সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪১ অপরাহ্ন

ক্রসফায়ারে নিহতদের ৪ জন ছিলেন ডিবি হেফাজতে

  • সময়: সোমবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২৫, ১০.৪৬ এএম
  • ৪ জন

গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস হামলার ঘটনায় সন্দেহভাজন আটজনকে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়েছিল। এই আটজনের মধ্যে চারজন আগে থেকেই ডিবিতে গুম অবস্থায় ছিলেন। ডিবি থেকে নিয়েই তাদের ক্রসফায়ারে হত্যা করা হয়। এই ক্রসফায়ারকেই ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে চালিয়েছিল পুলিশ। ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস বন্দুক হামলা হয়।

ক্রসফায়ারে হত্যার শিকার তামিম চৌধুরীকে পুলিশ মাস্টারমাইন্ড হিসেবে দেখায়। পরে এই আটজনকে নির্জন স্থানে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করার মাধ্যমে হলি আর্টিজান হামলার নেপথ্যের কুশীলবদের সব পদচিহ্ন মুছে ফেলা হয়েছিল। এছাড়া অন্য অভিযুক্ত দুজনের স্ত্রীকে গুম রেখে তাদের স্বামীদের ধরার জঘন্য কৌশলও করেছিল সিটিটিসি।

পুলিশের তথাকথিত ক্রসফায়ারে নিহতদের মধ্যে হলি আর্টিজান হামলার কথিত মাস্টারমাইন্ড তামিম চৌধুরীর ডান হাত বলে পরিচিত নুরুল ইসলাম ওরফে মারজান (২৩), মো. বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট (৩২), মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান (৩২) এবং রায়হানুল কবির রায়হান ওরফে তারেক (২০) আগে থেকেই ডিবিতে বন্দি ছিলেন। তাদের গুম করে অকথ্য নির্যাতনের পর নির্জন স্থানে নিয়ে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ সাজিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।

এদের মধ্যে রায়হানুল কবির রায়হান ওরফে তারেক (২০)-কে রাজধানীর কল্যাণপুরে আলোচিত জাহাজবাড়ীতে নিয়ে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করা হয়েছিল। সে সময় ডিবিতে গুম থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী আমার দেশকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

২০১৬ সালের ১ জুলাই গুলশানের ৭৯নং রোডের হলি আর্টিজান বেকারিতে নৃশংস ম্যাসাকারে ২০ জন দেশি-বিদেশি জিম্মি, দুজন পুলিশ এবং পাঁচজন কথিত অস্ত্রধারী ইসলামি জঙ্গি নিহত হয়। মামলার অভিযোগপত্রে জঙ্গিবাদের অভিযোগে পুলিশ ২১ জনকে আসামি করলেও তার মধ্যে আটজন পরে কথিত ক্রসফায়ারে পর্যায়ক্রমে নিহত হন। জীবিত ৭ আসামিকে ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর মৃত্যুদণ্ড দিলেও হাইকোর্ট ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর সব আসামির সাজা কমিয়ে তাদের আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করে।

ডিবি থেকে নিয়ে বেড়িবাঁধে ক্রসফায়ার

২০১৭ সালের ৭ জানুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারজান ও সাদ্দাম হোসেন নিহত হন। সাদ্দাম অবশ্য হলি আর্টিজান মামলায় আসামি নন। মারজানের সঙ্গেই সাদ্দাম দীর্ঘদিন ধরে ডিবিতে গুম ছিলেন বলে একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন।

এই জোড়া খুনের ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিকেল কলেজ সূত্রে তখন বলা হয়েছিল, নিহতদের একজনের মাথায় ও বুকে গুলি লেগেছে এবং আরেকজনের শুধু বুকে গুলি লেগেছে। অথচ সিটি ইউনিটের তখনকার উপকমিশনার (ডিসি) মহিবুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘রাত আড়াইটার দিকে বেড়িবাঁধে মোটরসাইকেলে করে দুই যুবক যাচ্ছিল। তাদের দেখে সন্দেহ হলে থামতে বলে পুলিশ। তারা মোটরসাইকেল না থামিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ২টি গ্রেনেড ছোড়ে। পুলিশও পাল্টা গুলি ছোড়ে। এ সময় তারা মাটিতে পড়ে যায়।

