মঙ্গলবার, ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৭ পূর্বাহ্ন

মোদির ‘রেসকিউ মিশন হাসিনা’

  • সময়: রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০.৫০ এএম
  • ৭ জন

ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সরাসরি তত্ত্বাবধানে ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যান। শেখ হাসিনাকে নিয়ে পালানো বিমানটি কলকাতার আকাশে পৌঁছালে সেখানকার হাসিমারা ঘাঁটি থেকে উড়ে আসা ফ্রান্সের তৈরি ভারতের দুটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান একে এসকর্ট করে দিল্লি নিয়ে যায়। ঢাকা থেকে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার ও বিমানে পালানোর এ ঘটনার নামকরণ করা হয় ‘শেখ হাসিনা রেসকিউ মিশন’।

সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে এ খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আমার দেশ-এর অনুসন্ধানে জানা গেছে, শেখ হাসিনাকে নিয়ে পালানো বিমানটিতে ছিলেন পাঁচজন পাইলট। সম্ভব হলে দিল্লি থেকে লন্ডনের হিথ্রো যাওয়ারও একটি পরিকল্পনা ছিল। এ জন্যই বিমানে অতিরিক্ত পাইলট নেওয়া হয়।

শেখ হাসিনা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ৪ আগস্ট স্যাটেলাইট টেলিফোনে দুই দফা কথা বলেছেন। এরপর ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে কয়েক দফা তার ফোনালাপ হয়।

ভারতের সেনাপ্রধান বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে কথা বলেন ৫ আগস্ট দুপুরের আগে।

অনুসন্ধানে আরও জানা গেছে, শেখ হাসিনাকে নিয়ে পালানো বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সি-১৩০-জে বিমানটি ত্রিপুরার আগরতলায় যায়নি। বিমানটি কলকাতার ‘এফআইআর’ (ফ্লাইট ইনফরমেশন রিজিয়ন) ব্যবহার করে সাতক্ষীরা দিয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের ক্রসিং পয়েন্ট বিমাক (BEMAK) পার হয়ে কলকাতার আকাশে যায়। সেখান থেকে সরাসরি দিল্লি। শেখ হাসিনার সঙ্গে কূটনৈতিক পাসপোর্ট ছিল এবং শেখ রেহানার ছিল ব্রিটিশ পাসপোর্ট।

হেলিকপ্টার এমআই-১৭ ও বিমানের (সি-১৩০-জে) ককপিট থেকে ঢাকা গ্রাউন্ড কন্ট্রোল, ঢাকা টাওয়ার, ঢাকা এরিয়া কন্ট্রোল ও কলকাতার সঙ্গে পাইলটের যে কথোপকথন হয়, তার ট্রান্সক্রিপট থেকে শেখ হাসিনা পালানোর নাটকীয় বিবরণ পাওয়া গেছে।

৩ আগস্ট সেনাবাহিনীর মনোভাব জানার পরই শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন। তার বিশ্বস্ত অফিসাররা ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সঙ্গে মিলে অতি গোপনে ‘পলায়ন পরিকল্পনা’ তৈরি করেন বলে নিরাপত্তা সূত্র জানায়।

সামরিক বিমানে ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে চাঞ্চল্য : এর আগে গণভবনের পেছনে বাণিজ্যমেলার মাঠ থেকে তিনি হেলিকপ্টারে কুর্মিটোলা ঘাঁটিতে যান। সেখানে অপেক্ষমাণ সামরিক বিমানে উঠেই শেখ হাসিনা জানান, তার ভ্যানিটি ব্যাগ গাড়িতে ফেলে এসেছেন। এটি পাওয়া তার জন্য খুব জরুরি। সঙ্গে থাকা এসএসএফের সহকারী পরিচালক ফ্লাইট লে. নাজমুন নাহার তৎক্ষণাৎ ফিরে গিয়ে গাড়িতে ফেলে আসা ভ্যানিটি ব্যাগটি উদ্ধার করে দৌড়ে সামরিক বিমানে ওঠেন এবং শেখ হাসিনার হাতে দেন। এরই মধ্যে বিমানের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। তিনি আর বিমান থেকে নামতে পারেননি।

