বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:০৯ পূর্বাহ্ন

জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দেওয়া না হলে যুগপৎ আন্দোলনের ইঙ্গিত বিএনপির

  • সময়: বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩.০৪ পিএম
  • ৬ জন

নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে বিএনপির মতো বড় রাজনৈতিক দলের তাগাদা ও নানামুখী আলোচনার মধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা দেড় বছরের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের একটি সম্ভাব্য সময়সীমার কথা জানিয়েছেন। তবে তারিখটি নির্দিষ্ট নয়। বিএনপির নেতারা সংস্কারে বেশি সময় না নিয়ে অবিলম্বে নির্বাচনের সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা চান। জানুয়ারির মধ্যে এ ঘোষণা দেওয়া না হলে যুগপৎ আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা।  বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার ‘ভোট ও ভাতের অধিকারের জন্য পাঁচই অগাস্টের মতো রাস্তায় নামতে হবে’ বলে যে মন্তব্য করেছেন তা নিয়ে নানামুখী আলোচনা শুরু হয়েছে দলের ভেতরে ও বাইরে।

রাজনৈতিক দলের নেতারা বলেন, মাঠের কর্মসূচি দেওয়ার লক্ষ্য হবে ভোটের আবহ তৈরি এবং সরকারের ওপর নির্বাচনি চাপ বাড়ানো। নির্বাচন নিয়ে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নানা সংশয়-সন্দেহ তৈরি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত কয়েকদিন ধরে ২৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। প্রয়োজনীয় সংস্কার করে ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন চায় দলগুলোর নেতারা। এসব বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির এক সদস্য যুগান্তরকে বলেন, সভা-সমাবেশে যে যা-ই বলুক না কেন, ভোটের অধিকারের প্রশ্নে সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ। দীর্ঘ ১৫ বছর ভোটের অধিকারের জন্য লড়াই করতে হয়েছে। এখন সেই ভোটের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখনো যদি ভোটের জন্য রাস্তায় নামতে হয়, তবে তা খুবই দুঃখজনক হবে। তাহলে বুঝতে হবে মৌলিকভাবে কোনো কিছু পরিবর্তন হয়নি। সুতরাং আশা করব রাজনৈতিক দলগুলোকে রাস্তায় নামতে হবে না। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নেবে এবং আগামী বছরের মধ্যই জাতীয় নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে।

তবে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো ড. মুহাম্মদ ইউনূস সরকারের ব্যর্থতাও চায় না। বিএনপি নেতারা মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকার ব্যর্থ হলে দেশে এমন প্রেক্ষাপট তৈরি হবে, যা নির্বাচনকে বিলম্বিত করতে পারে। এ বিষয়ে কয়েকটি দল ও মহলের কর্মকাণ্ড বিএনপি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিএনপি মনে করছে, কোনো কোনো মহল সরকারকে বেকায়দায় ফেলে ভিন্ন পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে।

এমন প্রেক্ষাপটে সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে এক জনসভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্যেও আন্দোলনের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তিনি সভায় উপস্থিত জনগণের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা কি সত্যি সত্যি পরিবর্তন চান নাকি আবার ওই আওয়ামী লীগের নৌকায় ফিরে যেতে চান। যদি পরিবর্তন চান তবে ৫ আগস্ট আপনারা যেমন রাস্তায় নেমেছিলেন, আবারও ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে হবে। ভোটের অধিকার, ভাতের অধিকার আদায়ের জন্য এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য রাস্তায় নামতে হবে।’

জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু যুগান্তরকে বলেন, মানুষ কখন ভোট দিয়ে তাদের নির্বাচিত সরকার ও সংসদ গঠন করতে পারবে-সেটি সরকার স্পষ্ট করেনি বলেই জনমনে এক ধরনের সংশয় তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো মহল নির্বাচন বিলম্বিত করার চেষ্টা করছে বলেই বিএনপি বারবার সরকারকে সতর্ক করছে।

গণতন্ত্র মঞ্চের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক যুগান্তরকে বলেন, অনেকে বলার চেষ্টা করে সংস্কার শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচন নয়। যা নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সংস্কার তো একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রশ্ন। এটার প্রকারান্তরে ক্ষমতা প্রলম্বিত করার কোনো তৎপরতা কিনা? বোঝা যায় তারা এসব ইস্যুকে সামনে আনছেন ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার জন্য। তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারের এক ধরনের দূরত্বের জায়গা তৈরি হবে, সন্দেহ-অবিশ্বাস বাড়বে। যেটা আমরা কেউ চাই না। আমরা আশা করি সরকার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার পরিচয় দেবে। রাজতৈনিক দলগুলোকে আস্থায় নিয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

তিনি বলেন, আমরা চাই না ভোটের অধিকারের জন্য আবার বিরোধী দলগুলো রাস্তায় নামুক। এটা খুবই অপ্রত্যাশিত, এটা আমরা চাই না। আমরা চাই রাস্তায় যাতে নামতে না হয়, সেজন্য সরকার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে, আলাপ-আলোচনা করবে। আর রাস্তায় যদি নামতেই হয়, সেটা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয় হবে। ১৫ বছর পর ভোটের একটা সুযোগ তৈরি হয়েছে সেটা কাজে না লাগানো হবে খুবই দুঃখজনক। এখনও যদি ভোটের জন্য, ভাতের জন্য রাস্তায় নামতে হয়, তাহলে বুঝতে হবে মৌলিকভাবে কোনো কিছুই পরিবর্তন হয়নি। সুতরাং আশা করব রাজনৈতিক দলগুলোকে রাস্তায় নামতে হবে না। আমরা সরকারকে হুমকি দিতে চাই না, সতর্ক করতে চাই। বলতে চাই প্রত্যাশাটাকে সীমিত করা দরকার, উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক প্রকল্প না নিয়ে যেটা অর্জনযোগ্য, সবাই মিলে একমত হওয়া যাবে-এমন পদক্ষেপ নেবে, রাজনৈতিক দলগুলোকে আস্থায় নেবে। সরকার আগামী বছরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনের উদ্যোগ নেবে এ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।

সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশনও বলেছে তারা নির্বাচন করার জন্য প্রস্তুত। এখন সরকার নির্বাচন কমিশনকে বলবে যে ২০২৫ সালের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচনটা সম্পূর্ণ করতে চাই। এই নির্দেশনা গেলেই নির্বাচন কমিশন সেভাবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সম্পন্ন করবে। পুরো প্রস্তুতিটা ৫ থেকে ৬ মাসের ব্যাপার। সবকিছু শেষ করে তারা আগামী মে-জুন মাসের মধ্যে নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণা করতে পারেন। এতে সর্বোচ্চ নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ ইতোমধ্যে দলের অবস্থান পরিষ্কার করে বলেছেন, ‘নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো প্রধানতম সংস্কার বলে মনে করি। এই সরকারের প্রধান ও প্রথম দায়িত্ব হলো-একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দেওয়া। আর সেজন্য কিছু আইনি সংস্কার, প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও মাঠের সংস্কার দরকার আছে। আমরা পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে দেখেছি, এ ক্ষেত্রে সংস্কারে চার থেকে ছয় মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। সুতরাং অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান, গণতন্ত্রের যাত্রাপথে আমরা যেন কোনো কৌশল প্রয়োগ না করি। ভোটের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার সেরে ভোটের আয়োজন করতে হবে।’

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024
Developed BY www.budnews24.com