রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৩ পূর্বাহ্ন

পেঁয়াজের দাম কমাতে আমদানির সুপারিশ ট্যারিফ কমিশনের

  • সময়: রবিবার, ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ৯.৩৪ এএম
  • ১০ জন

বাজারে হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় সরবরাহ পরিস্থিতি পর্যালোচনার পর পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি)। সংস্থাটি বলছে, মসলাজাতীয় এই পণ্যের কেজিপ্রতি মূল্য সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ওঠায় দ্রুত আমদানির অনুমতি দেওয়া যেতে পারে। সুপারিশটি গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য সচিব ও কৃষি সচিবের কাছে পাঠিয়েছে বিটিটিসি।

তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি অনুবিভাগ) ড. মাহমুদুর রহমান গতকাল শনিবার বিকালে আমার দেশকে বলেন, আমিও এ ধরনের একটি সংবাদ পত্রপত্রিকায় দেখেছি; কিন্তু ট্যারিফ কমিশনের এ ধরনের কোনো সুপারিশ কিংবা চিঠি পাইনি। যেহেতু চিঠি পাইনি, সেহেতু বিষয়টি নিয়ে মন্তব্যের সুযোগ নেই।

পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে সরকারের মনোভাব জানতে চাইলে সরকারের এই কর্মকর্তা বলেন, এটা একটা নীতিগত বিষয়; কৃষক ও ভোক্তাসহ দেশের সার্বিক স্বার্থের কথা বিবেচনায় রেখেই উভয় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সার্বিক বিষয় পর্যালোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেহেতু এ বিষয়ে আমার মন্তব্য সমীচীন হবে না।

অতিরিক্ত সচিব বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য না করলেও গতকাল শনিবার বিকালে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইং বিভাগের অতিরিক্ত পরিচালক (মনিটরিং ও বাস্তবায়ন) ড. জামাল উদ্দীন আমার দেশকে বলেন, এ মুহূর্তে দেশে পেঁয়াজের সংকট নেই। বৃহস্পতিবার বিকালে আমরা সার্বিক পরিস্থিতি জানিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর যে প্রতিবেদন দিয়েছি, তাতে এখনো কৃষকের হাতে তিন লাখ ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ আছে। বাজারেও সরবরাহ স্বাভাবিক, কিন্তু অসাধু চক্র কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানির পাঁয়তারা করছে।

ট্যারিফ কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে ড. জামাল বলেন, তারা আমদানিকারকদের দ্বারা ‘মোটিভেটেড’ হয়ে এ ধরনের সুপারিশ করে থাকতে পারে। বাস্তবে দেশে পেঁয়াজের সংকট নেই। গত বছর তো একই সময় ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম উঠলেও এ বছর এখনো ওইরকম বাড়েনি; ফলে হঠাৎ কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা টাকা বৃদ্ধি- এটা কারসাজিচক্রের কাজ। পেঁয়াজ আমদানির আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) না দেওয়ায় তারা কৃষি সচিবের বিরুদ্ধে রিট করেও আদালত থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পায়নি। তাই বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আইপি নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, কারসাজি করে দাম বাড়ালেও সেটা কদিনের মধ্যেই স্থিতিশীলতায় ফিরবে। কেননা, এখনো কৃষকের হাতে তিন লাখ ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ আছে; তারা এখন বেশি দাম পাওয়ায় ছেড়ে দিচ্ছেন। ফলে আগামী দুই মাস কোনো সংকট হবে না। এছাড়া গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ডিসেম্বরের প্রথমার্ধেই বাজারে আসবে। এছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে মুড়িকাটা পেঁয়াজও আসতে শুরু করবে। তাই কারসাজিচক্রের অসৎ খেলায় পেঁয়াজ নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এমতাবস্থায় পেঁয়াজ আমদানির কোনো প্রয়োজন নেই।

ট্যারিফ কমিশন বলছে, কিছু মধ‍্যস্বত্বভোগী কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ এই সময়ে ৯০ টাকার মধ্যে থাকার কথা থাকলেও তা বেড়ে এখন ১১৫ টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ পার্শ্ববর্তী দেশে এই পেঁয়াজের দাম এখন প্রায় ৩০ টাকার মধ্যে আছে। তাই সীমিত পরিমাণে পেঁয়াজ আমদানির জন‍্য দ্রুত অনুমতি দিতে কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে।

সংস্থাটির সুপারিশে বলা হয়েছে, পেঁয়াজের উচ্চ দামের সুবিধা কৃষক পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগীরা এ সুযোগ নিচ্ছে। তাই পেঁয়াজ আমদানির সুযোগ দিলে বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমবে। ভোক্তারা যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ কিনতে পারবেন।

আমদানিকারকদের মাধ্যমে ‘মোটিভেটেড’ হয়ে পেঁয়াজ আমদানির সুপারিশ করা হয়েছে কি না জানতে ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খানসহ একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

এদিকে গত অর্থবছরে দেশে ৪৪ লাখ ৪৮ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। তবে সংরক্ষণ সমস্যাসহ নানা কারণে পেঁয়াজ নষ্ট হয়। তাই গত অর্থবছরে ৩৩ লাখ টনের মতো পেঁয়াজ বাজারে এসেছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, এখনো কৃষকের হাতে তিন লাখ ৬০ হাজার টন পেঁয়াজ আছে।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন আমার দেশকে বলেন, ‘পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়ীদের কারসাজি আছে। দেশে ভালো উৎপাদন হলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানির পাঁয়তারা করা হচ্ছে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved by BUD News 24-2025
Developed BY www.budnews24.com