মোদির সঙ্গে কথা : ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী গুলিবর্ষণ করবে নাÑ এ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রীকে সেনাপ্রধান জানিয়ে দেওয়ার পর ৪ আগস্ট শেখ হাসিনা ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ফোন করেন স্যাটেলাইট ফোনে। তিনি মোদির সহযোগিতা চান এবং একটি ভারতীয় বিমান পাঠিয়ে তাকে নিরাপদে নেওয়ার অনুরোধ করেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী তৎক্ষণাৎ তাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। তবে এর কিছুক্ষণ পর আবার শেখ হাসিনাকে ফোন করেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি তাকে জানান, আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির কারণে ভারতীয় বিমান পাঠানো যাবে না। শেখ হাসিনা যাতে বাংলাদেশ বিমানেই নিরাপদে ভারতীয় সীমান্ত পার হতে পারেন, সে ব্যবস্থা তিনি করছেন। এরপরই শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত কর্মকর্তারা (লে. জেনারেল মুজিব, মেজর জেনারেল নাজমুল এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল অব. তারেক সিদ্দিকী) ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সলাপরামর্শ করে পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেন। দোভালের সঙ্গে ফোনালাপে শেখ হাসিনা দিল্লিকে ঢাকায় হস্তক্ষেপ করতে বলেছিলেন। তিনি বাংলাদেশ সামরিক বাহিনীর ওপর চাপ সৃষ্টি এবং সরাসরি অ্যাটাকেরও কথাও বলেন। তবে ভারতীয় পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই মুহূর্তে তারা শেখ হাসিনাকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন, যা ‘রেসকিউ’ মিশন হাসিনা নাম দেওয়া হয়।

ভারতে পালানো এবং বলপ্রয়োগ করে টিকে থাকা এই ‘দুটো অপশন’ নিয়ে সিরিয়াস ছিলেন শেখ হাসিনা ৩ থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সামরিক বাহিনী এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থার ওপর সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করেও তিনি যখন বুঝতে পারেন বলপ্রয়োগ করে ক্ষমতায় টিকে থাকা যাবে না, তখন পালানোই হয় তার একমাত্র বিকল্প।

হেলিকপ্টারে রেসকিউ অভিযান : শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে নিয়ে পালানোর ঘটনা রেসকিউ মিশন হিসেবে পরিচালিত হয়। একটি চৌকষ স্পেশাল ফ্লাইং ইউনিট (এসএফইউ) এই উদ্ধার অভিযান চালায়। হেলিকপ্টারের (MI-17) কলসাইন হচ্ছে লিওপার্ড ৮০৩ (LeoPard-803)। এই হেলিকপ্টারটি বিমানবাহিনীর ৩১ নম্বর স্কোয়াড্রনের অংশ।

হেলিকপ্টারটি কুর্মিটোলা ঘাঁটি থেকে উড়ে গিয়ে গণভবনসংলগ্ন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার মাঠে অবতরণ করে। বাণিজ্যমেলা মাঠে অবতরণের পর গণভবন থেকে আগত শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা হেলিকপ্টারটিতে আরোহণ করেন। হেলিকপ্টারটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর রানওয়ের পশ্চিমে অবস্থিত কুর্মিটোলা ঘাঁটি অবতরণের মাধ্যমে হেলিকপ্টারে রেসকিউ মিশনের সমাপ্তি ঘটে। ওই সময় তেজগাঁও বিমানবন্দরে কর্তব্যরত উইং কমান্ডার কানিজ ফাতেমা স্বপ্না রেসকিউ মিশনের অধীনে পরিচালিত হেলিকপ্টার উড্ডয়নের বিষয়টি বেতারে ঢাকা ট্রাফিক কন্ট্রোলকে জানান। Leopard-803 কল সাইনসংবলিত হেলিকপ্টারটির স্কোয়াকিং ডিজিট ছিল ৪১৩৬ এবং উড্ডয়ন ও সার্বিক পরিচালনার (Command) দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন এয়ার কমডোর আব্বাস। ঘটনার এক দিন পর ৭ আগস্ট তাকে NDC কোর্সে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

