কদিন আগেই ঘরের মাটিতে শ্রীলংকার বিপক্ষে ২-০ তে টেস্ট সিরিজ হেরেছে বাংলাদেশ। টেস্টে এমন নাজুক অবস্থা দেখে ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ হিসেবে বাংলাদেশকে পেয়ে খানিকটা আনন্দিত হয়েছিল পাকিস্তান। সিরিজ শুরুর আগে পিসিবির সাবেক নির্বাচক বাসিত আলী তো বলেই বসেছিলেন, একমাত্র বৃষ্টিই পারে বাংলাদেশকে বাঁচাতে।
বাসিত আলীর সেই উক্তি বাংলাদেশ মিথ্যা প্রমাণ করে দেয় রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্টেই। ১০ উইকেটের বড় জয়ে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। এবার দ্বিতীয় টেস্টে বৃষ্টির প্রার্থনায় বসা পাকিস্তানকে ৬ উইকেটে হারিয়ে দিয়ে ভাগিয়ে নিয়েছে গোটা সিরিজটায়। পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাই করে রীতিমতো লজ্জায় ফেলে দিয়েছে বাংলাদেশ।
জয়টা অবশ্য মিলতে পারত রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিনেই। যদি না শেষ বিকালে জয়ের পথে থাকা বাংলাদেশের পথ আগলে দাঁড়াত বৃষ্টি। জয় থেকে তখন ১৪৩ রান দূরে ছিল বাংলাদেশ, হাতে ১০ উইকেট। পঞ্চম দিনে বৃষ্টির প্রার্থনায় তাই পাকিস্তানকেই বসতে হয়েছিল। এরপরও নিশ্চিত হার যেনেও বোলারদের নিয়ে বড় গলা করে কথা বলেছিলেন দলটির কোচ জেসন গিলেস্পি। বাংলাদেশকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন, প্রথম ইনিংসে ২৬ রানে ৬ উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে হুঙ্কার দিয়ে বলে ছিলেন পঞ্চম দিনে তার বোলাররা আরও নির্মম হবে।
তবে বাংলাদেশি ব্যাটাররাও যে জবাবটা দিতে শিখে গেছে সেটা হয়তো ভুলে গিয়েছিলেন গিলেস্পি। প্রথম ইনিংসে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে থেকে ঘুরে দাঁড়ানো বাংলাদেশ যে এই টেস্টে অন্তত হারছে না, সেটা বোধয় তখনও বুঝতে পারেননি এই অজি কিংবদন্তি। শেষ পর্যন্ত তাই হারই সঙ্গী হয়েছে তার। আঘাতটা বোধয় আর সবার চেয়ে একটু বেশিই পাবেন তিনি। কেননা, নিজের প্রথম অ্যাসানমেন্টেই যে ঘরের মাঠে বাংলাদেশের বিপক্ষে ধবলধোলাই হতে হয়েছে তার দলের। এ কথা কি করে ভুলবেন তিনি।
প্রকৃতি নাকি সাহসীদের পক্ষে থাকে। এখানেও তাই। পঞ্চম দিনে বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকলেও নির্ধারিত সময়েই মাঠে গড়িয়েছে খেলা। ৪২ রানে পঞ্চম দিনে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশ ৫৮ রানে প্রথম উইকেট হারায়। ৪০ রানে থামেন জাকির। এরপর ৭০ রানে এসে দ্বিতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। খুররম শেহজাদের বলে ২৪ রানে সাজঘরের পথ ধরতে হয় সাদমানকে। এরপর অধিনায়ক নাজমুল শান্ত ৩৮ রানের ইনিংস খেলে দলকে জয়ের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে নেন। বাকি কাজটুকু দায়িত্ব নিয়ে শেষ করে এসেছেন মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। তাতে ৬ উইকেটের জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
এর আগে, দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। পরে টসে জিতে বোলিং করতে নেমে পাকিস্তানকে ২৭২ রানে থামিয়ে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। ২৬ রানে হারায় ৬ উইকেট। লিটন দাস ও মিরাজ এসে হাল ধরে দলকে টেনে তুলেন। বাংলাদেশের ইনিংস থামে ২৬২ রানে। লিটন-মিরাজের জুটিতেই জয়ের রসদ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। যেই রসদ কাজে লাগিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানকে ১৭২ রানে গুড়িয়ে দিয়ে ১৮৫ রান তাড়া করে পাকিস্তানের মাটিতে ঐতিহাসিক টেস্ট সিরিজ জয় পেয়েছে বাংলাদেশ।
বিদেশের মাটিতে যা বাংলাদেশের তৃতীয় টেস্ট সিরিজ জয়। এর আগে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ২০২১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ জেতে বাংলাদেশ। অন্যদিকে ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেদের মাটিতে টেস্ট সিরিজ হারের পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে লজ্জার মুখে পড়তে হলো পাকিস্তানকে।
সূত্র : যুগান্তর