতরণী পেরিয়ে গেলে তাদের মোকাবিলা করতে হবে ইন্টার মিলান বা বায়ার্ন মিউনিখকে। ২০১০ সালে সেমিফাইনালে এই ইন্টার মিলানের কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছিল বার্সা। কোয়ার্টারে জিততে পারলে সেই হারের মধুর প্রতিশোধ নেওয়ার সম্ভাবনা জিইয়ে থাকবে তাদের সামনে। আর বছরের পর বছর ধরে বায়ার্নের হাতে নাস্তানাবুদ হয়ে আসছে ডর্টমুন্ড। জিতলে শেষ চারে তারা পেতে পারে স্বদেশি বাভারিয়ানদের দেখে নেওয়ার সুযোগ। বায়ার্নকে শেষ চারে হারানোর সুযোগ জিইয়ে রাখতে শেষ আটে হাসতে চায় ডর্টমুন্ড। কেননা ডর্টমুন্ডের লক্ষ্য টানা দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের এলিট টুর্নামেন্টের ফাইনালের টিকিট ছিনিয়ে নেওয়া।
কোয়ার্টারে বার্সেলোনার মতো ফেভারিট টিমকে হারানোটা জার্মান ক্লাব ডর্টমুন্ডের জন্য কঠিন এক চ্যালেঞ্জ। কারণটা স্বাভাবিক, এখন দারুণ ফর্মে রয়েছে কাতালানরা। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হয়ে যাবে। টানা ২২ ম্যাচ ধরে অজেয় রয়েছে বার্সা। তার মধ্যে জয়ের হাসি হেসেছে তারা ১৮ ম্যাচে। কিন্তু লা লিগায় সবশেষ ম্যাচে হোঁচট খেয়েছে ফ্লিকের ক্লাব। ঘরের মাঠে শনিবার রাতে ১-১ গোলে ড্র করেছে তারা রিয়াল বেটিসের সঙ্গে। ম্যাচের ৭ মিনিটে বার্সাকে লিড এনে দিয়েছিলেন গাভি। তবে সমতায় ফিরতে বেশি সময় নেয়নি অতিথি বেটিস। ১০ মিনিট বাদেই বলে মাথা ছুঁয়ে সমতা নিয়ে আসেন নাথান। গোলরক্ষক আদ্রিয়ানের বীরত্বে সেই সমতা ধরে রেখেই ১ পয়েন্ট কেড়ে নেয় সফরকারী বেতিস। তাতে বার্সা খোয়ায় ২ পয়েন্ট।
কোয়াড্রপল জয়ের দারুণ সুযোগ বার্সেলোনার সামনে। ইতোমধ্যে স্প্যানিশ সুপার কাপ জিতে নিয়েছে রাফিনহা-ইয়ামালরা। সামনে হাতছানি রয়েছে আরো তিনটি শিরোপা জয়ের। সেমিফাইনালে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ গোলে হারিয়ে কোপা দেল রে’র ফাইনালে আগেই জায়গা করে নিয়েছে বার্সা। প্রথম লেগটা শেষ হয়েছিল ৪-৪ গোলের সমতা নিয়ে। আর ফিরতি লেগে মেত্রোপলিতানোতে বার্সার হয়ে একমাত্র জয়সূচক গোলটি করেন ফেরান তোরেস। এই টুর্নামেন্টের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে বার্সার প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। ফাইনালের আগে চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের দুই লেগের মাঝে, বার্সা খেলবে আরো তিনটি সহজ ম্যাচ। লা লিগার এই তিন ম্যাচের প্রতিপক্ষ লেগানেস, সেল্টা ভিগো ও রিয়াল মায়োর্কা।
শুধু ফাইনালের এই এল ক্লাসিকোই নয়, দুই জায়ান্টের এ মহারণ বার্সাকে আরো একটি শিরোপা এনে দিতে পারে। সেটা অবশ্যই স্প্যানিশ লিগের শ্রেষ্ঠত্ব। ঘরের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে রিয়াল নিজেদের সবশেষ ম্যাচে ভ্যালেন্সিয়ার কাছে হেরে যাওয়ায় মোড় ঘুরে গেছে লা লিগার শিরোপা দৌড়ের।
ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে সবশেষ পাঁচ ম্যাচে হার মানেনি বার্সা। তাদের বিপক্ষে কোচ ফ্লিকের রেকর্ড শতভাগ পারফেক্ট। ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে বায়ার্নের হয়ে ছয় ম্যাচের ছয়টিতে জয় পেয়েছেন ফ্লিক। লিগ পর্বের সাফল্য রয়েছে এর মধ্যে। তার মধ্যে স্পেনের মাটিতে ডর্টমুন্ডের পারফরম্যান্স মোটেই ভালো নয়। ২০ বার সফরে গিয়েও সাফল্য পেয়েছে তারা মাত্র তিন ম্যাচে। এবারের মৌসুমেই রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে বিধ্বস্ত হয়েছে তারা ৫-২ গোলে। যদিও বার্নাব্যুতে তারা এগিয়ে ছিল ২-০ গোলে।
তবে বার্সা তাদের কোনোভাবেই হালকা করে নেবে না। ঘরোয়া ফুটবলে বাজে খেললেও ইউরোপিয়ান টুর্নামেন্টে হলুদ-কালো জার্সিধারীরা চমক দেখিয়ে যাচ্ছে। ডর্টমুন্ড নকআউট পর্বে হেরেছে মাত্র একটি ম্যাচ। সেটা রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে গত বছরের ওয়েম্বলির ফাইনালে। এমন ম্যাচগুলোতে টানা তিন জয় ছিনিয়ে নেওয়ার রেকর্ড রয়েছে ডর্টমুন্ডের। শেষ আটের অন্য ম্যাচে প্যারিস সেন্ট জার্মেই (পিএসজি) মোকাবিলা করবে অ্যাস্টন ভিলাকে।
মুখোমুখি
বার্সেলোনা-বরুশিয়া ডর্টমুন্ড
পিএসজি-অ্যাস্টন ভিলা