সি-১৩০-জে বিমানটি আকাশে উড়ে বেলা ৩টা ১১ মিনিটে : শেখ হাসিনাকে নিয়ে পালানো বিমানটি (সি-১৩০-জে) তেজগাঁও কুর্মিটোলা এয়ারবেস থেকে বেলা ৩টা ১১ মিনিটে আকাশে উড়ে (আগের প্রতিবেদনে ১২টা ৪০ মিনিটে উল্লেখ করা হয়েছিল, যা সঠিক ছিল না)। বিমানটি ৩টা ৯ মিনিটে ‘পার্কিং বে’ থেকে ‘রানওয়ে’তে ট্যাক্সি করে (মাটিতে চলতে শুরু করে)। দুই মিনিটের মধ্যেই বিমানটি ‘এয়ার বর্ন’ হয় অর্থাৎ আকাশে উড়ে। হেলিকপ্টারে করে শেখ হাসিনা কুর্মিটোলায় নামার আগে থেকেই সি-১৩০-জে বিমানটির ইঞ্জিন অন করে উড্ডয়নের জন্য প্রস্তুত ছিল। শেখ হাসিনা ও তার সঙ্গীরা, এসএসএফ কর্মকর্তারা এবং হাসিনার ১৪টি স্যুটকেস ওঠামাত্রই বিমানটি চলতে থাকে। এ সময় শেখ হাসিনার ভ্যানিটি ব্যাগ নিয়ে আসা এসএসএফের লেডি কর্মকর্তা ফ্লাইট লে. নাজমুন নাহার ফ্লাইটে উঠলে তাকে রেখে দেওয়া হয়। বিমানটির কলসাইন হচ্ছে AJAX1431 এবং স্কোয়াক কোড ৪১৩১। এই কলসাইন ও স্কোয়াক কোড কলকাতা ট্রাফিক কন্ট্রোল ও রাফায়েল যুদ্ধ বিমানকে জানানো হয় আগেই। ঢাকা থেকে উড়ে বিমানটি সাতক্ষীরার বিমাক অতিক্রম করে বেলা ৩টা ৪২ মিনিটে। এর আট মিনিট পর ৩টা ৫০ মিনিটে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান।

আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বিমান নিয়ে পলায়ন : শেখ হাসিনাকে নিয়ে পালানো বিমানটি (সি-১৩০-জে) ছিল একটি ‘স্টেট এয়ারক্রাফট’। এটি ভারতের ডিসিএন (ডিপ্লোম্যাটিক ক্লিয়ারেন্স নম্বর) নিয়ে সে দেশে প্রবেশ করেছে। কিন্তু এ ব্যাপারে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছুই জানে না। সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছেও এর কোনো রেকর্ড নেই। বিমানটির কোনো ‘ফ্লাইট প্ল্যান’ সিভিল অ্যাভিয়েশনে জমা দেওয়া হয়নি। বিমানটির ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স হয়নি অর্থাৎ সিভিল অ্যাভিয়েশনে বিমানটির জিডি (জেনারেল ডিক্লারেশন) দেওয়া হয়নি। তেমনি বিমানটিতে যারা ছিলেন, তাদেরও কোনো ইমিগ্রেশন হয়নি। আন্তর্জাতিক আইনকানুন ও নিয়ম লঙ্ঘন করে বিমানটি শেখ হাসিনা ও তার সঙ্গীদের নিয়ে ভারতে গেছে এবং আবার সামরিক কর্মকর্তাদের নিয়ে বিমানটি বাংলাদেশে ফিরে এসেছে। এ জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যেমন অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা হতে পারে, তেমনি যেসব কর্মকর্তা ও ব্যক্তিরা এই বিমানে করে গেছেন এবং ফিরে এসেছেনÑ তাদের নামেও অবৈধ অনুপ্রবেশের মামলা হতে পারে। কিন্তু ঘটনার চার মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলা হয়নি।

স্টেট এয়ারক্রাফট ও কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট : যেসব বিমানে সাধারণ যাত্রী ভিআইপি ও ভিভিআইপি চলাচল করে, সেগুলো কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট। কোনো ভিভিআইপি এ ধরনের এয়ারক্রাফটে গেলে সেটা বিশেষ ফ্লাইট বা ভিভিআইপি ফ্লাইট নামে অভিহিত হয়।

আর স্টেট এয়ারক্রাফট হলো সামরিক বাহিনী, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, কাস্টমস তথা নিরাপত্তা বাহিনীর ব্যবহৃত এয়ারক্রাফট বোঝায়। বিশেষ কারণে এক ধরনের স্টেট এয়ারক্রাফট দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে হলে একটি বিশেষ ছাড়পত্রের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে, যাকে ডিসিএন বলা হয়।

ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (ICAO) নিয়ম অনুযায়ী এগুলো পরিচালিত হয়। অর্থাৎ স্টেট এয়ারক্রাফট মুভ করার ক্ষেত্রে ডিসিএন লাগবে, ফ্লাইট প্ল্যান লাগবে, অনুমোদিত এটিএস (এয়ার ট্রাফিক সার্ভিসেস রুট) লাগবে অর্থাৎ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত হতে হবে, ইমিগ্রেশন ক্লিয়ারেন্স লাগবে।

