তীব্র প্রাণঘাতী গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পতন হয় আওয়ামী লীগ সরকারের। ওইদিনই ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে দলটির সভানেত্রী একং ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শহীদ নূর হোসেন স্মরণে ও ‘অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ প্রায় তিন মাস পর প্রকাশ্যে রাজধানীতে রাজনৈতিক কর্মসূচির পালনের ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগ। গুলিস্তানের জিরো পয়েন্টে নূর হোসেন চত্বরে আজ বিকেল ৩টায় এই কর্মসূচি পালনের কথা। এদিকে একইস্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে গণজমায়েতের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঠেকাতে রাত থেকে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয় ছাত্র জনতা।
আর রোববার সকাল থেকে গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। সেখানে সাঁজোয়া যান ও জলকামানের গাড়ি নিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছেন পুলিশ সদস্যরা।
এদিকে আওয়ামী লীগের ঘোষিত কর্মসূচির বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এমন অবস্থায় রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম শনিবার (৯ নভেম্বর) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে বলেন, আওয়ামী লীগ বর্তমানে একটি ফ্যাসিবাদী দল। এই ফ্যাসিবাদী দলকে বাংলাদেশে কোনো প্রতিবাদ কর্মসূচি করতে দেওয়ার সুযোগ নেই।
এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও এ বিষয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, গণহত্যাকারী ও নিষিদ্ধ সংগঠনের কেউ কর্মসূচি করার চেষ্টা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
তিনি আরও লেখেন, আওয়ামী লীগ তার বর্তমান রূপে একটি ফ্যাসিবাদী দল। গণহত্যাকারী ও স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশ নিয়ে যে কেউ র্যালি, সমাবেশ ও মিছিল করার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পূর্ণ শক্তির মুখোমুখি হবে।
এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, নগরীর শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য ডিএমপি বদ্ধপরিকর। সমাবেশের নামে কাউকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেওয়া হবে না।
তিনি বলেন, ‘কেউ বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির চেষ্টা করলে কঠোর হস্তে দমন করা হবে। এ নিয়ে আমাদের নিজস্ব পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকা শহরের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’
এর আগে শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাতে দলের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে আওয়ামী লীগ জানায়, আগামী রোববার (১০ নভেম্বর) শহীদ নূর হোসেনের স্মরণে ও ‘অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার’ দাবিতে জিরো পয়েন্টে শহীদ নূর হোসেন চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করবে দলটি।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং নিষ্ঠুর বলপ্রয়ােগের জন্য এখনো দল হিসেবে প্রকাশ্যে ক্ষমা চায়নি আওয়ামী লীগ। এরমধ্যে দলটির রাজনৈতিক কর্মসূচির সমালোচনা করেছেন অনেকেই। জনগণের ক্ষমতার কাছে পরাজিত হয়ে ক্ষমতাচ্যুত হওয়া দলটির কর্মসূচির ঘােষণা, ফের একতাবদ্ধ করেছে ছাত্র-জনতা এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে।