মোমিনমাত্রই শবেকদর বা লাইলাতুল কদর হচ্ছে তার বড় আরাধ্য। কেন নয়; এই একটি রাতের ইবাদত যে হাজার মাসের ইবাদতের চেয়ে উত্তম। জীবনে একবার যিনি এই রাত পেলেন, তিনি দীর্ঘ তেরাশি বছর ইবাদতের নেকি লাভ করবেন। অথচ আমাদের অনেকের হায়াতই তো তেরাশি বছর নয়।
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘লাইলাতুল কদর সম্বন্ধে আপনি কী জানেন? লাইলাতুল কদর এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ।’ (সূরা কদর : ২-৩)।
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি ঈমান ও সাওয়াবের আশায় কদরের রাতে দণ্ডায়মান থাকবে (ইবাদত করবে), তার আগের সব গুনাহ (সগিরা) ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ (বোখারি : ১৯০১; মুসলিম: ৭৬০)
এই রাতটি প্রতি বছর পবিত্র রমজানে একবার করে আগমন করে। রমজান মাসের শেষ ১০ দিনের কোনো একটি রাতে এর আবির্ভাব ঘটে। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলেন। এরপর দ্বিতীয় ১০ দিন ইতিকাফ করলেন। এরপর তিনি বললেন, ‘‘আমি প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করে এ মহান রাতটি (লাইলাতুল কদর) খুঁজলাম। এরপর দ্বিতীয় ১০ দিন ইতিকাফ করলাম, কিন্তু তাতে কদর নামক রাতটি পেলাম না। এরপর আমাকে বলা হলো, ‘এ রাতটি শেষ ১০ দিনের মাঝে নিহিত রয়েছে।’ সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন শেষ দশকে তা করে।’’ (মুসলিম : ১১৬৭)
অন্য হাদিসে আরো স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ কর।’ (বোখারি : ২০২০; মুসলিম : ১১৬৯) আরেক হাদিসে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমরা রমজানের শেষ দশ রাতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর। যদি তোমাদের কেউ দুর্বল থাকে বা অক্ষম হয়, সে যেন শেষ সাত রাতে সেটা খুঁজতে অপারগ না হয়।’ (মুসলিম : ১১৯৫)
সুতরাং ২০ রমজানের পর থেকে দিনগুলো যদি আমরা কাজে লাগাতে পারি, তাহলে লাইলাতুল কদর পাওয়া নিশ্চিত ইনশাআল্লাহ।
বাইতুল্লাহ শরিফের প্রখ্যাত ইমাম ও খতিব শায়খ ড. মাহের মুআইকিলি এ বিষয়ে একটি সুন্দর পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এ ১০ দিন রোজ রাতে কমপক্ষে একটি করে কড়ি দান করুন। এতে করে নিশ্চিত রূপে ৮৩ বছর দানের নেকি পাবেন। রোজ রাতে কদরের উদ্দেশ্যে কমপক্ষে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ুন। এতে করে ৮৩ বছর নামাজের সাওয়াব পাবেন। আর রোজ রাতে তিনবার করে সূরা ইখলাস (কুলহুয়াল্লাহু) পড়ুন। এতে করে ৮৩ বছর পবিত্র কোরআন খতমের পুণ্য হাসিল হবে।
লেখাটি পাঠকদের কাছে যখন পৌঁছাবে তখন অবশ্য শেষ দশকের চারটি দিন গত হয়ে যাবে। তার পরেও আমরা যদি অবশিষ্ট রাতগুলোতে এই তিনটি সহজ কাজ করতে পারি, আশা করি দয়াময় মাবুদ আমাদের লাইলাতুল কদরের অকল্পনীয় ও অপরিমেয় কল্যাণ দান করবেন। তিনি বড় মেহেরবান। তার কাছে উত্তম প্রত্যাশাও নেকির কাজ।