নিয়ম অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে নিয়ে পালানো স্টেট এয়ারক্রাফট ডিসিএন ছাড়া ভারতে যেতে পারে না। কারণ ডিসিএন ছাড়া কোনো বিমান অন্য দেশে ঢুকলে সেটিকে ‘অ্যাক্ট অব ওয়ার’ কিংবা ‘হোস্টালিটি’ হিসেবে গণ্য করা হয়। অর্থাৎ ‘যুদ্ধবিমান’ কিংবা ‘শত্রু বিমান।’ আন্তর্জাতিক কনভেনশন অনুযায়ী জিরো লাইনের পর পাঁচ মাইল অতিক্রম করলেই সেটি অ্যাক্ট অব ওয়ার কিংবা হোস্টাইল বিমান হিসেবে চিহ্নিত হয়ে যায়। এ কারণে শেখ হাসিনার বিমানটি ডিসিএন নিয়ে ভারতে ঢুকেছে।

ডিসিএন সম্পর্কে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কিছু জানে না : ডিসিএন নেওয়ার নিয়ম হচ্ছে কোনো দেশের স্টেট এয়ারক্রাফট অন্য দেশে গেলে সে দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানাবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার ক্লিয়ারেন্স নিয়ে ডিসিএন দেবে। শেখ হাসিনার স্টেট এয়ারক্রাফট ভারতের কাছ থেকে ডিসিএন পেলেও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সম্পর্কে কিছুই জানে না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ডিসিএনের জন্য কোনো অনুরোধ জানায়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের কাছে আমরা এ সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলাম। আমাদের কূটনৈতিক রিপোর্টার বশীর আহমেদকে মুখপাত্র জানান, এ বিষয়ে আমরা অবহিত নই।

তাহলে প্রশ্ন দাঁড়ায় শেখ হাসিনার বিমানটি কীভাবে ডিসিএন পেল? ঢাকায় আসা ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি বলে গেছেন, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর অনুরোধে তারা বিমানটি ভারতে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ডিসিএন আনার ব্যাপারে ঢাকার ভারতীয় দূতাবাস কাজ করেছে। কূটনৈতিক মহল থেকে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, এভাবে ডিসিএন আনাও আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন। এটা শুধু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেই ইস্যু হয়ে থাকে।

ফ্লাইট প্ল্যান ছাড়াই বিমানটি গিয়েছে : স্টেট এয়ারক্রাফট কিংবা কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফট চলাচলের আগে সিভিল অ্যাভিয়েশন কর্তৃপক্ষের কাছে ফ্লাইট প্ল্যান জমা দিতে হয় এবং এটিএস (এয়ার ট্রাফিক সার্ভিসেস রুট) অনুমোদন করাতে হয়। ইন্টারন্যাশনাল সিভিল অ্যাভিয়েশন অর্গানাইজেশনের (ICAO) জ্যাপশন চার্ট (JEPPESEN CHART) হয় প্রতি মাসে। এটা মুদ্রিত থাকে। এর বাইরে কোনো ফ্লাইট প্ল্যান হবে না। ফ্লাইট প্ল্যানে ওই বিমানের যাত্রীসংখ্যা কিংবা কার্গো বিমান হলে পণ্যের তথ্য থাকে। কমার্শিয়াল ফ্লাইটের মতো স্টেট এয়ারক্রাফটের ক্ষেত্রেও ফ্লাইট প্ল্যান জমা দিতে হয়। কিন্তু এ ধরনের কোনো প্ল্যান সিভিল অ্যাভিয়েশনে জমা দেওয়া হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ফ্লাইট প্ল্যান জমা না দেওয়ায় বিমানটি যাতে সিভিল অ্যাভিয়েশন কোনো বাধার সম্মুখীন না হয়, সে জন্য ৫ আগস্ট টাওয়ারে উপস্থিত ছিলেন এয়ার কমডোর এএফএম আতিকুজ্জামান বিএসপি, জিইউপি এনডিসি পিএসসি। তিনি সিভিল অ্যাভিয়েশন মেম্বার অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিং ছিলেন। তিনি নিজে এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলে উপস্থিত ছিলেন। ফ্লাইট প্ল্যান ছাড়াই শেখ হাসিনার বিমানটি বাংলাদেশ এফআইআর থেকে ভারতের কলকাতা এফআইআরে যেতে যাতে কোনো ধরনের বাধার সম্মুখীন না হয়। আমাদের অ্যাভিয়েশনবিষয়ক রিপোর্টার কবিতা সিভিল অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে কথা বলেছেন। সিভিল অ্যাভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মনজুর কবির ভূঁইয়া আমার দেশকে বলেন, আমি চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলাম না। এ বিষয়ে কিছু অবহিত নই। তখন সিভিল অ্যাভিয়েশন মেম্বার অপারেশন অ্যান্ড প্ল্যানিংয়ের দায়িত্বে থাকা এয়ার কমডোর আতিকুজ্জামান ইতোমধ্যেই বলেছেন, ওই ফ্লাইট সম্পর্কে তার কোনো ধারণাই ছিল না। তিনি তখন জেনেছেন এটি একটি ট্রেনিং ফ্লাইট। এই ফ্লাইটের ভেতরে কারা ছিলেন তিনি জানতেন না।

ট্রান্সপন্ডার ও এডিএসবি প্রসঙ্গ : শেখ হাসিনাকে নিয়ে পালানো বিমানটি কুর্মিটোলা বিমানবন্দর থেকে ট্রান্সপন্ডার ও এডিএসবি অফ করে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সীমান্ত অতিক্রম করেছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমানার ক্রসিং পয়েন্ট বিমাক পার হওয়ার ঠিক আগে বিমানটি ট্রান্সপন্ডার ও এডিএসবি অন করে কলকাতা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ করে। একই সঙ্গে ভারতীয় যুদ্ধবিমান রাফায়েলের রাডারেও শেখ হাসিনার বিমানটি ভিজিবল হয়। ফলে রাফায়েল এসকর্ট করে বিমানটিকে।

রাফায়েল যুদ্ধ বিমানের পাহারা যেভাবে : শেখ হাসিনাকে নিয়ে পালানো বিমানটি কখন আকাশে উড়বে, বিমানটির ‘কল সাইন’ ও ‘স্কোয়াকিং নম্বর’ কী, তা ভারতীয় কর্তৃপক্ষকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়। ঢাকা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল থেকে কলকাতা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে হটলাইন যোগাযোগ স্থাপন করে টাইম টু টাইম প্রয়োজনীয় তথ্য জানানো হয়। ঢাকা থেকে বিমানটি ‘টেক অফ’ করার সঙ্গে সঙ্গেই কলকাতাকে জানিয়ে দেওয়া হয়। তেমনি কলকাতা ট্রাফিক কন্ট্রোল যুদ্ধবিমান রাফায়েলের পাইলটকেও তা জানিয়ে দেয়। ফলে হাসিমারা এয়ারবেস থেকে যুদ্ধবিমান রাফায়েল আকাশে উড্ডয়ন করে (হাসিমারা এয়ারবেসটি ডোকলাম ভেলির কাছাকাছি দেড় শ কিলোমিটার দূরে। চীনকে মনিটর করার জন্য এই এয়ারবেস তৈরি হয়েছে এবং যুদ্ধবিমান রাফায়েল এখানে নিয়োজিত থাকে)। এ অবস্থায় যুদ্ধবিমান রাফায়েল পশ্চিমবঙ্গের আকাশে চক্বর দিতে দিতেই শেখ হাসিনার বিমানটি সাতক্ষীরা পার হয় এবং বিমানটির ‘ট্রান্সপন্ডার’ ও ‘এডিএসবি’ অন হয়। ফলে তৎক্ষণাৎ রাফায়েল যুদ্ধবিমান দুটি হাসিনার বিমানটিকে রাডারে দেখতে পায় এবং তাদের নজরদারিতে নিয়ে যায়। উভয় বিমানের পাইলটদের মধ্যে কথোপকথন হয় এবং রাফায়েলের পাহারায় শেখ হাসিনার বিমান পৌঁছে দিল্লির কাছে হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে। রাফায়েল বিমান দুটির কথোপকথনের বিষয় সম্পর্কে এনডিটিভির রিপোর্টে এসেছে।

