চাঁপাইনবাবগঞ্জে ছাত্রশিবির নেতা আসাদুল্লাহ তুহিনকে হত্যার ৯ বছর পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, র্যাবের সাবেক ডিজি, সাবেক এমপি, র্যাব ও পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা এবং আওয়ামী লীগের নেতাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
শুক্রবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানায় মামলার আবেদন করেন জেলা শহরের নবাবগঞ্জ সিটি কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি নিহত আসাদুল্লাহ তুহিনের মামা মো. কবিরুল ইসলাম।
মামলার আবেদনে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও ৮-১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদকে।
অন্য আসামিরা হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. গোলাম রাব্বানী, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রুহুল আমিন, আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান এজাবুল হক বুলি, র্যাবের সাবেক ডিজি বেনজির আহমেদ, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহিউদ্দিন খান আলমগীর, র্যাব-৫ সিপিসি-১ চাঁপাইনবাবগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর কামরুজ্জামান পাভেলসহ অন্যান্যরা।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৬ জানুয়ারী ছাত্রশিবির নেতা আসাদুল্লাহ তুহিনকে বাসা থেকে চোখ বেঁধে নিয়ে যায় র্যাব সদস্যরা। এরপর তাকে হত্যা করে পরিদিন ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সড়কে মরদেহ ফেলে উপর দিয়ে গাড়ি চালানো হয় এবং সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু বলে জানানো হয়। এমনকি হাসপাতালের চিকিৎসকদেরকে ভয়ভীতি হুমকি দেখিয়ে মরদেহের মনগড়া ও বানোয়াট সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট প্রদান করতে বাধ্য করা হয়।
নিহতের বাবা মো. ইমামুল হক বলেন, ছেলেকে হত্যা করা হলেও আমরা এতদিন এনিয়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী সরকারের কারণে মুখ খুলতে পারিনি। দীর্ঘ ৯ বছর পর হলেও আমি আমার ছেলের হত্যার বিচার পাব বলে আশা করি। এসময় ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবি করেন তিনি।
মামলার বাদি ও নিহত ছাত্রশিবির নেতা আসাদুল্লাহ তুহিনের মামা মো. কাবিরুল ইসলাম বলেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের যোগসাজশে আমার ভাগ্নেকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কিন্তু গাড়ির নিচে লাশ রেখে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছিল। এমনকি তড়িঘড়ি করে মরদেহ দাফন করতেও নানারকম চাপ দেওয়া হয়। আমরা মনে করি, এখন পরিস্থিতি ও পরিবেশ অনুকূলে এসেছে, তাই মামলার আবেদন করেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সকলকে মামলার আসামি করা হয়েছে।
বাদিপক্ষের আইনজীবী নূরে আলম সিদ্দিকী আসাদ বলেন, হত্যার মামলার সকল উপাদান থাকায় মামলাটি থানায় আবেদন করা হয়েছে। পাশাপাশি মামলার তদন্তের জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের সহযোগিতায় পুনরায় মরদেহ উত্তোলন করে তদন্তকাজ করলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। আমরা আশাবাদী, আসাদুল্লাহ তুহিন হত্যা মামলার সঠিক বিচার পাবে তার পরিবার।
আবেদন গ্রহণ করে উর্ধ্বতন কর্মকতাদের সঙ্গে আলোচনা করে এবিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি এসএম জাকারিয়া।
তিনি জানান, শুক্রবার রাতে নিহতের পরিবার র্যাবের কয়েকজন কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নামে মামলার আবেদন করেছেন। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।