রংপুরের গংগাচড়া উপজেলায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সিয়াম হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। মাদকের টাকা জোগাতেই সিয়ামকে হত্যা করে বলে জানায় পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও গংগাচড়া মডেল থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক ডেভিট হিমাদ্রি বর্মা জানান, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে গ্রেফতার হওয়া স্বাধীন আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। পরে আদালত স্বাধীনকে জেলহাজতে প্রেরণ করেন।
নিহত সিয়াম (১৯) গংগাচড়া থানাধীন খলেয়া ইউনিয়নের লালচাঁদপুর নয়াপাড়া এলাকার আলতাফ হোসেনের ছেলে। ভিন্নজগৎ বিনোদন পার্কে নিজস্ব ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলার পাশাপাশি খলেয়া গঞ্জিপুর বাজারে ইট ও বালুর ব্যবসা করতেন সিয়াম। আর ঘাতক স্বাধীন একই ইউনিয়নের মাঝাপাড়া গ্রামের আনারুল ইসলামের পুত্র।
তদন্তকারী কর্মকর্তা জানান, ঘাতক স্বাধীন মাদকাসক্ত ও এলাকায় ঋণে জর্জরিত। হত্যার ৩-৪ দিন আগে সিয়াম তার ক্যামেরাটি চল্লিশ হাজার টাকায় বিক্রয় করেন। কোনোভাবে এ কথাটি ঘাতক স্বাধীন জানতে পারেন। আর্থিক অভাব-অনটন মেটাতে ও নেশার টাকা সংগ্রহ করার জন্য সিয়ামের কাছে থাকা ক্যামেরা বিক্রির টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে স্বাধীনসহ তার সহযোগী খুনিরা সিয়ামকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত রোববার আনুমানিক রাত সাড়ে ১০টায় কৌশলে মোবাইল ফোনে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প এলাকায় ক্যানেলের বাঁধের উপর সিয়ামকে ডাকে। সিয়াম তিস্তা ব্যারেজ এলাকায় উপস্থিত হলে স্বাধীন ও তার সহযোগী খুনিরা ছুরি দিয়ে সিয়ামের গলা ও মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকে। পরে ঘাতক স্বাধীন নিজের পরিহিত আকাশি রংয়ের টি-শার্ট খুলে সিয়ামের গলাচেপে মৃত্যু নিশ্চিত করে।
মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সিয়ামের পকেটে থাকা ১১৫০ টাকা, মোবাইল ফোন ও সিয়ামের ব্যবহৃত মোটরসাইকেল নিয়ে খুনিরা পালিয়ে যায়।
গত সোমবার গংগাচড়া থানাধীন খলেয়া ইউনিয়নের লালচাঁদপুর নয়াপাড়া এলাকায় (ভিন্নজগৎ সংলগ্ন) তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের স্লুইচগেটের পাশে লাভলু মিয়ার ধানখেত থেকে সিয়ামের মৃতদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ।
এ সময় মরদেহের পাশে পড়ে থাকা রক্তমাখা আকাশি রংয়ের টি-শার্টের সূত্র ধরে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে নামে পুলিশ। বিষয়টি জানাজানি হলে আসামিরা গা-ঢাকা দেয়।
এ ঘটনায় সিয়ামের বাবা আলতাফ হোসেন মঙ্গলবার বাদী হয়ে গংগাচড়া মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন।
পরে গংগাচড়া থানা পুলিশ ও র্যাবের যৌথ অভিযানে শুক্রবার ঘাতক স্বাধীনকে তার বাড়ি থেকে আটক করা হয়।
বিশিষ্ট সমাজসেবক জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, মাদকে ছড়াছড়ির কারণে সিয়ামের মতো নির্দোষ ছেলেকে জীবন দিতে হলো। আমরা সিয়াম হত্যার বিচার চাই, আর মাদকমুক্ত সমাজ চাই।
গংগাচড়া মডেল থানার ওসি আল-এমরান বলেন, রংপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরিফ উদ্দিনের প্রত্যক্ষ দিকনির্দেশনায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই এ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনসহ ঘটনায় জড়িত স্বাধীনকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।