নিরাপত্তা সূত্রের পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, শেখ হাসিনাকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে নিরাপদে দিল্লি পৌঁছাতেই যুদ্ধবিমান রাফায়েল দিয়ে এসকর্ট করার ব্যবস্থা করেছে। তা ছাড়া ভারতীয় নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ শেখ হাসিনার বিমানটির পাইলটদেরও পুরোপুরি আস্থায় নিতে পারেননি। পাইলটরা শেখ হাসিনার বিমানটি যাতে অন্য কোথাও নিয়ে যেতে না পারেন, সে জন্যই রাফায়েল পাহারা দিয়েছে। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তাব্যবস্থায় তারা কোনো ফাঁক রাখেনি।

পাইলট ও এসএসএফ সদস্য যারা বিমানে ছিলেন : শেখ হাসিনাকে নিয়ে পালানো বিমানের পাইলট ছিলেন পাঁচজন। বিমানটির মিশন কমান্ডার ছিলেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন জিএম শামীম রেজা এবং পাইলট ইন কমান্ড (ক্যাপ্টেন) ছিলেন উইং কমান্ডার গোলাম রসূল চৌধুরী। বাকি তিনজন হলেনÑউইং কমান্ডার মাহফুজ, ফ্লাইট লে. আরাফ ও ফ্লাইট লে. কিবরিয়া। অর্থাৎ দুই সেট ক্রু ছিলেন সামরিক ফ্লাইটটিতে।

এসএসএফের পাঁচ সদস্য হলেন ডিজি এসএসএফ মেজর জেনারেল নাজমুল আলম চৌধুরী, এসএসএফ পরিচালক কর্নেল শহীদ, পরিচালক এসএসএফ কমান্ডার ফারুক, ডিডি এসএসএফ মেজর শাহীন এবং সহকারী পরিচালক ফ্লাইট লে. নাজমুন নাহার।

বিমানের পাইলটের সঙ্গে ঢাকা ও কলকাতায় কথোপকথন : শেখ হাসিনা যে বিমানটিতে করে পালিয়েছেন, তার কল সাইন হচ্ছে, AJAX1431 বিমানটির ককপিটে পাইলটের (মনিটরিং) বিমানবন্দরের গ্রাউন্ড কন্ট্রোল, ঢাকা টাওয়ার ও ঢাকা এরিয়া কন্ট্রোলের সঙ্গে যে কথোপকথন হয়, তা থেকে অনেক কিছুই জানা যায়। সেই কথোপকথন এখানে তুলে ধরা হলো—

ঢাকা গ্রাউন্ড কন্ট্রোলের সঙ্গে কথোপকথন : বিমানটি কর্মিটোলা ঘাঁটি থেকে বেলা ৩টা ৯ মিনিটে টেক অফ করে। এর আগে ঢাকা গ্রাউন্ড কন্ট্রোল থেকে টেক্সি করার জন্য পাইলট অনুমতি চান। ঢাকা গ্রাউন্ড কন্ট্রোল বিমানটিকে নর্থ আলফা টেক্সিওয়ে ব্যবহার করবে কি না জিজ্ঞেস করে। বিমানটি ঢাকা গ্রাউন্ড কন্ট্রোলকে জানায়, তারা সাউথ আলফা টেক্সিওয়ে ব্যবহারে আগ্রহী। ঢাকা গ্রাউন্ড কন্ট্রোল আবার বিমানটিকে নর্থ আলফা টেক্সিওয়ে দিয়ে রানওয়ে ১৪-তে যাওয়ার নির্দেশনা দেয়। এরপর বিমানটি ঢাকা গ্রাউন্ড কন্ট্রোলকে জানায়, তারা রানওয়ে ৩২ ব্যবহার করবে এবং সাউথ আলফা টেক্সিওয়ে দিয়েই যাবে। এরপর গ্রাউন্ড কন্ট্রোল তাদের সাউথ আলফা টেক্সিওয়ে ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে সতর্ক করে যে, যাত্রাপথে দুটো এএন-৩২ পরিবহন বিমান পার্ক করা আছে। বিমানটি যেন সেই বিমান দুটির পাশ দিয়ে সতর্কভাবে যায়।

বিমানটি ঢাকা গ্রাউন্ড কন্ট্রোলকে জানায়, তারা স্কোয়াক কোড ৪১৩১ ব্যবহার করবে এবং ঢাকা গ্রাউন্ড কন্ট্রোল তা অনুমোদন করে দেয়। ঢাকা গ্রাউন্ড কন্ট্রোল বিমানটির কাছে জানতে চায়, তারা কোন দিকে (হেডিং) উড়ে যাবে এবং কত উচ্চতায় উড়বেন। তখন ককপিট থেকে জানানো হয়, বিমানটি ২৩৮ ডিগ্রিতে উড়বে এবং উচ্চতা হবে ২০ হাজার ফুট, যা গ্রাউন্ড কন্ট্রোল অনুমোদন করে। বিমানটি সাউথ আলফা টেক্সিওয়ে করে শেষ প্রান্তে পৌঁছে কন্ট্রোলকে জানায় তারা রানওয়ে ৩২-এর কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। তখন গ্রাউন্ড কন্ট্রোল তাদের ১১৮.৩ মেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে ঢাকা টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলে।

