প্রবাসী বাংলাদেশিরা প্রক্সি পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন। পছন্দের প্রতীকে দেশে অবস্থানরত পরিবারের বিশ্বস্ত যে কোনো সদস্য তার পক্ষ হয়ে এই ভোটটি দেবেন। এক্ষেত্রে স্ত্রী, সন্তান, পিতা-মাতা কিংবা ভাই-বোন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি মূল্যায়িত হবেন।
বিশ্বস্ত ব্যক্তিটিকে সংশ্লিষ্ট ভোটার তাকে ইসির নির্দিষ্ট ফরম্যাটে অথরাইজ করবেন। আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন থেকে এটা কার্যকর করা হবে।
নির্বাচন কমিশন (ইসি) অনেক পর্যালোচনার পর একে যুক্তিসই উপায় হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এজন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও)তে ছোট সংশোধনী আনা হবে। পোস্টাল ব্যালট ও ই-ভোটিংয়ে বিধান নিয়ে অগ্রসর হলেও সেখান থেকে সরে এসেছে ইসি। খরচ ও সময় বাঁচাতে প্রক্সি ভোটকে বেছে নেয়া হয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন আমার দেশকে জানান, আরপিওতে পোস্টাল ব্যালটে ভোটদানের বিধান রয়েছে। কিন্তু এই পদ্ধতিতে ভোটদানে সর্বোচ্চ সময় লাগে ২৬ দিন। প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর ভোটগ্রহণ পর্যন্ত ওই সময় থাকে না। আবার একই দিনে ভোট এবং ফলাফলও প্রকাশ হয়ে যায়। তাই পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিতে যাওয়ার সুযোগ নেই।
সিইসি বলেন, দ্বিতীয় অপশন ছিল ই-ভোটিং। যেসব দেশে ই-ভোটিংয়ের প্রথা চালু ছিল তারও অভিজ্ঞতা ভালো নয়। আবার বড় একটা বাজেট লাগে, সেটাও সম্ভব নয়। সেদিক থেকে সহজ ও নির্ভরযোগ্য হচ্ছে প্রক্সি পদ্ধতি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এস্তোনিয়ায় ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন হয় অনলাইন ভোটিংয়ের মাধ্যমে। এই প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ পেয়েছে দেশটি। ফ্রান্সে চালু আছে ইন-পারসন (সশরীরে), পোস্টাল ব্যালট (ডাকযোগে) ও প্রক্সি ভোটিং । দেশটির প্রবাসীদের ভোট নেওয়া হয়েছে ২০২২ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে। এতে ভোট পড়ার হার ছিল সর্বোচ্চ।
যুক্তরাষ্ট্র ২০২০ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে পোস্টাল এবং ইলেকট্রনিক ভোটিং (ইভিএম) করেছে। কিছু অঙ্গরাজ্যে ভোট নেয়া হয়েছিল ই-মেইলে। অস্ট্রেলিয়া ২০২২ সালের যুক্তরাষ্ট্রীয় নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালট ও ইন-পারসন ভোটিং করেছে। ভারতের ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রক্সি ভোট ও ইন-পারসন ভোট হয়েছে। অগ্রিম নিবন্ধনের মাধ্যমে ভোটিং চালু করা হয়েছিল।
কানাডার যুক্তরাষ্ট্রীয় নির্বাচনে ২০২১ সালে পোস্টাল ও ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এই নির্বাচনগুলোকে রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে প্রবাসীদের ডাকযোগে ভোটদান, প্রক্সি ভোটদান, দূতাবাস-কনস্যুলেটে ব্যক্তিগত ভোটদান, ইলেকট্রনিক ভোটদান (অনলাইন বা ই-মেইল) ও হাইব্রিড সিস্টেমে ভোটদানের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে ইসি। তবে প্রক্সি পদ্ধতি সিস্টেমকেই প্রাধান্য দিচ্ছে সংস্থাটি।
ইসির একাধিক সূত্র জানান, প্রক্সি ভোটিংয়ের ধারণাটি নিউজিল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে রয়েছে। এটিতে শুধু বিশ্বস্ততার বিষয়টি জড়িত। তাই কমিশন এ পথকে বেছে নিতে যাচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার আমার দেশকে বলেন, প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার এবং তারা ভোটটা দিতে পারেন, সেই বিষয়ে আমরা খুবই আন্তরিক। ই-ভোটিং ইউএনডিপিসহ অন্যান্য দাতা সংস্থা বেশকিছু দেশে পাইলটিং করেছে। কিন্ত অভিজ্ঞতা ভালো নয়। অনেক দেশ ই-ভোটিং পদ্ধতি থেকে সরে আসছে।
কমিশনার বলেন, অনেকেই সহায়-সম্পত্তি সবকিছু তার অবর্তমানে বিশ্বস্ত একজনকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নির মাধ্যমে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। একইভাবে পরিবারের স্ত্রী-সন্তানসহ পরিবারের বিশ্বস্ত কাউকে ইসির নীতিমালা অনুযায়ী, দায়িত্ব অর্পণ করবেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার পক্ষেই পছন্দের ব্যালটে ভোট দেবেন। এটা সহজ ও প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের ভোটদানের স্বপ্ন পূরণ হবে।
নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দেখেছে ৪০টি দেশে প্রবাসীদের আধিক্য রয়েছে। দেশগুলো হলোÑ সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন, লেবানন, জর্ডান, লিবিয়া, সুদান, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালি, হংকং, মিশর, ব্রুনাই, মরিশাস, ইরাক, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, গ্রিস, স্পেন, জার্মানি, দক্ষিণ আফ্রিকা, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, সুইজারল্যান্ড, ব্রাজিল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, নিউজিল্যান্ড, রাশিয়া, তুরস্ক ও সাইপ্রাস। এসব দেশে এক কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার ৫৩৪ জন প্রবাসী রয়েছে। সর্বোচ্চ ৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ প্রবাসী রয়েছে সৌদি আরবে আর সবচেয়ে কম নিউজিল্যান্ডে দুই হাজার ৫০০ জন।
বর্তমান ভোটার তালিকা অনুযায়ী দেশে ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ। পুরুষ ছয় কোটি ২১ লাখ, নারী পাঁচ কোটি ৯৭ লাখ। আর হিজড়া ভোটার ৯৩২ জন। চলমান হালনাগাদে জুনে আরো ৩০ লাখের মতো ভোটার তালিকায় যুক্ত হবেন।