দুপুর ২টা। রাজধানীর বাড্ডা এলাকা থেকে এসেছেন শামীম-মুন্নি দম্পতি। ক্ষুধার তাড়নায় গেলেন এক রেস্তোরাঁয়। বিধিবাম, খাওয়ার পরপরই তাদের পেটে মোচড়। শুরু হয় পেটব্যথা। বেশ কয়েকবার যেতে হয় টয়লেটে। দুজনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। শুধু যে এ দম্পতি তা কিন্তু নয়। তাদের মতো অনেকেই বাণিজ্যমেলায় এসে রেস্তোরাঁগুলোতে খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
বিগত বছরগুলোতে বাণিজ্যমেলার রেস্তোরাঁগুলোয় তদারকি করত ভোক্তা অধিকার। এবার কোনো তদারকি নেই। ফলে মানহীন রেস্তোরাঁয় ছেয়ে গেছে এবারের বাণিজ্যমেলা। একে তো মানহীন খাবার। তার ওপর দাম আকাশছোঁয়া। ফলে দুদিক থেকেই ঠকতে হচ্ছে মেলায় আগতদের। মানহীন খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মেলার কর্মচারীরাও। বাধ্য হয়েই রেস্তোরাঁর খাবার চড়া দামে কিনতে হচ্ছে স্টলের কর্মচারী ও দর্শনার্থীদের।
জানা যায়, ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় দেশি-বিদেশি পণ্যের স্টল ও প্যাভিলিয়নসহ ৩৬১টি স্টল রয়েছে। মেলায় নামিদামি ব্র্যান্ডগুলোর পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও মাঝারি ধরনের ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেন। মেলার স্টলের প্রাণ হচ্ছে বিক্রয়কর্মী ও দর্শনার্থী। তারা মেলায় আগত দর্শনার্থীদের পণ্য সম্পর্কে বুঝিয়ে বিক্রি করেন। এ কারণে প্রায় প্রতিটি প্যাভিলিয়ন ও স্টলেই ১০ থেকে ১২ জন করে ১ মাসের জন্য খণ্ডকালীন কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
মেলায় প্রায় ৪ হাজার বিক্রয়কর্মী রয়েছেন। বাণিজ্যমেলার আশপাশে বাড়ি ভাড়া বেশি হওয়ার অনেক কর্মচারীই ঢাকাসহ আশপাশ থেকে আসা-যাওয়া করেন। মেলা কর্তৃপক্ষের বাধ্যবাধকতার কারণে কর্মচারীদের পক্ষে দুপুরের খাবার বাসা থেকে নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। ফলে বাধ্য হয়েই তাদের চড়া দামে ভেতর থেকে খাবার কিনে খেতে হয়।
প্রতিবছরই মেলায় নকল হাজির বিরিয়ানি বিক্রি হলেও কর্তৃপক্ষকে কোনো প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। মেলায় দর্শনার্থীদের জন্য মেলা কর্তৃপক্ষ খাবারের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। এ নিয়েও অভিযোগের শেষ নেই দর্শনার্থীদের।
নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী চিকেন বিরিয়ানির মূল্য ধরা হয়েছে ৩৯৫ টাকা, চিকেন চাপ ৪ ভাগের ১ ভাগ ২৮৫ টাকা, চিকেন মাসালা ৪ ভাগের ১ ভাগ ৩৩০ টাকা, এক প্লেট চিকেন ফ্রাই ৭৫০ টাকা, এক পিস পরোটার দাম ৫৫ টাকা, এক প্লেট চিকেন সবজির দাম ৫৫০ টাকা ধরা হয়েছে।
এসব খাবার বাইরে অর্ধেকের চেয়েও কম দামে মিলছে। তার ওপর খাবারের মান নিয়ে রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। এদিকে, মেলার ৮তম দিনে তীব্র শীত উপেক্ষা করে মেলায় দর্শনার্থীদের সমাগম দেখা গেছে। এতে করে বিক্রি বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। তীব্র শীত পড়ায় সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা গেছে শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে।
কয়েকজন কর্মচারী অভিযোগ করে বলেন, আমাদের এক মাসের আয়ের বেশিরভাগ টাকাই খরচ হচ্ছে মেলার ভেতরে খাবার খেতে। আমাদের বেতন আর কত ধরা হয়েছে। মেলায় খাবার বিক্রির জন্য রেস্তোরাঁ মালিকদের নিয়ে সিন্ডিকেট করা হয়েছে। তারা কাউকেই বাসা থেকে রান্না করা খাবার অথবা বাইরে থেকে খাবার আনতে দেওয়া হচ্ছে না। আনতে গেলেই বাধা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের বিষয়টি মেলা কর্তৃপক্ষের বিবেচনা করা উচিত। না হলে সামনের বার আসবেন না অনেকেই।
শামীম-মুন্নি দম্পতি বলেন, উত্তর বাড্ডা থেকে এসেছি। দুপুরের খাবার খেলাম এক রেস্তোরাঁয়। খাওয়ার পরপরই পেটে মোচড় দেয়। এরপর বেশ কয়েকবার টয়লেটে যেতে হয়। একপর্যায়ে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। প্রতিবছরই মেলায় আসি। তবে এবারের মতো মানহীন খাবার কখনো খাইনি। এটা নিয়ে মেলা কর্তৃপক্ষ তো কিছু করে না। মেলায় খাবারের যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে তা অনেক বেশি। খাবারের দাম অনুযায়ী খাবারের স্বাদ ও মান নেই একেবারেই। সিদ্ধিরগঞ্জ থেকে এসেছেন আকাশ মিয়া।
তিনি বলেন, এক পিস চিকেন সবজির দাম নিয়েছে ৭৫০ টাকা। অথচ এর অর্ধেকের চেয়েও কম দামে মেলার বাইরে থেকে খাবার পাওয়া যাচ্ছে। এত দাম নেওয়ার পরও খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে কোনো মাথাব্যথা নেই তাদের।
মেলায় যমুনার প্যাভিলিয়নে ক্রেতার ভিড়: বাণিজ্যমেলায় যমুনার প্যাভিলিয়নে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় দেখা গেছে। যমুনা ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড অটোমোবাইল লিমিটেডের ম্যানেজার রাজিব সাহা বলেন, বিগত বছরের মতো এবারও ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী মেলায় আমরা উন্নতমানের পণ্যসামগ্রী নিয়ে এসেছি।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-রাইসকুকার, রেফ্রিজারেশন, মাইক্রোওভেন, ইলেকট্রনিক ওভেন, গ্যাস বার্নার, কারিকুকার, ইনফারেন্সকুকার, রুমহিটার, ভেন্ডার, মিকসারভেন্ডার ও জুসার। এসব গৃহস্থালি পণ্য আমরা বিশেষ ছাড়ে বিক্রি করছি।
তিনি বলেন, এছাড়া যমুনা ইলেকট্রনিক্সের রেফ্রিজারেটর (ডাবল ডোর ও সিঙ্গেল ডোর) বিশেষ মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। স্মার্ট টিভি ও গুগল টিভিসহ সব পণ্য যমুনার নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে তৈরির কারণে সহজে ও কম দামে গ্রাহকের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি আমরা।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সচিব ও বাণিজ্যমেলার পরিচালক বিবেক সরকার বলেন, মেলার ভেতরের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব রান্নাঘর রয়েছে। খাবারের মান নিয়ন্ত্রণে ভোক্তা অধিকার মেলায় রয়েছে। কেউ অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। খাবারের দাম নিয়ে এখনো আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। যদি এমন অভিযোগ করেন তাহলে বিষয়টি নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।