ঢাকা টাওয়ারের সঙ্গে কথোপকথন : ঢাকা টাওয়ারের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে বিমানটির ককপিট থেকে রানওয়ে ৩২-এ ঢোকার অনুমতি চাওয়া হয়। ঢাকা টাওয়ার বিমানটিকে রানওয়ে ৩২-এ ঢোকা ও লাইনআপ করার অনুমতি দিয়ে অপেক্ষা করতে বলে। রানওয়ে ৩২-এ লাইনআপ করার পর ককপিট ঢাকা টাওয়ারকে তাদের ফ্লাইট লেভেল কত হবে জানতে চায়। ঢাকা টাওয়ার বিমানটিকে জানায়, তাদের ডিপারচার হেডিং হবে ২৩৮ ডিগ্রি এবং উচ্চতা হবে ২০ হাজার ফুট। ঢাকা টাওয়ার বিমানটিকে টেক অফ বা উড্ডয়নের অনুমতি দেয়। ককপিট থেকে টাওয়ারকে জানানো হয়, তারা টেক অফের পর বাম দিকে মোড় নিয়ে ২৩৮ ডিগ্রিতে যাত্রা শুরু করবে এবং ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় উড্ডয়নরত থাকবে। একই সঙ্গে তারা এও জানায়, উড্ডয়নের জন্য টেক অফ রুল এরই মধ্যে তারা শুরু করেছে। টাওয়ার বিমানটিকে তাদের নির্দেশনা সঠিকভাবে পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে ককপিট থেকে পাইলট তা নিশ্চিত করেন। টাওয়ার বিমানটিকে এই মর্মে নির্দেশনা দেয়, চার হাজার ফুট ওপরে ওঠার পর তারা যেন টাওয়ারকে জানায়। এরপর বিমানটি টাওয়ারকে জানায়, তারা এক হাজার ফুট উচ্চতায় উঠে গেছে এবং ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় ওঠার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এও জানায়, চার হাজার ফুট উচ্চতায় উঠে বিমানটি বাঁয়ে ঘুরবে এবং টাওয়ারকে তা জানানো হবে। বিমানটি এরপর টাওয়ারকে জানায়, আপাতত সাময়িকভাবে তারা ১৯০ ডিগ্রিতে হেডিং মেনটেইন করবে (উড্ডয়ন করবে)। কারণ তারা সামনে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সম্মুখীন হচ্ছেন। টাওয়ার বিমানটিকে ১৯০ ডিগ্রিতে উড্ডয়নের অনুমতি দিয়ে ১২৬.৭ মেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে ঢাকা এরিয়া কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশনা দেয়।

ঢাকা এরিয়া কন্ট্রোলের সঙ্গে কথোপকথন : বিমানটি ঢাকা এরিয়া কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে জানায়, তারা ৪ হাজার ৭০০ ফুট উচ্চতা অতিক্রম করে ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় যাওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। ঢাকা এরিয়া কন্ট্রোল বিমানটিকে ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় ওঠার অনুমতি দেয়, যা ককপিটের পাইলট ‘একনলেজ’ করেন। এরপর ঢাকা কন্ট্রোলকে বিমানের ককপিট থেকে জানানো হয়, তারা ১১ হাজার ফুট উচ্চতায় উঠেছেন এবং ২০ হাজার ফুট উচ্চতায় ওঠার প্রক্রিয়ায় রয়েছেন। এই অবস্থায় বিমানটি ১৫ মাইল গতিপথ পরিবর্তনের অনুমতি চায়। ঢাকা কন্ট্রোল তা অনুমোদন করে। বিমানটি ঢাকা কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে জানায়, তারা ৬০ নটিক্যাল মাইল দূরে রয়েছেন এবং ২৪ হাজার ফুট আরোহণের অনুমতি চায়। ঢাকা কন্ট্রোল তাদের ২০ হাজার ফুটের পরিবর্তে ২৪ হাজার ফুট ওপরে ওঠার অনুমোদন দেয়। এ পর্যায়ে ঢাকা কন্ট্রোল বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ১২৭.৩ মেগাহার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ করার নির্দেশনা প্রদান করে এবং পাইলট তা একনলেজ করেন।

