সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৩৫ পূর্বাহ্ন

সংসদীয় সীমানা পুনর্বিন্যাস করবে স্বতন্ত্র কমিশন

  • সময়: মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী, ২০২৫, ৯.১৮ এএম
  • ৬১ জন

র্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করলে অন্তত দুটি ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ক্ষমতা খর্ব হবে। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ- জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন উইং (এনআইডি) হাতছাড়া হবে। সীমানা পুবিন্যাসের এখতিয়ার খর্ব হবে। এক্ষেত্রে কমিশন গঠন করেই প্রতিবার সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাস করা হবে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পর্যালোচনা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কমিশন তার সুপারিশে বলেছে, আগামীতে সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাসের কার্যক্রম সম্পন্ন হবে একটি পৃথক কমিশনের অধীন। এক্ষেত্রে বিদ্যমান সীমানা আইন সংশোধন করে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বিন্যাসের একটি কমিশন গঠনের বিধান যুক্ত করা হবে।

প্রতিটি সংসদ নির্বাচনের নির্ধারিত সময় আগে সরকার এ সংক্রান্ত বিশেষজ্ঞদের সমন্বয় এই কমিশন গঠন করবে। সীমানা পুনর্বিন্যাসের কার্যক্রম সম্পন্ন হলে ওই কমিশন বিলুপ্ত হয়ে যাবে। বিদ্যমান আইনে সীমানা পুনর্বিন্যাসের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে ন্যস্ত রয়েছে।

এদিকে কমিশনের সুপারিশে এনআইডির জন্য স্বতন্ত্র কর্তৃপক্ষ বা অধিদপ্তর গঠন করার কথা বলা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পরিচয়পত্রকে (এনআইডি) কেন্দ্র করে ইসির কেন্দ্র থেকে মাঠ প্রশাসন পর্যন্ত নানা ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটছে এমন চিন্তা থেকে সংস্কার কমিশন নিরপেক্ষ ও দুর্নীতিমুক্ত রাখতে এ ধরনের সুপারিশ করেছে।

এদিকে জানা গেছে, সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সার-সংক্ষেপ পাওয়ার পর তা ঘেঁটে দেখছে বর্তমান কমিশন। সীমানা পুনর্বিন্যাস ইস্যুতে তাদের সুপারিশ বিদ্যমান সীমানা আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কি না পর্যালোচনা করেছে। আগামীতে এনআইডি তাদের কাছে না থাকলে কী অসুবিধা হবে সেটিও বিবেচনা করছেন।

এছাড়া সংস্কার কমিশন তার সুপারিশে বেশকিছু ক্ষেত্রে ইসির ক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশের পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতার মধ্যে আনার কথা বলেছে। এক্ষেত্রে ভোটের অনুকূল পরিবেশ না থাকলে ভবিষ্যৎ দায় এড়াতে কমিশন রাষ্ট্রপতির কাছে রেফারেন্স পাঠাতে পারবেন। ভোটের পর এবং ফলাফলের গেজেট প্রকাশের আগে কমিশন বসে সার্টিফাই করবেন ভোটটি ‘ভালো না মন্দ’ হয়েছে।

বিভিন্ন সুপারিশের প্রসঙ্গ তুলে ধরে নির্বাচন কমিশনব্যবস্থা ও সংস্কার কমিশনের প্রধান এবং সু-শাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার আমার দেশ-এর সঙ্গে খোলামেলা কথা বলেছেন।

সংসদীয় এলাকার সীমানা পুনবিন্যাস প্রসঙ্গে ড. বদিউল আলম বলেন, এটা নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ আছে। তাই রাষ্ট্রের নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কমিশন গঠন করে তাদের পরামর্শের আলোকে আগামীতে সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস হবে।

আমাদের এ সুপারিশ সরকার আমলে নিয়ে সীমানা পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি তার ইসির হাতে থাকবে না। কারণ অতীতে ইসির অধীনে অনুষ্ঠিত সীমানা পুনর্বিন্যাসে অনেক পক্ষপাতদুষ্টতা আমরা দেখেছি।

আপনারা জানেন, ২০০৮ সালে এবং পরে কীভাবে সীমানা বিন্যাস করা হয়েছিল; এ কথা জানিয়ে সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, শুধু একটি রাজনৈতিক দলকে সুবিধা দিতে ওই সময়ে পার্বত্য তিনটি ও গোপালগঞ্জ জেলা বাদে ২৯৪টি সংসদীয় আসনকে ভাঙা হয়। এর মধ্যে ১৩৯টি আসন ব্যাপকভাবে এলোমেলো হয়। অনেক জেলায় আসন কমে কিছু জেলায় বাড়ে।

এ নিয়ে শুনানিতে সংস্কার কমিশনের কাছে নানা মহল থেকে অভিযোগ ও অসুবিধার কথা সংক্ষুব্ধরা জানিয়েছিল; এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা ওই সুপারিশ করেছি। এজন্য স্বাধীন কর্তৃপক্ষের কথা বলেছি। তাদের তত্ত্বাবধানে সীমানা বিন্যাস হবে।

উল্লেখ্য, বর্তমান এ, এম, এম, নাসির উদ্দিন কমিশন সংসদীয় আসনের সীমানা বিন্যাস করার জন্য একটা খসড়া প্রস্তাবনা তৈরি করেছে, সেখানে ২০০১ সালের সীমানায় যতটুকু সম্ভব ফেরানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

ইতিমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে ৭০টির বেশি আসন পুনর্বিন্যাস চেয়ে আবেদন জমা হয়েছে ইসিতে; সেগুলোও পর্যালোচনার জন্য আমলে নেওয়ার চিন্তা করেছে। ইসি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পর প্রধান উপদেষ্টার সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে কমিশন।

জানতে চাইলে আমার দেশকে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আমরা সংস্কার কমিশনের সার-সংক্ষেপটি পেয়েছি। সেটা নিয়েই পর্যালোচনা করছি। অন্তর্নিহিত কারণ এখনও আমরা জানি না। বিস্তারিত যখন ব্যাখ্যাসহ পাব তখন এটা আমাদের জন্য নেতিবাচকের পরিবর্তে ইতিবাচক হতে পারে। বিদ্যমান আইনের সঙ্গে সংস্কার কমিশনের সুপারিশটি সাংঘর্ষিক কি না সেটাও চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে, জানান এই নির্বাচন কমিশনার।

সীমানা বিন্যাসের পাশাপাশি জাতীয় পরিবচয়পত্র নিবন্ধন কর্তৃপক্ষের (এনআইডি) জন্যও আলাদা কর্তৃপক্ষ করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এ প্রসঙ্গে বদিউল আলম বলেন, জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন-২০২৩ সরকার ইতোমধ্যে বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাতিল হওয়া সাপেক্ষে এনআইডি আপাতত ইসির অধীনে থাকবে।

সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন হলেই দ্রুত ফলাফলের গেজেট প্রকাশের বিধান নতুন সুপারিশে সেই পথ বন্ধ হবে বলে মনে করেন বদিউল আলম। তিনি বলেন, আগামীতে সংসদ নির্বাচনের পরে এবং ফলাফলের গেজেট প্রকাশের আগে কমিশনকে সার্টিফাই করতে হবে, এই নির্বাচনটি ভালো হয়েছে না মন্দ হয়েছে। বলেন, চিন্তা করে দেখেন ২০১৮ সালের নির্বাচন; সেটি যদি বসে বলতে হতো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, তাহলে কী অবস্থা দাঁড়াত?

বদিউল আলম বলেন, শুধু ইসি বলল আর হয়ে গেল সেটিও না। কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে তারা যদি মনে করে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি তাহলে আদালতে যেতে পারবেন। আদালত সাত দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবেন। এসব বিধান আগে ছিল না। সংস্কার কমিশন এই বিধানটি যুক্ত করে সুপারিশ করেছে।

অন্য এক প্রসঙ্গে সংস্কার কমিশনের প্রধান বলেন, নির্বাচন কমিশন যদি মনে করে নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে না তাহলে আগামীতে তারা (ইসি) রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগে একটা রেফারেন্স পাঠাবেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সেখান (আদালত) থেকে একটা নির্দেশনা নেওয়া। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে পদ্ধতিতে গঠিত হয়েছে; সে রকম নির্বাচন বিষয়ে মতামত গ্রহণ করা।

কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সংবিধানের রক্ষক- উচ্চ আদালত। ওনারাই স্পর্শকাতর ইস্যুতে ইন্টারপেট করতে পারে। যদি নির্বাচনটা বন্ধ করতে চায় তাহলে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা নিতে পারবে কমিশন।

নির্বাচনটি ৯০ দিনের জন্য বন্ধ হবে এবং সর্বসম্মতভাবে লিখিত সুপারিশ করতে পারবেন রাষ্ট্রপতির কাছে। একতরফা নির্বাচন বন্ধ এবং নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা সমুন্নত রাখার জন্য এই সুপারিশ করা হয়েছে। আইন করে এটার স্থায়ী ভিত্তি দেওয়া হবে; যাতে এ আইনটির অপপ্রয়োগ না ঘটে। কারণ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটা সবচেয়ে বেশি জালিয়াতের নির্বাচন ছিল।

এর জন্য স্পেশাল একটা কমিশন করে জালিয়াতির একটা বিচার হওয়াও উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি। কারণ অন্যায় করে কেউ পার পেলে অন্যায়কারীকে অন্যায় করতে উৎসাহিত হয়। আর ইসিকে দায়বদ্ধতা করার জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করা যায় বলেও মন্তব্য করেন এই নির্বাচন বিশেষজ্ঞ।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com