সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪০ অপরাহ্ন

ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা বিএনপির

  • সময়: শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪, ১০.১৯ এএম
  • ২৯ জন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে এখনো নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা না এলেও বসে নেই দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন টার্গেট করে ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা নিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা এখন এলাকামুখী। ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে দলের ভবিষ্যৎ করণীয়, প্রতিশ্রুতিসহ রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফার বিষয়গুলো। সাংগঠনিক এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সারা দেশে প্রতিটি নির্বাচনি এলাকায় সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। নিচ্ছেন নির্বাচনি প্রস্তুতি। স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে। অনেক এলাকায় আবার তিন থেকে চারজন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা জনকল্যাণে চষে বেড়াচ্ছেন। এ নিয়ে ওইসব এলাকায় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে গ্রুপিং-দ্বন্দ্বও শুরু হয়েছে। ঘটেছে অনুসারীদের মধ্যে মারামারির মতো ঘটনাও। অবশ্য বিএনপির কেন্দ্র থেকে এখনই নির্বাচনি কোনো প্রচার না করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে ব্যানার-পোস্টার বা বিলবোর্ড সরানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে নেতারা বলছেন, প্রতিটি এলাকায় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা নির্বাচনি আবহ তৈরি হয়েছে। গত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে জণগণ ভোট দিতে পারেননি। তাই তারা এখন ভোটের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন।

নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন চান। নিরপেক্ষ নির্বাচনে জনগণের ভোটে যেই সরকার গঠন করুক না কেন, মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগ নিশ্চিত করাই বিএনপির টার্গেট। এ লক্ষ্যে সারা দেশে সব ধরনের জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের যে করেই হোক সাধারণ মানুষের মন জয় ও ভালোবাসা অর্জনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে দলের হাইকমান্ড থেকে। নেওয়া হচ্ছে নানারকমের ইতিবাচক সাংগঠনিক কর্মসূচির উদ্যোগ। যারা নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রাজপথে এতদিন সক্রিয় ছিলেন, ভবিষ্যতের জন্য দলীয় হাইকমান্ড প্রাধান্য দিচ্ছেন তাদের। তবে এখন নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে তৃণমূল কর্মীদের পাশে দাঁড়াতে। তাদের সমস্যা দেখতে এবং জনগণের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ তৈরি করতে। দল দেখছে কারা দুঃসময়ে কাজ করেছে। অবশ্যই নির্বাচনের জন্য আত্মত্যাগ, ১৭ বছরের ভূমিকা, জনপ্রিয়তা, সাংগঠনিক দক্ষতা-এসব বিষয় বিবেচনায় আসবে। নেতারা আরও বলেন, বড় দলে প্রতিটি আসনে একাধিক প্রার্থী থাকাই স্বাভাবিক। এ নিয়ে গ্রুপিংও থাকতে পারে। তবে তা যেন দলের ক্ষতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, গণতান্ত্রিক দল হিসাবে নির্বাচনকেন্দ্রিক একটি প্রস্তুতি সবসময়ই দলের থাকে এবং সে অনুযায়ীই এখন দলীয় নেতারা কাজ করছেন। নির্বাচনের প্রস্তুতি সবসময়ই আমাদের ছিল এবং এখনো আছে। তাছাড়া বিগত ১৬ বছরের বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার আন্দোলনের মাধ্যমেই বিএনপির নির্বাচনি প্রস্তুতি চূড়ান্ত হয়ে আছে।

দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, বিএনপির যে ইতিবাচক চিন্তা বা কাজ, তাতে মানুষ খুবই খুশি। বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন একটা শাসনব্যবস্থার চিন্তা আমরা করছি। যে বার্তা নির্বাচনি এলাকায় পৌঁছে দিচ্ছি। ৩১ দফায় আমরা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, যা জনগণের কাছে আবার উল্লেখ করছি। এটা জনগণও গ্রহণ করছে, ইতিবাচক হিসাবে দেখছেন। ফ্যাসিবাদী শাসক পালিয়ে যাওয়ার পর দেশে একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়েছে। এ সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রোডম্যাপ না দেওয়ায় মানুষের মধ্য একটা হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। মানুষ চায় একটা নির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে। মানুষ ভোট দেওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে আছে।

এলাকামুখী নেতারা : সরকার থেকে নির্বাচনি রোডম্যাপ ঘোষণা না এলেও এলাকামুখী বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। দলটির হাইকমান্ডের নির্দেশনায় তারা জনসংযোগ, জনস্বার্থে কর্মসূচি পালন করছেন। পাশাপাশি নানা সামাজিক অনুষ্ঠানেও অংশ নিচ্ছেন। বিএনপি ইতিবাচক কর্মকাণ্ড ও চিন্তাভাবনা তুলে ধরছে সাধারণ মানুষের মাঝে। বিএনপির যুগ্মমহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, নির্বাচনি এলাকা মুন্সীগঞ্জ-২ আসনের মানুষের সঙ্গে আমার একটা আত্মার সম্পর্ক। যে কারণে সবসময়ই এলাকার দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ সুখ-দুঃখে পাশে পেয়েছেন, এখনো পাশে থাকার চেষ্টা করি। বিএনপি একটি গণমানুষের দল। দেশনায়ক তারেক রহমান ইতোমধ্যে দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করেছেন। তার নির্দেশে জনসম্পৃক্ত সব ধরনের কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছি। জনগণের মনোভাব হচ্ছে তারা দ্রুত নির্বাচন চান, দেশকে স্থিতিশীল দেখতে চান।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, ‘এলাকার (গাজীপুর-১ আসন) জনগণের কাছে এ বার্তাটা দিচ্ছি-আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্পষ্ট বক্তব্য হচ্ছে এদেশে ভবিষ্যতে যাতে আর কোনো স্বৈরাচারী সরকার জন্ম না নেয়। সেজন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করা এবং ৩১ দফার যে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের কর্মসূচিকে বিস্তারিতভাবে গ্রামে-গঞ্জে জনগণের মাঝে মাঠে-ঘাটে তুলে ধরছি। আমাদের দলের যে উদ্দেশ্য ও আদর্শ, তা জনগণের মাঝে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। আমরা যখন মাঠে যাই, জনগণের সঙ্গে যখন কথা বলি, তাদের মনোভাব হচ্ছে তারা দীর্ঘদিন ধরে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত, এখন ভোট দিতে চান। ভোটের মাধ্যমেই তাদের পছন্দের সরকার নির্বাচিত করতে চান। ’

