মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৪২ অপরাহ্ন

সংস্কার শেষে দ্রুত নির্বাচনে একমত বিএনপি জামায়াত

  • সময়: মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯.০৯ এএম
  • ৪ জন

গণ-অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ সাড়ে চার মাস। এ সময়েও আগামী নির্বাচনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়নি। এক সপ্তাহ আগে প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনি রোডম্যাপের সম্ভাব্য সময়সীমা জানালেও রাজনৈতিক দলগুলো বলছে, তা স্পষ্ট নয়। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছেন দলগুলোর নেতারা। এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রশ্নে প্রয়োজনীয় সংস্কারে একমত বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। বিএনপি বলছে, নির্বাচনমুখী প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ‘যৌক্তিক সময়’ একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অন্তর্বর্তী সরকারকে দিতে হবে। এই সরকারের সদিচ্ছা থাকলে ২০২৫ সালের মধ্যে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব। এজন্য নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রত্যাশা করছেন বিএনপিসহ ও সমমনা দলের নেতারা। অন্যদিকে জামায়াত বলছে, নির্বাচনের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিভাগগুলো সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। সম্প্রতি নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসাবেও দেখছে জামায়াত। আবার দলটির কেউ কেউ বলছেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন দেওয়া সম্ভব। দলগুলোর একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এসব তথ্য।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ভালো। তবে নির্বাচন ইস্যুতে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে আলাপ-আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আমরা (বিএনপি) সমর্থন দিয়েছি। জনগণের প্রত্যাশা পূরণের জন্য সমর্থন দিয়েছি। এই সরকারও জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেবে-মানুষের মাঝে আশা জাগিয়েছে। এর মধ্যে ভোটের অধিকার হলো প্রধান। এই দেশের মানুষ গত ১৪-১৫ বছর ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত। অতিদ্রুত জনগণের প্রত্যাশা যাতে এই সরকার পূরণ করে, সেজন্য আমরা নির্বাচনি রোডম্যাপ দেওয়ার দাবি করে আসছি। এখনো কিন্তু পরিপূর্ণ রোডম্যাপ দেওয়া হয়নি। আমাদের দাবি পরিপূর্ণ রোডম্যাপ। এটা দিলে কোন দিনে নির্বাচন হবে তা জানা যাবে। জনগণ নির্বাচনমুখী হবে। তখন ছোটখাটো যে ষড়যন্ত্র আমরা দেখতে পাই, তা জনগণের কাছে তখন পাত্তা পাবে না।’

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার যুগান্তরকে বলেন, ‘আমরা বলেছি, নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হতে রাষ্ট্রের যে বিভাগগুলোর সংস্কার প্রয়োজন, সেগুলো সংস্কার করে নির্বাচন দিতে হবে। সেটা ২-৩ মাস আগে পরে হতে পারে। নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে কিনা সেটাই বড় ফ্যাক্টর। সেজন্য আমরা সংস্কার চাই, কিন্তু সব বিভাগের সংস্কার এই সরকারের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্য নির্বাচনের জন্য যেসব বিষয় যুক্ত হবে, তাদের সংস্কার করতে হবে। সরকার নির্বাচনের যে ধারণা দিচ্ছে, সেটা যদি সিনসিয়ারলি বলে থাকে এর মধ্যেই সংস্কার করে নির্বাচনে যাওয়া সম্ভব। এজন্য জামায়াত এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখে।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের সব বিভাগের সংস্কার এই সরকারের করার সময় হবে না। এটা করতে গেলে অনেক সময় এবং বছর লাগবে। আমরা চাচ্ছি নির্বাচন নিরপেক্ষ করতে ইলেকশন প্রক্রিয়ার সাথে সরকারের যেসব বিভাগ জড়িত সেগুলো সংস্কার হোক। সে সংখ্যাটা কম এবং সেটা এর মধ্যে হওয়া সম্ভব।’

গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘এখন নির্বাচন সম্পৃক্ত বিভাগগুলোর সংস্কার দরকার। সেটা না হলে ২০১৪, ২০১৮, ২০২৪ এর মতো নির্বাচনের আশঙ্কা আছে।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, সংস্কার একটি ধারাবাহিক ব্যাপার। প্রাথমিকভাবে যেটুকু দরকার, সেটুকু সংস্কার করেই নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত। কারণ এখন দ্রব্যমূল্যের যে অবস্থা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি ঘটছে। সাধারণ মানুষের কাছে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের যে দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা থাকে, সেটা তো সাময়িক দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে থাকে না। এজন্যই বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের কথা বলছে। বিএনপি ক্ষমতায় আসবে বা প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি হবে এমন চিন্তা নেই। লড়াইটা আমরা যখন করেছি, তখন বারবার বলেছি জনগণের ভোটাধিকার। দেশে ভোটাধিকারের একটি নমুনা তো দেখাতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা মনে করি এই সরকারের পক্ষে ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব। এর মধ্যে যে সংস্কারগুলো হয়েছে, নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা তিন মাস সময়ের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাদের ভোটার তালিকায় ভুল অনেক কম। যেটুকু আছে সেটা তারা ঠিক করে নিতে পারবে। আমরা গণমাধ্যমে তাদের এমন বক্তব্য দেখেছি। নির্বাচনের জন্য সাধারণ মানুষের আগ্রহ আছে। এখন যেহেতু অনেক নতুন নতুন রাজনৈতিক চিন্তার বা প্রতিষ্ঠানের জন্ম হচ্ছে। কাজেই সবাই এখন নজর রাখবে নির্বাচনের ভোটকেন্দ্রের দিকে। সুতরাং প্রস্তুতিটা ভোটারদের পক্ষ থেকে বেশি আসবে, নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য। এজন্য প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাপক কোনো প্রস্তুতির প্রয়োজন আছে বলে আমরা মনে করি না।

এদিকে ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। গত শনিবার কুমিল্লায় এক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে কুমিল্লায় জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৫ সালের মধ্যেই হতে হবে। এ সময়ের মধ্যে সব সংস্কার শেষ করতে হবে।’ তিনি এও বলেন, ‘আশা করি প্রধান উপদেষ্টা সংস্কার শেষ করেই ২০২৫ সালের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করবেন। এ দেশের জনগণ দ্রুত তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চায়। মানুষ ভোট দিতে চায়।’

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024
Developed BY www.budnews24.com