মারজান-সাদ্দামের ছোড়া ‘গ্রেনেডে’ পুলিশের কিছুই হয়নি সেদিন! অথচ বেড়িবাঁধ এলাকায় অন্ধকার রাতে পুলিশের ‘লক্ষ্যভেদী’ মাত্র তিনটি গুলিতে দুজন নিহত হয়েছিলÑ এমন দুর্বল দৃশ্যপট সৃষ্টি করেছিলেন সিটিটিসি কর্মকর্তা মহিবুল ইসলাম ও তার দলবল। বিচারবহির্ভূত এই হত্যাকাণ্ডের পর তখনকার সিটিপ্রধান মনিরুল ইসলাম (বর্তমানে পলাতক) বলেছিলেন, গুলশান হামলার পর থেকে মারজানকে পুলিশ খুঁজছিল। মারজান যখন ডিবিতে গুম অবস্থায় ছিলেন, একই সময় তার বাবা নিজাম উদ্দিনকেও গুম রাখা হয়েছিল সেখানে।

আমার দেশকে মারজানের বাবা ৪ জানুয়ারি বলেন, ‘আমাকে তিন মাস ডিবিতে গুম রাখা হয়েছিল। আমাদের কয়েকজনকে একটা সেলের মতো জায়গায় রেখেছিল ওরা। সেলের উল্টোদিকে অপর একটা সেলে তিনজন নারীকে একদিন দেখেছিলাম। তার মধ্যে আমার ছেলে মারজানের স্ত্রীও ছিলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার বউকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। সে তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিল। ২৯ দিন চিকিৎসার পর ডিবিতে আনে। আট দিন রিমান্ডে নেয় তাকে। আমার সেলের উল্টো দিকেই তাকে রেখেছিল। ওইখানে তিনজন নারী ছিল।’

‘আপনি ডিবিতে আপনার ছেলেকে দেখেছিলেন?’ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সেলেই কয়েকজন আলেম এবং হাফেজ গুম অবস্থায় ছিলেন। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জন্য অন্য রুমে নিয়ে নির্যাতন করত পুলিশ। স্বীকারোক্তি না দিলে তখন তাদের সামনে মারজানকে নিয়ে আসত। বলত স্বীকার না করলে ওর (মারজান) মতো অবস্থা হবে। এভাবে তাদের ভয় দেখাত। ওরা আহত অবস্থায় রুমে ফিরে এসে মারজানের অবস্থা আমাকে জানাত। তারা বলত, ‘আপনার ছেলে তো এখানে আছে। আমাদের দেখাইসে মারজানকে।’ ওইসব লোকদের সবার পুরো নাম আমার মনে নাই। একজনের নাম মিজান, একজনের নাম হারুনুর রশীদ।

মারজানের বাবা নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার ছেলে টিউশনি করে চলত। লালবাগের বাসা থেকে টিউশনি করতে বের হলে ২০১৬ সালের ২২ জুন মারজানকে রাস্তা থেকেই তুলে নিয়ে যায় সিটিটিসির সদস্যরা। এরপর থেকেই তাকে গুম রাখা হয়েছিল।’ মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তির বরাত দিয়ে আমার দেশকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মারজানের বাবা।

মারজানকে ডিবিতে গুম অবস্থায় কাছে থেকে দেখেছেন গাজীপুরের কাপাসিয়ার শেখ মো. সেলিম হোসাইন এবং হলি আর্টিজান মামলার আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলম রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধীও।

শেখ মো. সেলিম হোসাইন নেত্রনিউজের ‘আয়নাঘর’ এবং আমার দেশ-এর ‘ডিবি থেকে নিয়ে ৯ তরুণ খুন’-সংক্রান্ত সাড়া জাগানো প্রতিবেদনের অন্যতম প্রধান হুইসেল ব্লোয়ার। তিনি আমার দেশকে বলেন, ‘মারজানকে আমি একদম কাছে থেকে ডিবিতে গুম অবস্থায় দেখেছি।’ মারজান যখন ডিবিতে গুম ছিলেন, একই সময় সেখানে হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম অভিযুক্ত মো. বাশারুজ্জামান ওরফে চকলেট (৩২) এবং মিজানুর রহমান ওরফে ছোট মিজান (৩২)-কেও গুম রাখা হয়েছিল।

