অবিরাম ভারি বর্ষণে এক প্রকার তলিয়ে গেছে কক্সবাজার। রাস্তাঘাট পানিতে সয়লাব হওয়ায় বাসিন্দাদের সঙ্গে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সাপ্তাহিক ছুটিতে বেড়াতে আসা অন্তত ২৫ হাজার পর্যটক। জেলার ৯টি উপজেলার অন্তত ২০টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে হাজার হাজার মানুষ। একটানা ভারি বর্ষণে পাহাড়ধসে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে।
এর মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে একই পরিবারের তিনজন এবং উখিয়ায় ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। দুটি ঘটনাই ঘটেছে বৃহস্পতিবার রাতে।
নিহতরা হলো সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককুল গ্রামের মিজানুর রহমানের স্ত্রী আঁখি আকতার (২৫) এবং দুই শিশুকন্যা মিহা জান্নাত নাঈমা (৭) ও লতিফা ইসলাম (২)। অপরদিকে উখিয়া উপজেলার হাকিমপাড়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মারা গেছে রোহিঙ্গা কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম (৩০), আব্দুল হাফেজ (১০) ও আব্দুল ওয়াহেদ (৮)।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্প ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত অতিরিক্ত ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সামশুদ দৌজা নয়ন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত এর আগে গত ১৯ জুন পাহাড়ধসে উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এক দিনে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২১ জুন কক্সবাজার শহরের বাদশাঘোনা এলাকায় পাহাড়ধসে ঘুমন্ত স্বামী-স্ত্রী নিহত হন। গত ৩ জুলাই উখিয়ায় দুটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড়ধসে দুজনের মৃত্যু হয়েছে।
এরপর ১১ জুলাই কক্সবাজার শহরে এক শিশু ও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে চলতি বর্ষা মৌসুমে জেলায় পাহাড়ধসে ২৭ জনের মৃত্যু হলো।
কক্সবাজারে সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল শুক্রবার। কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ তোফায়েল হোসেন জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা থেকে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে ২০১৫ সালের ২৪ জুন এক দিনে ৪৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল।
পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় শহরটির প্রধান সড়ক ও সাগর পারের কলাতলি এলাকা সামান্য বৃষ্টিতেই তলিয়ে যায়। শহরের কমপক্ষে ২০টি সড়ক ও উপসড়কসহ গলি হাঁটু এবং কোমরপানিতে তলিয়ে গেছে। সাগরপারের কলাতলি সড়কটি তলিয়ে যাওয়ায় হোটেলকক্ষেই আটকা পড়েছেন পর্যটকরা।
হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনালের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন কালের কণ্ঠকে জানান, তাঁদের ২৫টি কক্ষে অর্ধশতাধিক পর্যটক রয়েছেন। ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা কাজী শাহাবুদ্দিন নামের একজন পর্যটক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘একদম অপরিকল্পিত একটি পর্যটন শহর এটি। একটুখানি বৃষ্টি হলেই হোটেল থেকেও বের হওয়া যায় না।’
কক্সবাজার হোটেল-মোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ‘সাপ্তাহিক দুই দিনের ছুটির প্রথম দিন শুক্রবারে অনেক পর্যটক এসেছেন। তাঁদের অনেকেই আবার ফিরেও গেছেন। এখনো কমপক্ষে ২৫ হাজার পর্যটক অবস্থান করছেন কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে।’