ভারতের মেঘালয়ের রাজধানী শিলংয়ে একটি আবাসিক হোটেলে ধর্ষণের অভিযোগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের চার নেতাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রোববার কলকাতার নিউটাইনের বিধাননগরে কমিশনারেটের পুলিশ ও শিলং পুলিশ যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের ছয় নেতা সিলেট থেকে পালিয়ে শিলংয়ে অবস্থান করার সময় তাদের হোটেলেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরপর তারা কলকাতায় পালিয়ে গিয়ে নিউটাইনের একটি ফ্ল্যাটে ওঠেন। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিলং থানায় ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। এরপর বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশ ও মেঘালয়ের শিলংয়ের পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করে। অভিযুক্ত দুজন পালিয়ে গেছেন। ঘটনাস্থলে আটক এক ইউপি চেয়ারম্যানকে এজাহারে নাম না থাকায় ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।
কলকাতায় গ্রেফতাররা হলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের অপসারিত চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, সিলেট মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি, সিলেট মহানগর যুবলীগের সহ-সভাপতি রিপন ও যুবলীগের সদস্য জুয়েল। পলাতক দুজন হলেন সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফসর আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাস মিটু।
রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বারাসাতের স্পেশাল ক্রিমিনাল কোর্টে তাদের তোলা হয়। কিন্তু বিচারক উপস্থিত ছিলেন না। এ সময় ভারতীয় আইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শিলংয়ের স্থানীয় আদালতে অপরাধীদের হাজির করা হবে এমন আশ্বাসে ট্রানজিট রিমান্ড না নিয়েই তাদের মেঘালয়ের শিলং নিয়ে যায় মেঘালয় পুলিশ।
এদিকে কলকাতার এই ফ্ল্যাট থেকে নাসির, মুক্তি, রিপন ও জুয়েল ছাড়াও সুনামগঞ্জের এক ইউপি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকেও গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। পরে সেখানে অবস্থানরত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল তাদের ছাড়াতে তদবির শুরু করেন। এরপর মামলার এজহারে নাম না থাকায় ওই ইউপি চেয়ারম্যানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
কলকাতায় অবস্থানকারী সিলেট আওয়ামী লীগের একাধিক দলীয় নেতা এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
আরেক সূত্রে জানা গেছে, ধর্ষণে জড়িত ছিলেন মূলত সিলেট মহানগর যুবলীগের সহসভাপতি রিপন ও সদস্য জুয়েল। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা নাসির ও যুবলীগ সভাপতি মুক্তিসহ সবাই মিলে এক ফ্ল্যাটে অবস্থান করায় তাদেরও মামলার আসামি করা হয়েছে। তাই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করেছে।
এদিকে, যুগান্তর সিলেট ব্যুরো জানায়, চার আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকে মেঘালয়ের ডাউকি পুলিশের দায়ের করা ডাকাতির মামলায় কলকাতা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার নম্বর ১৯(১০)/২৪। মামলায় ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস) অনুযায়ী যেসব ধারা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো ১১৮(১), ৩০৯(৪), ৩১০(২), ৩২৪(৪) এবং ফরেনার্স অ্যাক্ট ১৪। বিএনএস ১১৮(১) ধারার অপরাধ ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা ও মারামারি, ৩০৯(৪) ধারার অপরাধ জাতীয় সড়কে ছিনতাই ডাকাতি আর ৩১০(২) ধারার অপরাধ পেশাদার ডাকাতি এবং ৩২৪(৪) ধারার অপরাধ সম্পত্তি ধ্বংস। মামলায় সবশেষ অবৈধ অনুপ্রবেশের অপরাধে ফরেনার্স অ্যাক্ট যুক্ত করা হয়েছে।
তবে সিলেট আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, এই চার নেতা ভারতে প্রবেশ করেই ডাউকি থানায় আশ্রয় নিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় চান এবং দুই মাসের অনুমতিও পান তারা। পরবর্তীতে ডাউকি পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই তারা মেঘালয় ছেড়ে কলকাতায় পাড়ি জমান। পুলিশ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা ফিরে না আসায় তাদের বিরুদ্ধে এই মামলা দায়ের করে ডাউকি পুলিশ।