সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৫ অপরাহ্ন

অতিমাত্রায় বাড়বে খেলাপি ঋণ

  • সময়: শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৯.৫৯ এএম
  • ২৩ জন

দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে পাহাড়সম হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। বিগত সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উৎসাহে ব্যাংকগুলো খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখাত। খেলাপি হওয়ার যোগ্য ঋণকেও খেলাপি করা হতো না। নতুন গভর্নর দায়িত্ব নিয়েই বলেছেন নির্ভয়ে সঠিক তথ্য প্রকাশ করতে হবে। কোনো তথ্য যাতে গোপন করা না হয়, সে বিষয়েও তিনি নির্দেশনা দিয়েছেন। এতে এবার খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে। এতে অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে আগামী দিনে অতিমাত্রায় বাড়বে খেলাপি ঋণ।

এতদিন রাজনৈতিক চাপের কারণে বড় বড় প্রতিষ্ঠানের ঋণ খেলাপিযোগ্য হলেও খেলাপি করা হতো না। সেসব প্রতিষ্ঠান এবার খেলাপির তালিকায় যোগ হবে। জাল-জালিয়াতি করে নেওয়া ঋণের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। সেগুলোও খেলাপির তালিকায় আসবে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত সাবেক সরকারের প্রভাবশালী কয়েকজন ব্যবসায়ী এখন জেলহাজতে রয়েছেন। আরও কয়েকজন পলাতক। কয়েকজন দেশে নেই। ওইসব প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে ঋণখেলাপির তালিকায় পড়ে গেছে। সূত্র জানায়, ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে এর বিপরীতে বাড়তি প্রভিশন রাখতে হবে। খেলাপি ঋণের তিনটি শ্রেণি রয়েছে। বর্তমানে নিুমানের খেলাপি ঋণে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনক হলে ৫০ শতাংশ এবং আদায় অযোগ্য বা মন্দ ঋণ হলে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। পাশাপাশি খেলাপি ঋণের কারণে ব্যাংকগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের পরিমাণ বাড়বে। এতে মূলধন রাখার হারও বাড়বে। এমনিতেই ব্যাংকগুলো এখন চাহিদা অনুযায়ী প্রভিশন রাখতে পারছে না। মূলধনের ঘাটতি রয়েছে। খেলাপি ঋণ বাড়লে এসব খাতে ঘাটতি আরও বেড়ে যাবে। তখন ব্যাংক খাত আর্থিকভাবে আরও দুর্বল হয়ে পড়বে।

৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে। ১৪ আগস্ট নতুন গভর্নর হিসাবে দায়িত্ব নেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি দায়িত্ব নিয়ে ঘোষণা করেছেন, ব্যাংক খাতের সব তথ্য প্রকাশ করা হবে। এরপর ৩ সেপ্টেম্বর গত জুনভিত্তিক ঋণের তথ্যে দেখা যায়, খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা। মার্চে ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকা। ওই তিন মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছিল ২৯ হাজার কোটি টাকা। চলতি সেপ্টেম্বরের তথ্য নভেম্বরের শেষদিকে পাওয়া যেতে পারে। তখন খেলাপি ঋণ আরও বাড়বে। এছাড়া আগামী ডিসেম্বর ও মার্চ প্রান্তিকে তা লাফ দেবে।

এখন ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ছয় মাস পর খেলাপি হচ্ছে। কিছু ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার তিন মাস পরও খেলাপি হচ্ছে। ফলে যেসব ঋণের কিস্তি সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধের কথা, সেগুলো না দিলে আগামী ডিসেম্বর বা মার্চের পর খেলাপি হবে। যেসব ঋণের কিস্তি ডিসেম্বরের মধ্যে পরিশোধের কথা, সেগুলো না হলে আগামী মার্চ বা জুনের পর খেলাপি হবে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা ও বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমান গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে জেলহাজতে। গ্রুপটির নামে দেশের ব্যাংক ও ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলোয় প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ আছে। এছাড়া বেনামি ঋণও আছে। গ্রুপটির ঋণ খেলাপিযোগ্য হলেও এতদিন রাজনৈতিক প্রভাবে খেলাপি করা হয়নি। তারা ঋণও পরিশোধ করেনি। উলটো সীমা বাড়িয়ে একের পর এক নতুন ঋণ নিয়েছে। অগ্রণী ব্যাংক গ্রুপটির নামে একটি ঋণ ১৭ দফা নবায়ন করেছে। এখন ঋণটি আবার খেলাপি হওয়ার প্রক্রিয়ায় আছে। ডিসেম্বর প্রান্তিকের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না করলে খেলাপি করতে হবে। জনতা ব্যাংকে বেক্সিমকো গ্রুপের ঋণ ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১৮ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে গেছে। জনতা ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলে ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ১২ হাজার কোটি টাকা খেলাপি হয়ে যাবে। বাকি ঋণগুলোও পর্যায়ক্রমে খেলাপি হবে। অন্যান্য ব্যাংকেও একই অবস্থা।

এদিকে বেক্সিমকো গ্রুপের টেক্সটাইল ডিভিশনের এমডি ওসমান কায়সার চৌধুরীর স্বাক্ষরিত একটি চিঠি সম্প্রতি সরকারের চার উপদেষ্টা ও গভর্নরের কাছে দেওয়া হয়েছে। এতে তিনি ব্যবসা পরিচালনার স্বার্থে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সব বকেয়া সুদবিহীন ব্লক হিসাবে স্থানান্তর করে এগুলো পরিশোধে ১০ বছর সময় চেয়েছেন। ব্যাংকাররা মনে করেন, এ দাবির অর্থ হলো এখন তারা ঋণ পরিশোধ করতে পারবেন না। ঋণ পরিশোধ না করলে খেলাপি হবেন। খেলাপি হলে নতুন ঋণ পাওয়া কঠিন হবে। তবে বিদায়ি সরকারের গভর্নর ঋণখেলাপিদের স্বার্থে নতুন একটি সার্কুলার করে গেছেন। সেটি হলো, কোনো গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলে ওই প্রতিষ্ঠান নতুন ঋণ পাবে না। কিন্তু গ্রুপের বা একই উদ্যোক্তার অন্য প্রতিষ্ঠানের ঋণ পেতে কোনো সমস্যা হবে না। এ বিধানের কারণে এখন ঋণখেলাপিরাও নতুন ঋণ পাচ্ছেন। কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ নিয়ে সেগুলো পাচার করে দিচ্ছেন বা অন্য প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করছেন। নতুন কোম্পানি খুলে আবার নতুন ঋণ নিচ্ছেন। এ প্রক্রিয়ায় ঋণখেলাপিরাও ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। ব্যাংক খাত সংস্কারে গঠিত ট্রাস্কফোর্স অন্যান্য কার্যক্রমের পাশাপাশি এ ধরনের ঋণ সুবিধা বন্ধ করে দেবে বলে জানা গেছে। সে লক্ষ্যে তারা কাজ করছেন।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024
Developed BY www.budnews24.com