শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৫৩ অপরাহ্ন

‘না’ ভোট ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে যে প্রশ্ন

  • সময়: রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১১.২৯ এএম
  • ২৯ জন

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের ইতিহাসে ভোটাররা প্রথমবারের মতো ‘না ভোট’ প্রয়োগ করেছিল। ওই সময় জারি করা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ধারা ৩১(৫)(বিবি)-তে এ বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এ বিধান অনুযায়ী ব্যালট পেপারের সবশেষ প্রার্থীর স্থানে লেখা থাকে ‘ওপরের কাউকে নয়’ এবং ভোটারদের সহজ পরিচিতির জন্য মার্কা রাখা হয় ‘ক্রস’ (ঢ)।

তখন সারা দেশে মোট প্রদত্ত ৬ কোটি ৯৭ লাখ ৫৯ হাজার ২১০ ভোটের মধ্যে ৩ লাখ ৮২ হাজার ৪৩৭টি ‘না ভোট’ পড়েছিল।

উল্লেখ্য, ওই নির্বাচনে ৩৮টি দল অংশগ্রহণ করলেও মাত্র ৬টি দল ‘না ভোটের’ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল। তার মানে ‘না ভোট’ সপ্তম স্থানে ছিল। এ বিধান নিয়ে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকরা সন্তুষ্ট ছিলেন না। তাই পরবর্তী সময়ে সরকার এ ধারাটি বাদ দেয় এবং বিএনপি এ বিষয়ে সরকারের সঙ্গে দ্বিমত করেনি।

সংবিধান আইন ২০১১ (পঞ্চদশ সংশোধনী) পাশ হয় ২০১১ সালের ৩০ জুন এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন হয় ২০১১ সালের ৩ জুলাই। এ সংশোধনী দ্বারা সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতা পুনর্বহাল করা হয় এবং রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি সংযোজন করা হয়।

এ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম নায়ক শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির জনক হিসেবে স্বীকৃতিও দেওয়া হয়। এ সংশোধনীর দ্বারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করা হয়। জাতীয় সংসদে মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন সংখ্যা বিদ্যমান ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫০ করা হয়।

এছাড়া সংবিধানে ৭ অনুচ্ছেদের পরে ৭ (ক) ও ৭ (খ) অনুচ্ছেদ সংযোজন করে সংবিধান বহির্ভূত পন্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পথ রুদ্ধ করা হয়।

এ সংশোধনীর বিষয়টি উত্থাপন করেন সেই সময়ের আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের মধ্যে ২৯১-১ ভোটে বিলটি পাশ হয়।

২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনীর পর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর আওয়ামী লীগের অধীনে ৫ জানুয়ারির ওই নির্বাচনে যায়নি বিএনপি-জামায়াতসহ অনেক রাজনৈতিক দল।

যে কারণে একতরফা ওই নির্বাচনে ১৫৩টি আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয় লাভ করেন। অর্থাৎ ভোটের আগেই আওয়ামী লীগের বিজয় নিশ্চিত হয়ে যায়।

২০০৭ সালে ড. এটিএম শামছুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন তখন বেশ কিছু নির্বাচনি সংস্কার করেছিল।

তাদের উদ্যোগে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো ‘না’ ভোট চালু করা হয়।

পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আইন সংশোধন করে বাতিল করা হয় ‘না’ ভোট।

নির্বাচন বিশ্লেষক অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ বলছিলেন, যদি ‘না’ ভোট তখন বাতিল করা না হতো, তাহলে হয়তো এত বিশাল সংখ্যক আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে পারত না। নির্বাচনে কিছু মানুষ কেন্দ্রে যেত।

গত দুটি জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশের ভোটিং পদ্ধতি নিয়ে যত আলোচনা ও রাজনৈতিক বির্তক হয়েছে তা অন্য কোন ইস্যুতে আর হয়নি।

কেননা আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নুরুল হুদা ও কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন বিভিন্ন সময় ইভিএম’- এ ভোট আয়োজনের কথা বলেছেন।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ইভিএম’- এ ভোটের মাধ্যমে কিছু কিছু জায়গায় ইসির কিছু সফলতা ছিল।

কিন্তু গত দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তারা অর্ধেক আসনে ইভিএম’-এ ভোট করার সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছু হটেছে। আর ইভিএম ব্যবহার করেনি আউয়াল কমিশন।

নতুন কমিশন গঠনের পর নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার সংস্কারের শুরুতেই তাই গুরুত্ব পাবে নির্বাচন পদ্ধতি।

সেক্ষেত্রে ভোটিং ব্যবস্থা আরও আধুনিক করা যায় কি না সে বিষয়টিও গুরুত্ব পাবে আলোচনায়, বলছিলেন অধ্যাপক আহমেদ।

একই সঙ্গে তিনি বলেন, প্রবাসী ভোটাররা কখনো ভোট দিতে পারে না বিধান না থাকার কারণে। আমার মতামত হচ্ছে তাদের সে সুযোগ থাকা উচিত। এক্ষেত্রে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে তা করা যেতে পারে।

আপনার সামাজিক মাধ্যমে খবরগুলো শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও খবর পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

© All rights reserved © 2024
Developed BY www.budnews24.com