প্রশাসন ছাড়া বিসিএস অন্য ২৫টি ক্যাডারের ১৯৪ জন উপসচিবের পদোন্নতি ঝুলে গেছে। যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জন্য ইতোমধ্যেই তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে আবেদন করেছেন। তাদের দাবি- সার্ভিসপুলে আসার আগেও তিন-চারবার পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন। সর্বশেষ গত ১৮ এবং ২০ আগস্ট দুই দফায় যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হলেও অন্য ক্যাডার থেকে যারা এসেছেন, তাদের ১৭ শতাংশ (৪০ জন) কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে। বঞ্চিতদের সবাই ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানতে চাইলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস-উর রহমান গত মঙ্গলবার যুগান্তরকে বলেন, আগের প্রশাসনে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে একটু সময় লাগবে। দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকে অনেক সমস্যার সমাধান হয়েছে। আগামী দিনেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে আদার্স ক্যাডারের কিছু কর্মকর্তার পদোন্নতি হয়েছে। বাকিদের বিষয়টিও বিবেচনায় রয়েছে। সেক্ষেত্রে সবাইকে ধৈর্য ধরার অনুরোধ করেন তিনি। বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দাবি-উপসচিব হিসাবে সার্ভিসপুলে আসার পর সবাই সরকারের কর্মকর্তা। তখন তাদের আর কোনো ক্যাডার পরিচিতি থাকে না। সুতরাং পদোন্নতি পাওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের সমস্যা থাকার কথা নয়।
গত মাসে প্রশাসন ক্যাডারের বঞ্চিত কর্মকর্তারা সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন ১০ দিনের মধ্যে। সেখানে প্রশাসন ক্যাডারের ১১, ১৩, ১৭ এবং ১৮ ব্যাচের কর্মকর্তারা রয়েছেন। বিসিএস ১৩ থেকে ২২ ব্যাচের অন্য ক্যাডারের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের অনেকে সচিব ও অতিরিক্ত পদে পদোন্নতি পেয়ে অবসরে গেছেন। এই ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের অধিকাংশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব হিসাবে অবসরে গেছেন। একই ব্যাচের আদার্স ক্যাডার থেকে সার্ভিসপুলে আসা কর্মকর্তারা এখনো উপসচিব। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৫ ব্যাচের অধিকাংশ কর্মকর্তা ইতোমধ্যে অতিরিক্ত সচিব হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছেন। বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের ১৫ ব্যাচ থেকে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সচিব হিসাবে পদোন্নতিও পেয়েছেন। পক্ষান্তরে বিসিএস ১৫তম ব্যাচের আদার্স ক্যাডারের সার্ভিসপুলে আসা কর্মকর্তারা এখনো উপসচিব। বিসিএস ১৭ ও ১৮ ব্যাচের সিংহভাগ কর্মকর্তা অতিরিক্ত সচিব হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছেন। আদার্স ক্যাডারের একই ব্যাচের সার্ভিসপুলে আসা কর্মকর্তাদের অনেকেই এখনো উপসচিব। বিসিএস ২০, ২১ এবং ২২তম ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রতিটি ব্যাচের অধিকাংশ কর্মকর্তা যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি পেয়েছেন। কিন্তু আদার্স ক্যাডারের ওই সব ব্যাচের সার্ভিসপুলে আসা কর্মকর্তারা এখনো উপসচিব।
বঞ্চিত কর্মকর্তাদের দাবি-পদোন্নতি নীতিমালা নিয়ে দায়ের করা উচ্চ আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, আদার্স ক্যাডারের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকে সার্ভিসপুলে আসা উপসচিবদের আগের পরিচিতি বিলুপ্ত হবে। অর্থাৎ তারা অন্য সব উপসচিবের সঙ্গে যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব হিসাবে পদোন্নতির জন্য বিবেচিত হবে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিয়মনীতি মানতে চায় না। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন অজুহাতে সার্ভিসপুলে আসা কর্মকর্তাদের পদোন্নতি আটকে দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে তারা আবেদন জমা দিয়েছেন। এর আগে তারা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষযটি তুলে ধরেছেন। তারা পদোন্নতির প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তবে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি) সভা ডাকা হচ্ছে না। সর্বশেষ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে বলা হয়েছে, তাদের পদোন্নতির জন্য গোয়েন্দা প্রতিবেদন সংগ্রহ চলছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে এসএসবি সভা করে পদোন্নতির ব্যবস্থা করা হবে। জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, সবার পদোন্নতি নিশ্চিত করা যাবে-এমন ন্যায়ভিত্তিক প্রশাসনিক পদ্ধতি দেশে গড়ে ওঠেনি। যোগ্যতার সব সূচক সবাই পূরণ করতে পারেন না। আবার অনেকে যোগ্য কর্মকর্তাও পদোন্নতি বঞ্চিত হন। বিধিবিধান হালনাগাদ না করলে এ সমস্যার সমাধান পাওয়া যাবে না।