চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেছেন, পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে লাইনার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ৩২৮ কনটেইনার পণ্য চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। নতুন রুটটি (করাচি-চট্টগ্রাম) চালু হওয়ায় বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে। এতে সাশ্রয়ী ব্যয় ও সময়ে উভয় দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে নতুনভাবে গতিশীলতা সৃষ্টি হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের শহিদ মো. ফজলুর রহমান মুন্সী অডিটরিয়ামে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি ১১ আগস্ট বন্দর চেয়ারম্যান হিসাবে যোগদান করেছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন্দরের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) মো. হাবিবুর রহমান, সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর এম ফজলার রহমান, সদস্য (অর্থ) মোহাম্মদ শহীদুল আলম, সদস্য (প্রকৌশল) কমডোর কাওছার রশিদ প্রমুখ।
এসএম মনিরুজ্জামান আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে গত তিন মাসে (আগস্ট থেকে অক্টোবর) কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে আট লাখ ৩০ হাজার ৫৮২টি। গত বছর একই সময়ের চেয়ে ৭৬ হাজার ৯৮৬টি কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেশি হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ১০ দশমিক ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। এছাড়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরের গত ৪ মাসে এক হাজার ৬৪৩ দশমিক ৮৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে রাজস্ব আয়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে রাজস্ব উদ্ধৃত ২৮ দশমিক ০১ শতাংশ বেশি।
রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, গত ১৬ জুলাই চট্টগ্রাম বন্দরে ৪৫ দশমিক পাঁচ হাজার কনটেইনার উপস্থিতি ছিল। এ সময় বন্দরে ধারণ ক্ষমতার প্রায় ৮৫ শতাংশ এলাকাজুড়ে কনটেইনার ছিল। তবে তিন মাসে পদ্ধতিগত উদ্ভাবনের মাধ্যমে তা ৩৪ হাজারে নামিয়ে আনা হয়। আগে জাহাজের অপেক্ষমাণ সময় ছিল ৬ থেকে ৮ দিন। বর্তমানে অপেক্ষমাণ সময় একদিনে নামিয়ে আনা হয়েছে।
বন্দর চেয়ারম্যান বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে আধুনিক পোর্ট ইকোসিস্টেমে পোর্ট কমিউনিটি সিস্টেম প্রবর্তন, ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিকীকরণের মাধ্যমে একটি বিশ্বমানের বন্দরে পরিণত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারি পত্র ও নথি আদান-প্রদান সহজে এবং দ্রুত সম্পাদনের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দরের শতকরা ৮০ ভাগ কাজ ডি-নথি পদ্ধতিতে সম্পাদনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহিঃনোঙরে অবস্থানরত জাহাজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ১২৮ জন ওয়াচম্যান নিবন্ধন করার লক্ষ্যে প্রার্থীদের শারীরিক বাছাই কার্যক্রম সম্পন্ন করা হয়েছে। বহিঃনোঙরে অবস্থানরত জাহাজের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য পণ্য সরবরাহকারী লাইফ বোটগুলোতে নির্দিষ্ট (হলুদ) রং করাসহ এআইএস ও ট্র্যাকিং সিস্টেম সংযোগ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
বন্দরের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরে সব ধরনের সিন্ডিকেট, মনোপলি ভেঙে ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। ইতোপূর্বে ২৩টি শিপ হ্যান্ডলিং অপারেটর লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যার সুফল ইতোমধ্যে বন্দর ব্যবহারকারীরা পেতে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, কর্ণফুলী নদীর সদরঘাট থেকে বাকলিয়ার চর পর্যন্ত বর্জ্য অপসারণ ও এর মাধ্যমে নাব্যতা বৃদ্ধি প্রকল্পে গত তিন মাসে ১ দশমিক ৩৭ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২৫ সালের জুনে সমাপ্ত হবে। বন্দরের চেয়ারম্যান বলেন, নিউমুরিং টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব আন্তর্জাতিক অপারেটর ডিপি ওয়ার্ল্ডকে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।