টস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাডলাইটের আলো নিভে যায়। মাঠের বাইরে ড্রোনের আলোর ঝলকানি অন্ধকারেও সিরিজের উজ্জ্বলতা বাড়িয়ে দেয়। মহান বিজয় দিবসে কিংসটাউনের আকাশে ভেসে ওঠা লাল-সবুজের পতাকা দেখে অন্ধকারে চিৎকার করে উঠলেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। গ্যালারিতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ঢোল-তবলার বাজনা আর আর্নোস ভ্যালের পাশ ঘেঁষে উঁচু পাহাড়ে বাতিগুলো যেন তারার রূপে আবির্ভূত। এই তো বিজয়ের মঞ্চ। হাজার হাজার মাইল দূরে এমন পরিবেশে বিজয় উৎসবের চেয়ে বড় আর কি হতে পারে। কাল প্রথম টি ২০তে প্রথমে ব্যাট করে ১৪৮ রানের লক্ষ্য দিয়ে বাংলাদেশ জিতেছে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে। শেখ মেহেদী হাসানের অসাধারণ শুরুর বোলিংয়ে যে জয়টা ছিল হাতের মুঠোয়, সেটাই প্রায় হারাতে বসেছিল সফরকারীরা। শেষ দুই ওভারে তাসকিন আহমেদ ও হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের দুটি ওভারে ১৪০ রানে অলআউট হয়ে স্বাগতিকদের হার সাত রানে।
ওয়ানডে সিরিজেও দুটি ম্যাচে এমন অবস্থায় থেকে হেরেছে সফরকারীরা। ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশের দুঃস্মৃতি নিয়ে বিজয় দিবসে অনুপ্রাণিত হলেন মেহেদী হাসান-হাসান মাহমুদরা। ম্যাচ যখন শেষ হয়েছে, সেন্ট ভিনসেন্টে তখনো ১৫ তারিখ। বাংলাদেশে ১৬ ডিসেম্বরের সকাল। সেই সকালে টি ২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০তে। আগামীকাল একই মাঠে দ্বিতীয় ম্যাচ।
নৈসর্গিক পরিবেশ। সমুদ্র আর পাহাড়ের মাঝে আর্নোস ভ্যালেকে মহাউৎসবের রূপ দিতেই নাকি স্থানীয় সময় রাত ৮টায় ম্যাচ শুরুর সিদ্ধান্ত। দর্শকে পূর্ণ গ্যালারিতে ক্যারিবীয় রবিবাসরীয় জনসমুদ্রের মাঝে এক প্রান্তে টাইগার সমর্থক শোয়েব আলী অপর প্রান্তে ইউরোপ থেকে আসা আরেক সমর্থক, এই দুজন ছাড়া বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ছিলেন সেন্ট ভিনসেন্টের এক দম্পতি, যাদের ছেলে আবার বাংলাদেশ দলের সঙ্গে কাজ করছেন। ক্যারিবীয় নৃত্য, দর্শকদের গগনবিদারি চিৎকারের মাঝে এই চারজনকে দেখা গেছে টিভির পর্দায়!
শেষ ওভারে জয়ের জন্য স্বাগতিকদের প্রয়োজন ছিল ১০ রান। খাদের কিনারা থেকে দলকে তুলে এনে অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েল জয়ের দ্বারপ্রান্তে প্রায় পৌঁছে দিয়েছিলেন দলকে। প্রথম বলে আলজারি জোসেফ এক রান নিতেই স্ট্রাইক পেলেন পাওয়েল। ধুন্দুমার ব্যাটিং করা ক্যারিবীয় অধিনায়ককে পরের বলে ডট দিয়ে তৃতীয় বলে উইকেট আদায় করে নেন হাসান। পুরো গ্যালারি নিস্তব্ধ। হাতে এক উইকেট। তিন বলে নয় রান হতেই পারে। চতুর্থ বলে লেগ-বাইয়ে এক রান পাওয়ার পর পঞ্চম বলে বোল্ড জোসেফ। গ্যালারির উচ্ছ্বাস থেমে গেছে। মাঠে লিটন দাসদের উল্লাস তখন বিকট শব্দে। মাত্র চার ওভারে ১৩ রান দিয়ে চার উইকেট নেওয়া মেহেদী জয়ের সুর তুলে দিয়েছিলেন শুরুতে। ৬১ রানে সাত উইকেট হারিয়েও যে স্বাগতিকরা জয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়, সেটা অধিনায়কের ৩৫ বলে ৬০ রানের কল্যাণে। আর মাত্র দুজন তাদের দুই অঙ্কের ঘরে যেতে পারেন, জনসন চার্লস (২০) ও রোমিও শেফার্ড (২২)। হাসান ও তাসকিন দুটি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান তানজিম হাসান ও রিশাদ হোসেন।
এর আগে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়েও বড় অবদান ছিল মেহেদী হাসানের। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই দুই টপঅর্ডার তানজিম হাসান ও অধিনায়ক লিটন দাস ফেরেন। লিটন গোল্ডেন ডাকের শিকার হন। ওয়ানডেতে রান পাননি, আগের ইনিংসে করেছিলেন শূন্য। কাল গোল্ডেন ডাকে গড়লেন আরেক রেকর্ড। এই সংস্করণে তার এটি ষষ্ঠবার শূন্যে ফেরা, গোল্ডেন ডাক তৃতীয়বার। পরে উইকেটের পেছনে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে চারটি ক্যাচ ও একটি স্টাম্পিং আউট করে পাঁচটি ডিসমিসাল করেছেন। ফর্মে থাকা সৌম্য দলকে এগিয়ে দেন। তাকে ভালো সঙ্গ দেন জাকের আলী। ২৭ করে আউট হওয়া জাকেরের পর ফেরেন সৌম্য (৪৩)। ম্যাচসেরা মেহেদী হাসানের ২৪ বলে ২৬* এবং শামীম হোসেনের ১৩ বলে ২৭ রানের ঝড়ো ইনিংস দলকে দেড়শর কাছে নিয়ে যায়। ১৩ রানে দুটি উইকেট নেন আকিল হোসেন। ওবেদ ম্যাকয়ও পান দুটি উইকেট।