ঢাকা-১৬ আসনে নানা ইতিবাচক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হক। তিনি বলেন, ‘জনগণকে এ বার্তা দিচ্ছি-আওয়ামী লীগ ১৭ বছরে যা করেছে, বিএনপি ঠিক এর উলটোটা করতে চায়। আমরা চাই, বাংলাদেশে যেন আর স্বৈরাচারের জন্ম না হয়। বাংলাদেশের মাটিতে যাতে একটি স্বচ্ছ ধারার রাজনীতির পরিবেশ তৈরি হয়। এখানে কোনো প্রতিহিংসা থাকবে না, কোনো ভাইকে রক্ত দিতে হবে না, কাউকে গুম করা হবে না। অনেক কর্মকাণ্ডের মধ্যে একটি হচ্ছে-আমার এলাকায় প্রতি জুমার দিনে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নামাজ পড়ি। নামাজের পর পাশে খোলা কোনো জায়গায় হাজার খানেক লোকের মেহমানদারির আয়োজন করি, যেখানে এতিম, অসহায়, গরিব মানুষ খাবার খান।’

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পদক মাহমুদুর রহমান সুমন বলেন, ‘আমার নির্বাচনি এলাকা নারায়ণগঞ্জ-২ আসন। আমাকে সবসময় এলাকার জনগণ পাশে পেয়েছে, এখনো পাচ্ছেন। জনগণের যে স্বপ্ন সুচিকিৎসা, সুশিক্ষা, ন্যায়বিচার পাবে, কর্মসংস্থান হবে। শান্তিতে তারা দুমুঠো ভাত খেতে পাবে। এজন্য দেশনায়ক তারেক রহমানের ওপর তাদের সম্পূর্ণ আস্থা। জনগণ জানে যে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে ভালো ভালো লোক রাজনীতি করবে, যারা চাঁদাবাদমুক্ত, সন্ত্রাসমুক্ত একটি জীবন, রাষ্ট্র ও সমাজ উপহার দেবেন।’

টাঙ্গাইল-৩ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মাইনুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৭ বছর দেশের মানুষ বিশেষ করে বিএনপির নেতাকর্মীরা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য মামলা-হামলা-জেল-জুলুম অনেককিছুর স্বীকার হয়েছে। ফ্যাসিবাদকে তাড়ানোর জন্য অনেক আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। সবসময় এলাকায় থাকার চেষ্টা করেছি। এখনো সভা-সমাবেশ করছি। দেশনায়ক তারেক রহমানের বার্তা জনগণকে পৌঁছে দিচ্ছি। দেশ এখন ক্রান্তিকাল পার করছে। জনগণের মনোভাব-যত দ্রুত নির্বাচন হবে, ততই এদেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরে আসবে।’

একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী, অনেক এলাকায় বাড়ছে গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব : এদিকে অনেক এলাকায় তিন থেকে চারজন করে মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা জনকল্যাণে চষে বেড়াচ্ছেন। এ নিয়ে ওইসব এলাকায় বাড়ছে গ্রুপিং-দ্বন্দ্ব। এমনকি অনুসারীদের মধ্যে মারামারির ঘটনাও ঘটছে। তবে স্থায়ী কমিটির এক নেতা জানান, বড় দলের একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। গ্রুপিংও থাকতে পারে। তবে এমন কাজ করা ঠিক হবে না যেন দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়। এরকম কোনো ঘটনা ঘটলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তারেক রহমানের ইতিবাচক রাজনীতি নতুনভাবে আশার সঞ্চার করছে : রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ইতিবাচক ও পরিবর্তনের রাজনীতি জাতির সামনে নতুনভাবে আশার সঞ্চার করছে। মানুষের মন জয় করতে নিচ্ছেন একের পর এক যুগান্তকারী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত। তিনি মনে করেন, তারেক রহমানের দূরদর্শী সিদ্ধান্ত ও রাষ্ট্র নিয়ে ভাবনা জনগণ গ্রহণ করেছে, যা ইতিবাচক। এতে তার জনপ্রিয়তা আরও বেড়েছে। যার সুফল পাবেন দেশবাসী। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা সেই বার্তাই তুলে ধরছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির মতো একটি বড় ও জনপ্রিয় দলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। যদি গ্রুপিং থাকে, সেটাকে রাজনৈতিভাবে নেগেটিভ দেখার সুযোগ নেই। কারণ, বহু নেতাকর্মী ১৭ বছর নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। অনেক তরুণ আছেন, তারাও থাকবেন, আবার আগে যারা এমপি ছিলেন, তাদের বয়স ৬৫/৭০ বছর, তারাও নেতৃত্বে থাকবেন সেটাও স্বাভাবিক। সুতরাং এর ভেতর থেকেই একটা ভালো নেতৃত্ব চলে আসবে, মনোনয়ন পাবেন বলে মনে করেন তিনি।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024
Developed BY www.budnews24.com