সম্প্রতি কারামুক্ত এক ব্যক্তি নিজের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে আমার দেশকে জানিয়েছেন, বাশারুজ্জামান চকলেট এবং ছোট মিজানকে ডিবিতে গুম অবস্থায় কাছে থেকে দেখেছেন একই মামলায় আমৃত্যু সাজাপ্রাপ্ত আসামি জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী। ‘কারাগারের ভেতর রাজীব গান্ধী আমাকে বাশারুজ্জামান এবং ছোট মিজানকে ডিবিতে গুম অবস্থায় দেখা ও কথা বলার তথ্য আমাকে জানিয়েছেন,’ বলেন কারামুক্ত সেই ব্যক্তি।

অথচ পুলিশের দাবি, ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে একটি জঙ্গি আস্তানায় পুলিশের অভিযান চালানোর সময় বাশারুজ্জামান ও ছোট মিজান নিহত হয়। তথাকথিত সেই ক্রসফায়ারের ঘটনা বিশ্বাসযোগ্য করতে সেই সময় বেশ নাটকীয় এক পরিবেশের অবতারণা করেছিলেন সিটিটিসির তখনকার প্রধান মনিরুল ইসলাম।

তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে এ দুই জঙ্গির নিহত হওয়ার বিষয়টি জানা গেছে। নব্য জেএমবির শীর্ষ নেতা তামিমের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিল বাশারুজ্জামান। সংগঠনের অর্থের বিষয়গুলো সে দেখত। ছোট মিজান অস্ত্র সরবরাহে ভূমিকা রাখে।’

তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের নাটক জমাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তখনকার পুলিশ সুপার এটিএম মুজাহেদুল ইসলাম গণমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘অভিযানের পর পরিচয় শনাক্তের জন্য নিহত জঙ্গিদের ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করে রাখা হয়েছিল। এরপর তা সিআইডিতে পাঠানো হয়।’ অথচ বাশার ও ছোট মিজানকে দীর্ঘদিন ডিবিতে গুম রেখে তাদের সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের পরই বন্দুকযুদ্ধ সাজিয়েছিল সিটিটিসি।

ডিবির গুমঘর থেকে রাজধানীর কল্যাণপুরের জাহাজবাড়ীতে নিয়ে যে ৯ তরুণ নিয়ে হত্যা করা হয়েছিল, তাদের মধ্যে ছিলেন সাতক্ষীরার তরুণ রায়হানুল কবির রায়হান ওরফে তারেক (২০) ছিলেন। এ নিয়ে আমার দেশ পত্রিকায় ২৩ ডিসেম্বর এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।

স্ত্রীদের গুম রেখে স্বামীদের সন্ধানে চাপ

ক্রসফায়ার বা পুলিশের অভিযানে রহস্যজনকভাবে নিহত হন হলি আর্টিজান মামলার অপর দুই সন্দেহভাজন আসামি তানভীর কাদেরী (৪০) এবং মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম (৩৭)। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে যে, তাদের ধরতে তাদের স্ত্রীদের গুম করেছিল সিটিটিসি। একই সময় গুম করে রাখা হয়েছিল মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তিকেও।

লালবাগের একটি বাসা থেকে তথাকথিত গোলাগুলির মাধ্যমে ধরে নিয়ে মারজানের স্ত্রীসহ তিনজন নারীকে সিটিটিসিতে নিয়ে গুম রাখা হয়েছিল। লালবাগের বাসায় তথাকথিত যে গোলাগুলির দাবি করেছিল পুলিশ করেছিল, তাতে পায়ে গুলিতে আহত হয়েছিলেন মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তি। সে সময় তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন।

পরে মারজানের স্ত্রীকে আট দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠায়। কারাগারেই তিনি এক কন্যাসন্তান জন্ম দেন তিনি। সেই শিশুটি কারাগারের ভেতরেই বড় হয়ে ওঠে। জামিন পেয়ে মারজানের স্ত্রী এখন তার গ্রামের বাড়িতে বসবাস করছেন।

এদিকে, মারজানের স্ত্রী আফরিন ওরফে প্রিয়তির সঙ্গেই তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধের গল্প ছড়িয়ে গুম করা হয়েছিল মেজর (অব.) মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলামের স্ত্রীকেও। তিনিও জামিন পেয়েছেন। তবে তাদের হদিস মেলেনি।

