সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৫ অপরাহ্ন

এমন বিদায় সাকিব নিজে চেয়েছিলেন তো?

  • সময়: বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ৫.০৮ পিএম
  • ৪৯ জন

প্রেম ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়, হয় নাকি?’—কবি জীবনানন্দ দাশের কবিতার এই চরণটির বাস্তব উদাহরণ হয়ে রইলেন সাকিব আল হাসান। নয়তো দীর্ঘ ক্যারিয়ার জুড়ে পারফরম্যান্সে উজ্জ্বল সাকিব কেন এভাবে বিদায় বলবেন? তার তো মাথা উঁচু করে বীরের বেশে বিদায় নেওয়ার কথা।

দেশকে বিশ্ব মঞ্চে সম্মানিত করা সাকিব কখন যে দেশের হয়ে তার ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি খেলে ফেলেছেন তিনি নিজেই জানেন না। জানেন না তার ভক্তরাও। অথচ সবশেষ বিশ্বকাপেও দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি বিশ্বকাপ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়েছেন এক সময়ের বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেটও তার। রেকর্ড ৫০টি।

বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ৪৩টি ম্যাচ খেলেছেন সাকিব। যা ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মার পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। শুধু কি ম্যাচের সংখ্যা। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও উইকেট তোলার বিচারে সেরা তিনজনের একজন সাকিব। তার ওপরে কেবল নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদি ও আফগানিস্তানের রশিদ খান।

এ তো গেল বোলার সাকিবের কীর্তির কথা।

ব্যাটার সাকিবও বাংলাদেশিদের মধ্যে সেরা। ১২৯ ম্যাচে ২৫৫১ রান তার। বেশি রান তোলার বিচারে বিশ্বের ১৩ তম ক্রিকেটার তিনি।

অলরাউন্ডার হিসেবে দীর্ঘ সময় শীর্ষস্থানে ছিলেন সাকিব। সেই তিনি তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচটি খেলবেন অথচ, মাঠে গার্ড অব অনার পাবেন না! তাকে ঘিরে সংবর্ধনা জানাবে না ক্রিকেটাররা। মাঠে জড়ো হবে না হাজারো ক্রিকেট ভক্ত; এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। যদিও দিন শেষে সবই হয়েছে। আর এর পেছনে দায়টা কি সাকিবের নয়?

ক্রিকেটের বাইরে রাজনীতিতে নাম লিখিয়েছেন সাকিব। নানা সময় বিতর্কে জড়ানো সাকিব সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছেন এখানেই। রাজনীতিতে জড়িয়ে সংসদ সদস্য পদ পাওয়ার ৬ মাস না যেতেই ক্ষমতা হারাতে হয়েছে তাকে। দলের অপকর্মের দায় বর্তেছে তার কাঁধেও। সাকিব নিজেও দলের বিরুদ্ধে না গিয়ে সায় দিয়েছেন। ফলে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

শুধু কি তাই! শেষ দিকে তার দায়িত্ববোধ ও পেশাদারিত্ব নিয়েও প্রশ্ন তোলার যথেষ্ট সুযোগ ছিল। দলের হয়ে সিরিজ খেলার সিদ্ধান্ত নিতেন মর্জি মাফিক। অথচ বিদেশি লিগে খেলার অফার পেলে কিছুতেই হাতছাড়া করতেন না সাকিব।

খেলার বাইরেও বড় একটা জগত তৈরি করে ফেলেছিলেন মিস্টার সেলিব্রেটি! রেস্তোরাঁর ব্যবসা, শেয়ার বিজনেস, কাঁকড়া ও চিংড়ি ঘের, সোনার ব্যবসা কোথায় সংশ্লিষ্টতা নেই সাকিবের! বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ব্র্যান্ড এম্বাসেডর, বিভিন্ন কোম্পানি ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শো রুম উদ্বোধন, বিজ্ঞাপনে অভিনয় সবই চালিয়েছেন সমান তালে। এতো ব্যস্ততার মাঝেও রাজনীতিকে প্রবেশ করেন সাকিব। পরিবার থাকে যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানেও সময় দিতে হয়। এতো ব্যস্ততার ভিড়ে শেষ দিকে ক্রিকেটটাই হয়ে গেছে তার কাছে গৌন।

এক সময়ে যে ভক্তরা সাকিবকে ভালোবাসতো, তাকে নিয়ে বাজি ধরত; সেই তারাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন সাকিবের ওপর থেকে। ক্ষোভে সাকিবের রাজনৈতিক অফিস পুড়িয়ে দেওয়া হয় প্রথমে। পরে তার বিরুদ্ধে হয়েছে হত্যা মামলা ও সবশেষ শেয়ার বাজার কারসাজির অভিযোগে ৫০ লাখ টাকা জরিমানা। সবই দেখতে হয়েছে সাকিবকে। পরিস্থিতি এমন যে দেশে ফিরে ফুলেল সংবর্ধনা পাওয়া সাকিবকে এখন ভাবতে হচ্ছে দেশে ফিরতে গেলে নিরাপত্তা নিয়ে।

আর সেই কারণেই ক্যারিয়ারটাকে আর বাড়াতে চাইলেন না সাকিব। অনেকটা ভয়েই বলতে হবে ক্রিকেটকে গুড বাই বলে দিয়েছেন সাকিব। কানপুর টেস্টের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসে জানিয়েছেন, ক্যারিয়ারের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা খেলে ফেলেছেন তিনি। আসন্ন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে চান শেষ টেস্ট। যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত হয় তবে।’

অর্থাৎ দেশে আসতে না পারলে কানপুর টেস্টই হয়ে থাকবে সাকিবের শেষ টেস্ট।

তবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন এই অলরাউন্ডার। তবে সেই সুযোগ তিনি পাবেন কিনা; সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে সময়। কেননা, সাকিব কখন যে নিজের ক্ষতি করেছেন তা তো তিনি নিজেই জানেন না। ব্যাপারটা অনেকটা তারাপদ রায়ের কবিতার মতো, আমরা বুঝতে পারিনি আমাদের কখন সর্বনাশ হয়ে গেছে!

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024
Developed BY www.budnews24.com