কলকাতা টাওয়ারের সঙ্গে কথোপকথন : ঢাকা কন্ট্রোল বিমানটিকে এই মর্মে সতর্ক করে, তাদের ঠিক ওপরে ২৬ হাজার ফুট উচ্চতায় একটি এয়ারবাস (এ-৩২০) উড্ডয়নরত আছে এবং শেখ হাসিনার বিমানটিকে কলকাতা কন্ট্রোল থেকে নিয়ন্ত্রণের নির্দেশনা দেয়, যা পাইলট একনলেজ করেন। বিমানটি ঢাকা কন্ট্রোলের কাছে তাদের এডিসি (এয়ার ডিফেন্স কন্ট্রোল) নম্বর জানতে চাইলে ঢাকা কন্ট্রোল জানায়, তাদের কোনো এডিসি নম্বর নেই।

শেখ হাসিনার বিমানটির স্কোয়াক কোড (ডিজিট) ৪১৩১। ঢাকা সিভিল অ্যাভিয়েশন থেকে কলকাতা সিভিল অ্যাভিয়েশনকে আগেই তা অবহিত করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের হাসিমারা বিমান ঘাঁটি থেকে ফ্রান্সের তৈরি দুটি রাফায়েল যুদ্ধবিমান তাদের রাডারে ৪১৩১ স্কোয়াক কোড ইনপুট দিয়ে ভারতের আকাশসীমা থেকে নজরদারি শুরু করে। শেখ হাসিনার বিমানটি সাতক্ষীরা সীমান্ত পার হয়েই তার ট্রান্সপন্ডার অন করে। রাফায়েল যুদ্ধবিমান দুটি শেখ হাসিনার বিমানকে চিহ্নিত করে নজরে রাখে। ভারতের সীমানার এক শ মাইল ভেতরে বিমানটি গেলে রাডারে ভিজিবল হয় (ধরা পড়ে)। এরপর রাফায়েল দুটি বিমানটিকে এসকর্ট করে দিল্লি নিয়ে যায়। রাফায়েলের ট্রান্সপন্ডারে শেখ হাসিনার বিমানের স্কোয়াক কোড ৪১৩১ আগেই জানা ছিল। ফলে রাফায়েলের রাডারেও তা ভিজিবল হয়।

ট্রেনিং ফ্লাইট হিসেবে উল্লেখ : শেখ হাসিনাকে নিয়ে পালানো ফ্লাইটটি স্টেট এয়ারক্রাফট হলেও এটা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ঢাকা এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলের ফ্লাইট প্রগ্রেস স্ট্রিপে (STRIP) এটিকে একটি ট্রেনিং ফ্লাইট হিসেবে দেখানো হয়।

নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকদের প্রশ্ন : শেখ হাসিনাকে নিয়ে পালানো সামরিক বিমানটি নিয়ে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকদের মধ্যে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই মিশন কে অনুমোদন করল? মিশনের আরোহী (যাত্রী) ও ক্রু তাদের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস ক্লিয়ার না করেই কীভাবে গেলেন এবং পরদিন এলেন? ফ্লাইটটির ক্রু ও সামরিক কর্মকর্তাদের জিও ছিল কি না? কারণ তারা সবাই ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা।

এ ছাড়া এ ধরনের একটি মিশনের জন্য এয়ার চিফ অবহিত হতে হবে। নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনার ফ্লাইটটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে ছিলেন বিমানবাহিনীর অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ (এয়ার স্টাফ এসিএএস) এবিএম ফখরুল ইসলাম। পরিচালক (অফস) এয়ার কমডোর মোস্তফা মাহমুদ সিদ্দিকী পুরো অপারেশন পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন বলে জানা গেছে। তিনি গত জানুয়ারি মাসে ভারত থেকে এনডিসি কোর্স করে এসেছেন। বর্তমানে তাকে এয়ার ভাইস মার্শালের পদমর্যাদা সম্পন্ন পদে কুর্মিটোলার বেস কমান্ডার হিসেবে এয়ার বেসে এয়ার অফিসার কমান্ডিং (এওসি) পদে পদায়ন করা হয়েছে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024
Developed BY www.budnews24.com