ডিবিতে বন্দি গাজীপুরের কাপাসিয়ার শেখ মো. সেলিম হোসাইন আমার দেশকে বলেন, ‘ডিবিতে সকাল-বিকাল বন্দিদের নাম ধরে ডাকা হতো। তখন মেজর জাহিদুলের স্ত্রী জেবুন্নাহার শীলাকে তার নাম ধরে ডাকতে দেখেছি।’ ২০১৬ সালের ২৭ আগস্ট ঢাকার রূপনগর থানাধীন রূপনগর আবাসিক এলাকার রোড নম্বর ৩৩, বাসা নম্বর ১৫-এর সামনে পাকা রাস্তার ওপর তথাকথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানে মেজর জাহিদুল নিহত হন।

এদিকে, ২০১৬ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পুরান ঢাকার লালবাগ রোডের ২০৯/৫ নম্বর বাড়িতে সিটিটিসির অভিযানকালে নিহত হন হলি আর্টিজান মামলার অন্যতম সন্দেহভাজন আসামি তানভীর কাদেরী। পুলিশ দাবি করেছিল, তিনি নিজের গলায় ছুরি চালিয়ে আত্মহত্যা করেন।

নেপথ্যের কুশীলবের সন্ধান মেলেনি

হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত সরোয়ার জাহান (৩৫) ২০১৪ সালের ৮ অক্টোবর আশুলিয়ার বসুন্ধরার টেক এলাকায় র‍্যাবের কথিত অভিযানে নিহত হন। র‍্যাবের দাবি ছিল, নিজ বসতঘরের পঞ্চম তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

র‍্যাবের তখনকার মহাপরিচালক (বর্তমানে পলাতক) বেনজীর আহমেদ বলেছিলেন, গুলশানের হলি আর্টিজানসহ সারা দেশে যে ২২টি জঙ্গি হামলা হয়েছে, তার নেতৃত্ব দিয়েছেন সারোয়ার জাহান। তিনি দাবি করেছিলেন, এই সারোয়ার জাহানই তথাকথিত নব্য জেএমবির প্রধান (আমির)। অথচ সিটিটিসির দাবি ছিল, তামিম চৌধুরী ছিলেন এসবের মূল কারিগর।

হলি আর্টিজান হামলায় মাস্টারমাইন্ড হিসেবে পরিচিত তামিম আহমেদ চৌধুরী (৩৩) ২০১৬ সালের ১৭ আগস্ট নারায়ণগঞ্জের পাইকপাড়া এলাকায় পুলিশের তথাকথিত এক রহস্যজনক ক্রসফায়ারে নিহত হন।

গুম রেখে, স্ত্রীদের জিম্মি করে স্বামীদের সন্ধান আদায়ের পর রহস্যজনক অভিযান চালিয়ে কথিত ক্রসফায়ারে হত্যার মাধ্যমে আলোচিত হলি আর্টিজান মামলার পেছনের কুশীলবদের সন্ধান মুছে ফেলা হয়েছে। পুলিশের কথিত তদন্তে ভারত থেকে একে-২২ রাইফেল, গ্রেনেড ও অর্থের লেনদেনের কথা বলা হলেও এসবের জোগানদাতাদের পরিচয় আর মেলেনি।

এ বিষয়ে হংকংভিত্তিক এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা এবং যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং ইন্টারন্যাশনাল স্কলার মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান আমার দেশকে বলেন, ‘বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে রক্তাক্ত অপরাধগুলোর মধ্যে হলি আর্টিজান বেকারিতে সংঘটিত ঘটনাটি অন্যতম।

ভয়াবহ এই অপরাধের উৎস, পরিকল্পনাকারী, বিস্ফোরক ও অস্ত্রের জোগানদাতা সম্পর্কে প্রমাণনির্ভর তথ্য আদালতের মাধ্যমে জাতির সামনে উপস্থাপন করার পরিবর্তে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো গুমের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। পাশাপাশি কথিত অভিযুক্তদের স্ত্রীদের জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করা ও আটকদের ক্রসফায়ারের নামে বিনা বিচারে হত্যার প্রকৃত উদ্দেশ্য নিশ্চয়ই ন্যায়বিচারকে সমুন্নত করা নয়।’

তিনি বলেন, ‘কথিত অভিযুক্ত হিসেবে আটকদের ক্রসফায়ারের নামে হত্যার মধ্য দিয়ে প্রকৃত সত্য লুকানো ও আসল অপরাধীদের আড়ালে রাখার দুরভিসন্ধি থাকতে পারে। তদন্তপ্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কর্মকার্তাদের সমুদয় কর্মকাণ্ড পুনরায় বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে তদন্ত করা উচিত।’

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024
Developed BY www.budnews24.com