আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের বর্ণিল এক অধ্যায় শেষ করলেন তামিম ইকবাল। শুধু বাংলাদেশের ক্রিকেটকেই নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের তিন সংস্করণকে ঋণী করে গেলেন দেশের অন্যতম সফল এ ব্যাটার। রেকর্ডবুকে স্বর্ণাক্ষরে লিখেছেন নিজের নাম। আলো ঝলমলে ক্যারিয়ারে অনেক রেকর্ডই নিজের করে নিয়েছেন।
সাবেক এ টাইগার কাপ্তান হয়েছেন বিশ্বরেকর্ডের মালিকও। লাল-সবুজের জার্সিতে ক্রিকেটে রেখেছেন আরও অনেক অবদান। দেশসেরা ওপেনারের সেসব রেকর্ড-অর্জনে এবার আলোকপাত করা যাক-
* একদিনের ক্রিকেটে এক ভেন্যুতে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক তামিম। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ৮৭টি ওয়ানডে খেলে ২ হাজার ৮৫৩ রান সংগ্রহ করে গড়েছেন বিশ্বরেকর্ড। তার পরেই রয়েছেন মুশফিকুর রহিম (২ হাজার ৬৮৪) ও সাকিব আল হাসান (২ হাজার ৬৫৬)।
* খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ইমরুল কায়েসের সঙ্গে ৩১২ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপের গল্প লিখে ছিলেন তামিম। দেশের টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় ইনিংসে এটিই সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি। টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটির বিশ্বরেকর্ডও এটি।
* ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটে শতক হাঁকানো বাংলাদেশের প্রথম এবং এখন পর্যন্ত একমাত্র ব্যাটার তামিম। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টির বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি আদায় করে নতুন এই মাইলফলক গড়েন।
* আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ১৫ হাজার রান সংগ্রহ করেন তামিম। তবে গত আগস্টে তার এই রেকর্ডে অংশীদার হয়েছেন মুশফিকুর রহিম। পরে তামিমকে (১৫ হাজার ২৪৯ রান) ছাড়িয়ে যান মুশফিক (১৫ হাজার ৩০০ রান)।
* তিন ফরম্যাটে তামিম সর্বাধিক ২৫টি সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন। বাংলাদেশের অন্য কোনো ব্যাটার ২০টির অধিক শতকের দেখা পাননি।
* আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তামিমের অর্ধ-শতক ৯৪টি আর সেঞ্চুরি ২৫টি। তার পঞ্চাশ স্পর্শ করা ইনিংস সব মিলিয়ে ১১৯টি। দেশের ব্যাটারদের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। দুইয়ে রয়েছেন সাকিব আল হাসান (১১৪টি)।
* টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি মিলিয়ে কমপক্ষে ৫০০ রান করা দেশের ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ গড়ের মালিক তামিম- ৩৫.৪১।
* একদিনের ক্রিকেটে ৮ হাজার রান করা দেশের একমাত্র ব্যাটার তামিম। ২৪৩ ম্যাচ খেলে ৮ হাজার ৩৫৭ রান নিয়ে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারকে গুডবাই বলে দিলেন। দুইয়ে রয়েছেন মুশফিক- ৭ হাজার ৭৯৩ রান।
* ওয়ানডে ক্রিকেটে ছক্কার সেঞ্চুরি হাঁকানো দেশের প্রথম ব্যাটার তামিম। ১০৩ ছক্কা মেরে তবেই থামলেন। তাকে ছাড়িয়ে এখন ১০৭ ছক্কার মালিক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তিন ফরম্যাটেও তামিম (১৮৮) থেকে বেশি ছক্কা পেয়েছেন মাহমুদউল্লাহ (২০৮টি)।
* ওয়ানডেতে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে সর্ব কণিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান তামিম। ২০০৮ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছিলেন ১৯ বছর ২ দিন বয়সে।
* ওডিআইতে টানা পাঁচ ম্যাচে পঞ্চাশ স্পর্শ ইনিংস খেলা দেশের প্রথম ব্যাটার তামিম। পরে তার এই রেকর্ডে ভাগ বসান সাকিব আল হাসান।
* একদিনের ক্রিকেটে দেশের জার্সিতে একাধিক দেড়শ স্পর্শ করা ইনিংস খেলা একমাত্র ব্যাটার তামিম। ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খেলেছিলেন ১৫৪ রানে দাপুটে এক ইনিংস। এই ইনিংসটি প্রায় ১১ বছর ছিল বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড। ২০২০ সালে ১৫৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলে নিজের রেকর্ড ভেঙে গড়েছিলেন নয়া রেকর্ড। এক ম্যাচ পর ১৭৬ রানের অনন্য ইনিংস খেলে রেকর্ডটি ভেঙে দেন লিটন দাস।
* টেস্টেও একসময় দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল তামিমের। ২০১৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন। পরে ২১৭ রানের ইনিংস খেলে তাকে টপকে যান সাকিব। পরে ২১৯ রানের হার না মানা দুরন্ত এক ইনিংস খেলেন মুশফিক।
* লাল বলের ক্রিকেটে টানা পাঁচ ইনিংসে হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া দেশের একমাত্র ব্যাটার তামিম।
* ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ২২ বার ম্যাচসেরা হন তামিম। বাংলাদেশের হয়ে তার চেয়ে বেশি পুরস্কার জেতেন কেবল সাকিব (৪৫ বার)।
* তামিম সিরিজ সেরার পুরস্কার জিতেন ৭ বার। এ লিস্টেও তাকে ছাড়িয়ে গেছেন শুধু সাকিব (১৭ বার)।
* আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০ হাজারের অধিক বল মোকাবিলা করেছেন তামিম। আলো ঝলমলে ক্যারিয়ারে ৩৯১ ম্যাচ খেলে ২০ হাজার ৯৯৭ বল খেলেছেন তিনি। মুশফিকুর রহিম তাকে টপকে খেলেছেন ২৩ হাজার ৪৭০ বল।
* দেশের হয়ে শূন্যের অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডের মালিকও তামিম। পুরো ক্যারিয়ারে ৩৬ বার রানের খাতা না খুলেই বিদায় নেন ক্রিজ থেকে। মাশরাফি বিন মুর্তজা ৩৩ বার শূন্য রানে ফিরে রয়েছেন তালিকার দ্বিতীয় স্থানে।
* বাংলাদেশকে ৩৭ ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দিয়েছেন তামিম। জয় উপহার দিয়েছেন ২১ ম্যাচে। ফল নির্ধারিত হয়নি ২ ম্যাচে। তার সাফল্যের হার ৬০%। দেশের হয়ে কমপক্ষে ৫ ওয়ানডে খেলা অধিনায়কদের মধ্যে সাফল্যের হারে তামিমই সবার ওপরে।
* বাংলাদেশের হয়ে তিন সংস্করণ মিলিয়ে ৩৯১ ম্যাচে খেলে তামিম না বলে দিলেন আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারকে। তার চেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মুশফিক (৪৬৮), সাকিব (৪৪৭) ও মাহমুদউল্লাহ (৪২৯)।